২০০১ নির্বাচন জয়লাভ করতে ‘র’-কে তারেকের মুচলেকার তদন্ত শুরু

ফারুক ভুইয়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদক॥ ২০০১ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)। সম্প্রতি ভারতের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলকে (এনএসসি) এই তথ্য দিয়েছে ‘র’-এর বর্তমান সেক্রেটারি বা প্রধান নির্বাহী অনিল দশমান।

tareq with raw agreement
অনিল দশমান ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের বৈঠকে তথ্য উপাত্ত দিয়ে জানান যে, ২০০১ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনে বিএনপি জোটকে জেতানোর জন্য ‘র’ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনি এও জানান, ‘র’-এর তৎকালীন প্রধান বিক্রম সুদ বিএনপির চেয়ারপার্সনের ছেলের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। বিক্রম সুদকে তিনটি শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করেন তারেক। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে নির্বাচনে সহায়তার এবং ক্ষমতায় বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় ‘র’।
বিষয়টি সে সময় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে জানানো হলেও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে উত্থাপিত হয়নি। ‘র’ এর বর্তমান প্রধান ২০০১ সালের ঘটনাকে দেশের স্বার্থ বিরোধী এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখার বিষয় বলে জানান। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অমিত দোভাল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, বিএনপিকে ‘র’ এর প্রধান যে তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন সেগুলো হলো:
১. ভারতের কাছে নামমাত্র মূল্যে গ্যাস বিক্রি।
২. চটগ্রাম গভীর সমুদ্র বন্দর ভারতকে প্রদান ও ট্রানজিট সুবিধা।
৩. সিলেট সীমান্তে সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধ।
বিক্রম সুদ ২০০০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ‘র’-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০০১ সালে তিনদফা তিনি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২০০১ এর ১৮ এপ্রিল এবং ২১ এপ্রিল তিনি দিল্লিতে তারেক জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে তারেক আসন্ন নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতা চান। প্রথম দিন তাঁদের বৈঠক হয় ৭০ মিনিট। ওই বৈঠকের পর বিক্রম সুদ ‘র’ এর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিক্রম সুদ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গেও কথা বলেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাকে সবুজ সংকেত দেন। এরপর ২১ এপ্রিল বিক্রম সুদ তারেক জিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে বিক্রম সুদ সহযোগিতার শর্ত তিনটি বললে তারেক জিয়া তাঁকে বলেন, ‘আমি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতেও রাজি আছি। যে কোনো শর্তে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই।’
বিক্রম সুদ তাঁকে একটি লিখিত টাইপ করা কাগজ হাতে দিয়ে বলেন, ‘আপনি আপনার মায়ের সঙ্গে কথা বলুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন।’ কিন্তু তারেক জিয়া জানান, ‘আমি একাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমার কথাই শেষ কথা।’
কাগজে তিনটি শর্ত ছিল। তারেক ওই কাগজে স্বাক্ষরও করেন। যদিও এ ধরনের বৈঠকে সবই হয় মুখের কথা আর বিশ্বাসে, কিন্তু বিক্রম ওই সই করা কাগজটি তাঁর পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন। পরে এ সংক্রান্ত গোপনীয় ব্যক্তিগত নথিতে তিনি কাগজটা রেখে দেন। ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ বিক্রম সুদ ‘র’ এর প্রধান থেকে সরে যান।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ষ্ট্র্যাটিজিক পলিসি গ্রুপের বৈঠকে তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ২০০১ এ বাংলাদেশ নির্বাচন প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। ন্যাশনাল স্ট্যাটিজিক গ্রুপ হলো জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের নিউক্লিয়াস।
নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ছাড়াও ক্যাবিনেট সচিব, সেনা, নৌ, বিমান প্রধান, রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারকরা ওই কমিটির সদস্য। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘র’ কে ২০০১ এর নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কাউন্সিলে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘র’ এ সংক্রান্ত সকল তথ্য উপাত্ত জমা দিলে কাউন্সিল তা নিরীক্ষার জন্য জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটি বা জেআইসিতে পাঠায়।
গত আগস্টে জেআইসি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। এখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা গোপনীয় ওই প্রতিবেদন কাউন্সিলে উপস্থাপন করেছেন। রিপোর্টের ভিত্তিতে, কাউন্সিল ‘র’ এর প্রধানকে কাউন্সিলে ডাকা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত এখনো চলছে।
মোট কথা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিই না করে থাকেন এই নেতা। যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় আসীন হয়ে তিনি করেছিলেন দুর্ভাগা এই জাতির জন্য। সবই জাতির বিবেকের কাছে স্পষ্ট। ক্ষমতাই কি সব? জাতির বা দেশের সেবা করতে কি ক্ষমতার প্রয়োজন হয়? না এই সবের কোনটিরই দরকার নেই বলে মনে করি। কারণ যারা ক্ষমতায় যায় তারা নিজের প্রয়োজনে যায়। তারা জাতীর বা জনতার কেনা গোলাম। ৫ বছর গোলামী বা সেবা করার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েই যায়। কিন্ত জনতা সেই ওয়াদা বা দায়বদ্ধতার সেবাটুকু পায়নি। সেটাই হলো দু:খ। তবে যার যার অবস্থান থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ চালিয়ে গেলে জাতীর সেবা হয়। যা নি:স্বার্থ এবং প্রকৃত। এই সেবাটুকুই আমরা করতে চাই এবং করে যাব। ক্ষমতার সিংহাসন নয় এমনকি নাকে খৎদিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে কলঙ্কের বোঝা বাড়াতে নয়। কলঙ্কের তিলক নিয়ে আর কতকাল চলবেন এবং হাটবেন? আমরা যারা বোকা আর কতকাল তাদের হাতের পুতুল হয়ে নিজেদের যা অবশিষ্ট রয়েছে তার সবটুকুই বিলিয়ে দিব। ভাবার সময় এসেছে, ভাবুন এবং নিজের অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.