যেভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে ‘অর্থা’

নজরুল॥ ঢাকা ভিত্তিক একটি প্রিমিয়াম গৃহসজ্জা ব্যান্ডের নাম ‘অর্থা’। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সিইও নিতাই সরকার পার্থ বেডশীটকে ফোকাস করে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ও স্বল্প পুঁজি নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসাটি শুরু করেন। বর্তমানে হোম সজ্জা ব্র্যান্ডের সম্ভাবনাময় অনলাইন শপ হিসেবে এটি গ্রাহকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা আয় করছে।
‘অর্থা’ বর্তমানে একটি স্থায়ী ও ক্রমবর্ধমান ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। তবে বর্তমানের এই অবস্থানে আসার পেছনের গল্পটি মোটেও সহজবোধ্য নয়। কঠোর সংগ্রাম এবং মিস্টার পার্থের দৃঢ়তার কারণেই প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে। নিতাই সরকার পার্থ এখন নতুন প্রজন্মের একজন সফল উদ্দ্যোক্তা।
দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিংমল আজকের ডিল ডটকম এধরনের নতুন উদ্দ্যোক্তাদের উঠে আসার গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করছে। লক্ষ্য একটাই নতুন উদ্দ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা জোগানো। যার ধারাবাহিকতায় আজকের আয়োজন মি. পার্থের ‘অর্থা’ নিয়ে।
Arta 1
মিস্টার নিতাই সরকার পার্থের জন্ম এবং বেড়ে উঠা চাঁদপুর জেলায়। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারী কর্মচারী এবং মা ছিলেন স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই তার ভেতর উদ্দ্যোক্তা হবার মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। ছোট বেলায় গ্রামের মেলায় ছোটখাট দোকান দেবার অভ্যাস ছিল তার। যদিও বাবা মা এগুলো পছন্দ করতেন না কিন্তু তিনি এই কাজগুলো বেশ ইনজয় করতেন।
ব্যবসার প্রতি তার এতোটাই ফেসিনেশন ছিল যে, ছোট বেলায় তার বাড়িতে এক আত্মীয় এক ব্যাগ আপলে নিয়ে এসেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একটি টুল ও টেবিল নিয়ে বসে আপেলগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি ব্যবসা পাগল একজন মানুষ ছিলেন। তিনি মনে করেন, একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই, বিনিয়োাগ অন্য কিছু হতে পারে যেমন, সৃজনশীলতা, প্রচেষ্টা ইত্যাদি।
তিনি নবম শ্রেণি থেকেই ব্যবসায়ী শিক্ষা বিভাগে পড়াশুনা করেছেন। তার পছন্দের সাবজেক্ট ছিল হিসাববিজ্ঞান। স্কুল শেষ করে কুমিল্লা কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ২০০৮ সালে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে মার্কেটিং এর প্রতি তার ঝোঁক তৈরী হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশুনা ও কাজের অনুপ্রেরণা পান বিভাগের শিক্ষক ড. জাকারিয়া রহমানের কাছ থেকে।
২০১২ সালে গ্যাজুয়েশন শেষ করার পর তিনি ফরচুনা গ্রুপে ইন্টার্নশীপ করেন। ইন্টার্নশীপ শেষ করে তিনি প্রায় ৬ মাস বেকার ছিলেন। বেকার দিনগুলি তার কাছে কঠিন হয়ে উঠেছিল। কি করবেন ভেবে না পেয়ে পুরান ঢাকায় তার চাচার ফার্মেসিতে আনপেইড ফার্মেসি স্টাফ হিসেবে কাজ শুর করেন। বিবিএ শেষ করা একটি ছেলে ফার্মেসিতে স্টাফ হিসেবে কাজ করছে এটা অনেকেই মেনে নেবেনা ভেবে নতুন কিছু করার স্কোপ খুঁজছিলেন। তিনি দেখলেন ফার্মেসির পাশেই ছোট একটি অব্যবহৃত জায়গা রয়েছে। অনেক চিন্তার পরে তিনি বাবা মাকে না জানিয়েই সেই ফাঁকা জায়গাটিতে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা শুরু করেন।
মাস পাঁচেক এই ব্যবসা করার পর ফরচুনা গ্রুপের ইকমার্স উইংসে তিনি ফুল টাইম চাকরিতে যোগ দেন। এখান থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন। পোড্রাক্ট ফটোগ্রাফি, পোড্রাক্ট আপলোডিং, ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট সহ পোড্রাক্ট অর্ডারে মত সব ধরনের কাজই করেছেন। এখানকার অভিজ্ঞতা তিনি তার নিজের ব্যবসায় কাজে লাগাতে চান এবং নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। এজন্য ২০১৫ সালে তিনি ফরচুন গ্রুপ থেকে রিজাইন নিয়ে ফেসবুক ভিত্তিক ইকমার্স ব্যবসা শুরু করেন। এই সময়ের মধ্যে অবশ্য তিনি এমবিএ শেষ করেছেন। প্রথম দিকে তিনি বুটিক, জুয়েলারী সহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন।
Artha-2
ব্যবসা শুরু করার কিছুদিন পর তিনি একজন কাস্টমারের কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকার অর্ডার পান। প্রথমে তিনি ভয়ে ছিলেন তার পণ্য আসলেই কাস্টমার নেবে কিনা! তারপর অর্ডার কনফার্ম করার পর তিনি অনেকটা সাহস নিয়ে নিজের টাকা বিনিয়োগ করে পণ্য কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেন। তিনি মনে করেন, থার্ড পার্টি ডেলেভারির চেয়ে নিজেদের পণ্য নিজেরাই ডেলেভারি দেওয়াটা ভাল। এতে কাস্টমারদের আস্থা বাড়ে এবং ব্যবসাটা কাছ থেকে শেখা যায়।
ব্যবসা কিভাবে বাড়ানো যায় অন্যরা কিভাবে করছে এগুলো দেখার জন্য আজকেরডিল ডটকমের মত অনলাইন শপের ওয়েবসাইট তিনি নিয়মিত ফলো করতেন। ২০১৬ সালে ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’ ট্রেনিং পোগ্রামের মাধ্যমে তার ব্যবসার ভিন্ন মোড় নেয়। সেখান থেকে তিনি মি. দেবাশীষ ফনির ডিরেক্শন অনুযায়ী একটি মাত্র পন্য নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি অনেক পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুর করলেও গ্রাহকদের চাহিদা ও মেন্টরদের উপদেশ অনুযায়ী বেডশীটকে প্রাধান্য দিয়ে গৃহসজ্জা পন্য বিক্রি শুরু করেন।
২০১৬ সালে ইদুল ফিতরের সময় বেশ আর্থিক সংকটে পড়েন তিনি। তখনি প্রথমবারে মত তিনি তার বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা চান। যাইহোক পরবর্তীতে সংকট কাটিয়ে প্রথম বারের মত ঈদকে ঘিরেই তিনি প্রায় ৬.৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন।
‘অর্থা’ তাদের নিজেদের পণ্য নিজেরাই ডিজাইন করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্য অনলাইন ছাড়াও ৪টি খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে। বর্তমানে এই ব্যবসার মাধ্যমে তিনি প্রতিমাসে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা আয় করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দৃঢ়তা এবং ধৈর্য্যের কারনেই তিনি ব্যবসা দাড় করাতে পেরেছে। বর্তমানে তার ব্যবসা ব্যপক প্রসার লাভ করেছে।
মি. পার্থের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে তার ব্যবসার একটি ভাল অবস্থান তৈরী করা। বর্তমানে তার একটি মেশিন রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ১টি থেকে ২১টি মেশিনে উন্নত করে একটি ছোট কারখানা স্থাপন করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
নিতাই সরকার পার্থের পরামর্শঃ
“অনেক মানুষ আবেগের বশে অনলাইন বিজনেস শুর করে। ব্যবসা শুরু করার আগে তারা কোন পরিকল্পনা করে না। কিছু মানুষ মনে করেন অনলাইন ব্যবসা লাভজনক এবং অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা খুব সহজ। এটা তাদের বোঝার ভুল। অনলাইন ব্যবসায় অবিরাম চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমি মনে করি, একটি ডিজিটাল ব্যবসা শুরু করার আগে এটি সম্পর্কে সঠিক ভাবে বুঝে শুরু করা উচিৎ। সঠিকভাবে গবেষণা এবং বাজার বিশ্লেষণ করার পরে এই সেক্টরে কাজ শুরু করা উচিৎ। অনলাইন বিজনেস শুরু করার পূর্বে আপনি কোন ইকমার্স কোম্পানিতে কাজ করে সমস্যা, বিজনেস প্রক্রিয়া এবং পলিসি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published.