পদ্মাসেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে ইউনুস-হিলারীর হাত ছিল…সজীব ওয়াজেদ

ফাহাদ বিন হাফিজ॥ পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ‘মিথ্যা অভিযোগ’ তুলে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তার পেছনে মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের হাত ছিল বলে আবারও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গত সোমবার ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের একদম উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে মহামান্য ইউনূস, সে-ই হিলারি ক্লিনটনকে ফোন করেছিল।

padma seto durniti jobab
“হিলারি ক্লিনটন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে ফোন দিয়ে বলেছিল-বাংলাদেশকে কিছু কর, শাস্তি দাও,ওরা আমার কথা শুনছে না।” এর ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জয়কে ‘ট্যাক্স অডিটের’ ভয় দেখিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নে ২০১১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ব ব্যাংক। ওই বছরই বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও হেরে যান তিনি।
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ নিয়ে ইউনূসের ‘নানা তৎপরতার’ মধ্যে ২০১২ সালের জুনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের এক পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ করে দিয়ে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে হাত দেয় বাংলাদেশ সরকার।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ইউনূসের নির্ধারিত বয়সের চেয়ে বেশি সময় থাকা বৈধ ছিল কি না এবং আর্থিক অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ২০১২ সালের মে মাসে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ সরকার।
ওই তদন্ত ঠেকাতেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে গত এপ্রিলে ওয়াশিংটনের ডেইলি কলারকে বলেছিলেন জয়।
ডেইলি কলারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একাধিকবার তাকে চাপ দেন, যাতে তিনি ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার বিষয়ে তার মা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজি করান।
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের যোগসাজশকে দায়ী করে শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। চলতি বছরের শুরুতে কানাডার একটি আদালতের রায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ার কথা প্রকাশের পর নতুন করে আলোচনায় আসেন ইউনূস। ওই রায় প্রকাশের পর তার শাস্তির দাবিতে সরব হন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সাংসদরা। ‘দুর্নীতির মিথ্যা গল্প’ বানানোর নেপথ্যে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে হাই কোর্ট একটি রুলও জারি করে।
তবে সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারও কাছে কোনো বিবৃতি দেননি।
গত সোমবার সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সেমিনারে জয় বলেন, “আমাদের দেশ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস কখনও একটিও কি ভাল কথা বলেছে? সুশীল সমাজকে একবারও বাংলাদেশের প্রশংসা করতে শুনেছেন? খালি সমালোচনা! “দেশপ্রেম তো দূরের কথা, তারা দেশটাকে ধ্বংস করতে ব্যস্ত। বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে নামাতে ব্যস্ত।”
‘রাজনীতির সত্য-মিথ্যা: পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এই সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “বাংলাদশের ওপর বিশ্ব ব্যাংক সভাপতির বিরূপ মনোভাব ছিল, নয়ত এমন কাজ করতে পারতেন না। নিজস্ব সামর্থ্যে তৈরি এ সেতু মানুষের আত্ম-মর্যাদার দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে, এটি বিশ্ব ব্যাংক প্রধানের গালে বাংলাদেশের চপেটাঘাত।”
যারা যাচাই না করেই বিশ্ব ব্যাংকের ওই অভিযোগকে ‘প্রমাণিত সত্য’ ভেবে নিয়েছিলেন, তাদের সমালোচনা করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “বিদেশিরা যেটা বলে সেটাই সত্য, আর আমরা যেটা বলি সেটা মিথ্যা- এমন কেন?”
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত সেমিনারে বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.