টার্গেট সিইসি, অতপর জাল কতদূর বিস্তৃত…

টিআইএন॥ রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০১৩। বিশেষ জজ আদালত– ৩। বিচারক মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন এজলাসে বসলেন। মানি লন্ডারিং মামলার রায় ঘোষণা করবেন তিনি। আসামি দুজন তারেক জিয়া এবং গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এর মধ্যে তারেক জিয়া পলাতক। মামুন গ্রেপ্তার। জজ মোতাহার মামুনকে সাত বছরের জেল দিলেন আর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করলেন। রায় দিয়েই রুম থেকে বেরুলেন। তাঁর খাস কামরায় বসলেন মাত্র ১০ মিনিট। এরপর উঠলেন গাড়িতে। সোজা চলে গেলেন এয়ারপোর্টে। আগে থেকেই তাঁর বহিঃগমন অনুমোদন নেওয়া ছিল। বিকেলেই জেট এয়ারলাইন্সের বিমানে চাপলেন। মোতাহার এখন লন্ডনে। স্বপরিবারে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন।

terget cec (tareq)
তারেক জিয়া পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছিল তাঁকে খালাস করার জন্য। গোয়েন্দা নজরদারি, বিচার বিভাগের নিবিড় পর্যবেক্ষণ এড়িয়ে মোতাহার তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মোতাহার ছিলেন ছাত্রদলের কর্মী। অথচ দুই মন্ত্রী তাঁকে ঢাকায় বিশেষ জজ আদালতে বদলির জন্য ডিও দিয়েছিলেন। ওই ডিওতে তাঁকে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে বলা হয়েছিল। ‘সরকারের ভেতরের লোককে কিনে ফেলার’ এই নীতিটি তারেক জিয়া এখন নতুন করে শুরু করেছেন। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচার বিভাগের অন্তত ৫০ জনকে টার্গেট করা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে তাঁদের কিনে ফেলে সরকারের ভেতরে আগুন লাগানোই হলো বিএনপির সর্বশেষ নীল নকশা।
বিএনপির এই ব্লু- প্রিন্ট অবশ্য নতুন নয়, ২০০১ সালে বিএনপি এই নীল নকশার সফল বাস্তবায়ন করেছিল। বিচারপতি লতিফুর রহমান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু সাইদসহ প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বেঁধে ফেলেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তারেকের কর্মচারীতে পরিণত হয়েছিল। ২০০১ সালের জুলাই মাসে লতিফুর রহমান শপথ নিয়ে বাথরুমে যাবার আগেই ১৩ সচিব বদলি করেন।
আবার প্রধান বিচারপতিকেও একই জালে বেঁধেছিল বিএনপি। জানা গেছে বিচারপতি সিনহার শেষ গন্তব্য লন্ডন। সেখানে তাঁর জন্য বাড়িও প্রস্তুত। তারেকের পরবর্তী টার্গেট সিইসি? তারপর? নিশ্চয়ই সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারধারী। তারেকের কথা পরিষ্কার। খায় না? কত খায় না? একটা পর্যায়ে টাকার কাছে একজন বশ্যতা স্বীকার করবেই, এই নীতিতেই বিশ্বাসী এশিয়ার নতুন ডন।
প্রশাসনে আওয়ামী লীগ সেজে ঘাপটি মেরে থাকে তারেকের লোকজন। এরা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে। গোয়েন্দা তো দূরের কথা, সরকারের নীতি নির্ধারকরাই তো চিন্তা করতে পারেন না, এর সঙ্গে তারেকের যোগাযোগ থাকতে পারে।
লতিফুর রহমানের সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন, মান্নান ভূঁইঞা আদর করে তাঁকে তাঁর নির্বাচনী এলাকার জেলা প্রশাসক বানিয়েছিলেন- এখন সচিব, মস্ত আওয়ামী লীগার। নির্বাচন করবেন বলে প্রকাশ্যে বলে বেড়ান।
তিনি কি করেন, কে খবর রাখবে? তিনি একা নন, এরকম অনেকেই আছেন সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গুরুত্বপূর্ণ পদে। কে কখন চোখ উল্টাবে আপনি তো জানবেনই না। শেখ হাসিনা কি তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যেই বসবাস করছেন?
বিচারপতি সিনহার পর কে এম নুরুল হুদার ইতিহাস বিকৃতির মন্তব্যে বিস্মিত দেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.