পরিষ্কারভাবে বলতে চাই কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়

মানিক॥ সরকারের সাথে বিচারপতি এস কে সিনহার টানাপোড়ন চলছিলো বেশ কিছুদিন যাবত। সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদেরকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।  সুপ্রিম কোর্টের দেয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে সেনিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন সেগুলো সম্পর্কে প্রথমে অনুসন্ধান হতে হবে।  তাতে সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা হবে।

law minister anisul
তিনি এক পর্যায়ে বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” সংবাদ সম্মেলনে বেশ  কয়েকবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় যদি তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তথ্য থাকে যা রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত জানেন তাহলে তাঁকে দেশের বাইরে কেন যেতে দেয়া হল।
এই প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “প্রধান বিচারপতির আসন একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁকে অভিযুক্ত করতে হলে বা ব্যবস্থা নিতে হলে আইনি-ভাবেই নিতে হবে। খামখেয়ালিভাবে বা তাড়াহুড়া করে একজন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা আমরা মনে করি সমীচীন নয়”। তিনি চলে যাওয়ার পরে এসব অভিযোগ ওঠায় প্রধান বিচারপতি বিষয়টি সম্পর্কে নিজের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পাননি, এমন একটি বক্তব্য ওঠার পর আইনমন্ত্রী বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যে বিবৃতি দিয়েছে সেটি তো আমার নিয়ন্ত্রণে নয়”।
বাংলাদেশে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে ঘিরে প্রকাশ্যেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সরকারের সাথে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার টানাপোড়ন চলেছে। অব্যাহত টানাপেড়নের মাঝেই তিনি এক মাসের ছুটিতে যান। কিন্তু যাওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের হাতে দিয়ে যান লিখিত কিছু বক্তব্য। যাতে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং তাতে সম্ভাব্য সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে সরাসরি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তারপর থেকে নতুন বিতর্ক শুরু হয়। তার চব্বিশ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সম্বলিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। এর পরদিন প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে নিজের মতামত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। গতকালই সুপ্রিম কোর্টের ঐ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে ১১ টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত কিছু তথ্য রয়েছে।
যার দালিলিক তথ্যাদি তিনি আপিল বিভাগের অন্য পাঁচজন বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এসব অভিযোগ জানতে পারার পর আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে ঐ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন এই ১১ অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা হয়ত তাঁর সাথে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের একই বেঞ্চে বসবেন না। প্রধান বিচারপতি আর কাজে ফিরবেন কিনা সেনিয়েও বাংলাদেশে কথাবার্তা উঠেছে। সেনিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “বিচারপতিরা তার সাথে না বসলে, তিনি কি করে এখানে এসে বসবেন! কারণ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে একক বেঞ্চের কোন নিয়ম আছে বলে আমার জানা নেই।”
দায়িত্বে থাকা কোন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টে নিজের বিবৃতি দেয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.