সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণ প্রজন্মের ইতিবাচক সফল নেতা

ফাহাদ বিন হাফিজ॥ ২১ অক্টোবর (২০১৭) প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ভবিষ্যতের নেতা তরুণরাই। উল্লেখ্য, ঢাকার সাভারে শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তারুণ্যনির্ভর ৩০টি সংগঠনের হাতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেয়ার সময় তাদের এ অভিধা দেন তিনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে নিজেদের উদ্যোগে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসা তরুণ-তরুণীদের বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতা অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তিনি নিজে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। আর সেই কাজে তরুণ প্রজন্ম তাঁর অনিবার্য লক্ষ্য। এর আগে তিনি দেশের ভেতর ও বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা, তরুণ জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক অর্জনের গল্প শুনিয়েছেন বিশ্বের মানুষকে। তাঁর মতে, ‘আমাদের দেশের তরুণরা এখন দেশের জন্য কাজ করতে যেভাবে এগিয়ে এসেছে, আগে সেটা দেখা যেত না। দেশের সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব কি না, দেশকে এগিয়ে নিতে পারব কি না, সেই বিশ্বাস আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কারণ স্বাধীনতার চেতনা আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’ কিন্তু ‘এখন আমাদের শাইনিং স্টার’ বলা হচ্ছে। ‘নেক্সট ইলেভেন’-অর্থনীতির দেশের একটি আমরা। সজীব ওয়াজেদ জয় সেদিন যে কথা বলেছেন, তা এক তরুণ নেতার আদর্শ ও বিশ্বাসের কথা। তিনি নিজে নতুন প্রজন্মের নেতা, তাই যুবসমাজের কাছে তিনি আলোকবর্তিকা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন।

young leader joy
২৩ অক্টোবর (২০১৭) রাজধানীর একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘রাজনীতিতে সত্য-মিথ্যা : পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক অপর এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘সৎ সাহস ও নিজের আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোন কঠিন কাজ করা যায়। আমরা কারও চেয়ে কম নই। বিদেশের সঙ্গে আমরা সমানে সমান। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে বিদেশী সার্টিফিকেট প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ এ তরুণ নেতৃত্বের কাছে পদ্মা সেতুর ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে সততা এবং আদর্শের কোন বিকল্প নেই। সৎ না থাকলে মানুষের ভালবাসা পাওয়া যায় না। আর মানুষের ভালবাসা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যায় না। তিনি বিশ্বাস করেন, নিজের দেশকে টেনে উঠাতে হবে। দেশপ্রেম দেখাতে হবে। বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে তোলার মধ্যেই দেশপ্রেম নিহিত।
॥ ২॥ দুই॥
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান তা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় এ তৃতীয় প্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সব আকর্ষণ এখন কেন্দ্রীভূত। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। উপমহাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য একটি ব্যাপক বিস্তারী প্রসঙ্গ। ভারতের দিকে তাকালে বর্তমান রাজনীতির পারিবারিক ধারা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। জওহরলাল নেহেরু গান্ধীর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সময় দেশাইয়ের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও ইন্দিরা গান্ধীই হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জুলফিকার আলী ভুট্টো, তাঁর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ও ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা যেমন সত্য তেমনি শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় লক্ষণীয়। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক, কামাল হোসেন প্রমুখ বড় নেতারা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকেই জনগণের সামনে দাঁড় করান।
খালেদা জিয়া যেভাবে তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের পদে সমাসীন করেছেন জয়ের জীবনে তেমনটি ঘটেনি। বরং জয় রাজনীতিতে নামতে পারেন এমন সম্ভাবনা ধরে নিয়ে ২০০৪ সালে ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক তারেক জিয়াকে বিএনপি লুফে নিয়েছিল। জয় বাংলাদেশের মৃত্তিকার সন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসাটা আকস্মিক হলেও দলকে সংগঠিত করা, দলের কোন্দল মেটানো, দলকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রধান কাজ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। মহাজোট সরকারের সময় পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন নেতৃত্বের দরকার ছিল। তাই তাঁর মতো কোন যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে আনা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা জয় ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসনে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতি সচেতন। ২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে সেনা সমর্থিত ও নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো উদ্যম। রয়েছে পরিশ্রমী ও তারুণ্যের প্রাণময়তা। এজন্য আমেরিকা থেকে তাঁর ফিরে আসা, রাজনীতিতে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শুভসূচনা। দেশের মধ্যে যারা একসময় দুর্নীতি ও নাশকতার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের মসনদ কেঁপে উঠেছে তাঁর বক্তৃতায়। তিনি মূলত বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষকে আশাবাদী করে জাগিয়ে তোলার জন্য ভাষণ দেন। একসময় তাