রাজনীতিতে সাপেরে এবং বাঘেরে দুধ দেয়া এখন দলে বিশৃংখলার কারন

চোরকে বলে চুরি করো আর গৃহস্তকে বলে সজাগ থাকো এই নিতিই যেন এখন রাজনৈতিক নেতাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের চর্চা হচ্ছে। এই দুমুখো নীতির কারণে এখন দলে বিভাজন এবং বিশৃংখলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় ঐক্যে ফাটল ধরে দল দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই অসম আচরণ বা দ্বৈতাচারন ও দ্বীমুখী নীতির কারণে দল ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে এবং যায়। কিন্তু ঐসকল বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ নেতাদের কখনো দেখিনি বা শুনিনি এমনকি বুঝিওনি যে, তাদের বোধদয় হয়েছে বা তারা শিক্ষা নিয়েছেন। এই হরহামেশাই চলছে গোপন খেলা; তা কিন্তু দলের জন্য অমঙ্গলই বয়ে আনবে… মঙ্গল নয়। আমরা দলের বাইরে থেকে মতামত প্রকাশ করি, উপদেশ ও পরামর্শ উপস্থাপন করি বিভিন্নভাবে কিন্তু কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। কে শুনে এই কার্যকরী কাহিনী। তবে শুনার একজন আছেন এবং তিনি শুনছেন। তাই তিনি তাঁর হাতে আসল এবং প্রকৃত কাজ করার দায়িত্বটুকু রেখে দিয়েছেন।
দলীয় শৃংখলা এবং চেইন অব কমান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এই চর্চার ব্যাঘাত ঘটলে দলীয় বিপর্যয় অবিসম্ভাবী। ছোট বড় সবাই আমরা দলের প্রয়োজনে কাজ করব। দলের মধ্যেদিয়ে আমরা একটি পরিবার। পরিবারে যেমন সবার সুযোগ থাকে কিছু না কিছু করার এবং বলার তেমনি দলেও রয়েছে ঐ সুযোগ। বয়স এবং সামাজিক অবস্থান ও ধর্মীয় এমনকি অর্থনৈতিক মানদন্ডে কাউকে মূল্যায়ন না করে বরং দলীয় পদের আলোকে মূল্যায়ন করলে মঙ্গল থেকে মঙ্গলতর হবে আগামীর মসৃন পথচলা। কিন্তু এই চর্চার বহি:প্রকাশ বা অভাব প্রায়শই অনুভত করি এবং অনুভুত হয়। আসুননা আমরা দলের প্রয়োজনে দলীয় শৃংখলার চর্চা এবং চেইন অব কমান্ড মেনে অগ্রসর হয়।
দলের কাউন্সিল একটি গুরুত্বপুর্ণ চর্চা গনতন্ত্রের জন্য এমনকি দলীয় পদের জন্য। স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার আলোকে দলীয় পদ পাওয়ার মাধ্যমে গনতন্ত্রের ধারাবাহিক বিকাশ লাভ করে দেশ এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে মাঝে এর ব্যত্যয় ঘটে যখন আমরা বলি তুমি দাঁড়াও; আমি তোমার পক্ষে আছি। আসলে তুমি দাঁড়াও কিন্তু সবাইকে বলা হচ্ছে। যেমন চোরকে বলে চুরি করো এবং গৃহস্তকে বলে সজাগ থাক। এইযে ভাই, তা কিন্তু গনতন্ত্র এবং দলীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করছে। মনোমালিন্য ও কোন্দলে জর্জরিত হচ্ছে দলের আগামীর পথচলা। এই অবস্থার পরিবর্তন আশু কাম্য।
দলীয় হাই কমান্ড থেকে বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিভিন্ন জনকে দলীয় মনোনয়নের আশ্বাস দিয়ে মাঠে নামান। আসলে এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত এবং এহেন সিদ্ধান্তের কারণে দলে বিবেদ এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়ে নিশ্চিত বিজয় বেহাত হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত একই সুত্রে কথা বলা এবং দলীয় ঐক্যের মজবুত বৃত্তির জন্য সবাইকে একসঙ্গে দলের জন্য কাজ করতে বলা। বর্তমান এমপি বা মন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে। সবাই মিলে একটি পরিবার হয়ে জনতার সামনে গিয়ে দলের জন্য ভোট চাইতে। কোন নেতা বা এমপি ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গিয়ে নয়। তাহলে হয়ত আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন চর্চায় সকলের সহযোগীতা এবং সম্মানীত অবস্থান বিরাজমান থাকবে। বিভিন্নজনকে বিভিন্নভাবে উস্কে দিয়ে দলীয় বিভাজন সৃষ্টি আসলে দলের অমঙ্গলই বয়ে আনে।
