‘বাংলাদেশ একটু চীনে ঝুঁকেছে, আমরাও একটু বিএনপিতে ঝুঁকে দেখালাম’

টিআইএন॥ ২৪ ঘণ্টার ঝটিকা সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কি বার্তা দিলেন বাংলাদেশকে? সুষমার চলে যাবার পর এটাই এখন বিশ্লেষণের বিষয়। গত এক দশক ধরে ভারতই বাংলাদেশে শেষ কথা। একটা সময় ছিল যখন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতো। বাংলাদেশ যতদিন পর্যন্ত বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল, ততদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কথাও শুনতে হতো বাংলাদেশের।

pm susoma illastration chean
কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যত এগিয়েছে তত বাংলাদেশের ব্যাপারে ইউরোপ আমেরিকার হস্তক্ষেপ কমেছে। ভূ-রাজনীতির কৌশল হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি জাপান এখন ভারতের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ভার। ভারত যা বলে সেটাই মেনে নেয় অন্য রাষ্ট্রগুলো।
বিশেষ করে ২০১৪ নির্বাচনে ভারত একাই সমর্থন দিয়ে তার শক্তির প্রমাণ দেয়। তাই নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে সুষমার সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলের আগ্রহ ছিল অনেক। বিএনপির একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন, সুষমার জন্যই বেগম জিয়া লন্ডন থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন। সুষমা স্বরাজের ২৪ ঘণ্টার বৈঠকে সবচেয়ে অনালোচিত বৈঠকটি ছিল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। রাত সাড়ে আটটায় তিনি সাক্ষাৎ করেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে। এর মাধ্যমে সুষমা বর্তমান সংসদকে আস্থায় আনলেন। এই সংসদ যে ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য সে বার্তাটা দিয়েছেন।
মিডিয়ার সবচেয়ে লোভনীয় বিষয় ছিল সুষমা-খালেদা বৈঠক। ৫০ মিনিটের এই বৈঠকে বিএনপি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। সুষমা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চান। সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়েও খোঁজ-খবর নেন। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে সুষমার আগ্রহ একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সেটি হলো ভারত নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। যে নির্বাচন হবে সংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই। ‘সহায়ক সরকার’ বিষয়টি সুষমার এজেন্ডায় ঠাঁই পায়নি। এমনকি ভারতীয় দূতাবাসে নিজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায়, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রিক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রস্তাবনা নিয়েই তিনি কথা বলেছেন।
বেগম জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে সুষমা স্বরাজ ‘তারেক জিয়া’ যে ভারতের মাথাব্যাথার কারণ তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। সাথে এটাও স্পষ্ট করেছেন, বিএনপি কার সঙ্গে চলে, কোথায় মিটিং করে- সব খবরই ভারতের কাছে আছে।
সুষমার সবচেয়ে ইস্যুহীন বৈঠক ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সুষমার পছন্দের নারী নেতাদের মধ্যে শেখ হাসিনা সেরা। এটা সুষমা তাঁর ‘ওমেন ইন পলিটিক্স’ লেখায় বহু আগেই লিখেছেন। প্রাধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সুষমা তাঁর (শেখ হাসিনার) স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। দুজন হাসিঠাট্টাও করেছেন। এখানে রোহিঙ্গা নিয়েও কথা হয়েছে। কথা হয়নি শুধু নির্বাচন নিয়ে। এর অর্থ দাঁড়াল ‘নির্বাচন’কে এখনো ভারত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখছে না। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ প্রসঙ্গই আসেনি।
তাই যদি হবে, তাহলে সুষমা স্বরাজ ঢাকঢোল পিটিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপ করলেন কেন? উত্তর দিলেন, ভারতেরই কূটনীতিক। ‘বাংলাদেশ তো একটু চীনে ঝুঁকেছে তাই আমরাও একটু বিএনপিতে ঝুঁকে দেখালাম, কেমন লাগে।’ আওয়ামী লীগকে ভয় দেখাতেই কী তাহলে জোর করে বেগম জিয়ার সঙ্গে এই বৈঠকের আয়োজন? আওয়ামী লীগকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, তোমরা চীনপন্থী হলে আমাদেরও বিকল্প প্রস্তুত। সুষমার ঝটিকা সফরের সারমর্ম এটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.