বর্তমানদের দুর্নাম এবং নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত এসব বলার কোন প্রয়োজন নেই বরং দল যেভাবে যখন যাকে মনোনয়ন দিবে সেইভাবেই কাজ করে গেলে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সফল হবে। একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখযোগ্য; মরহুম আলহাজ্জ এ, বি সিদ্দিক সাহেব নৌকা প্রতিকে নমিনেশন নিয়ে এলাকায় গিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েক দিন পর মরহুম এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব নমিনেশন চেয়ে নৌকা প্রতিকে নমিনেশন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং সেই নির্বাচনে এ, বি ছিদ্দিক সাহেব সহযোগীতা করে দলীয় ঐক্যের স্বাক্ষর রেখেছেন।  পরবর্তীতে আবারো তিনি মনোনয়ন চেয়ে সবুজ সংকেত নিয়ে মাঠে নামলেন কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর এডভোকেট শাহ আলম দলের টিকিট নিয়ে মাঠে নামেন তখনও তিনি তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে জয়ী করিয়ে দলীয় আনুগত্য ও ঐক্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
কিন্তু এখন কি দেখতে পাই যিনি মনোনয়ন পাননি তিনি বিরোধী অবস্থানে থাকেন বা গোপনে বিরোধীতা করে দলীয় পরাজয় ডেকে আনেন। কেন এমন হয় জানেন কারন আমাদের দলীয় হাই কমান্ডের নেতাদের অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়িতে। কারণ তারা বর্তমানের প্রতি অস্থা বা সুবিচার করতে পারেন নি। অথবা প্রত্যেকেই নিজ নিজ পছন্দের ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে মরণপণ করে কাজ চালান। কিন্তু কোন সময় কাজ হয় আবার কোন সময় চুড়ান্ত কাজ হয়নি। তবে দলীয় সভাপতির দিকনির্দেশনার বাইরে গিয়ে যে গোপন শলাপরামর্শ চলে তার বিরুপ ফলের মহড়া থেকে বেড় হওয়ার এখনই সময় নতুবা মহা বিপদ সংকেত অপেক্ষা করছে আমাদের আগামীর জন্য।
এখনও সময় আছে একই পরিবারের সদস্য হয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে ঘুরাফেরা না করে পারিবারিক শক্তি ও বন্ধুন অক্ষুন্ন রেখে আগামীর তরে এগিয়ে যান। বিজয় সুনিশ্চিত আর তা সকলেরই জন্য। কেউ খাবে কেউ খাবেনা দল তা বিশ্বাস করে না। সকলেই মিলেমিশে একসঙ্গে খাব এবং বেঁচে থাকব ও সকলকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিব; প্রয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করে দিব; এই মহান ব্রত নিয়ে পথ চলুন। আল্লাহর আশির্বাদ আপনার জন্য সুনিশ্চিত এবং তা অফুরন্ত। অনেক লিখলাম যা লিখা আমার নয় কিন্তু বিবেকের তাড়নায় ও দলের প্রতি বিশ্বস্ত ভালবাসার প্রকাশিত অভিপ্রায় থেকেই উৎসারিত। সবাই ভাল থাকুন এবং দলের মঙ্গলের লক্ষ্যে এগিয়ে যান। হানা-হানি, বিবাদ এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটুক। এই কামনায় যেন সর্বময় তাড়িয়ে বেড়ায় আমাদের সকলকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.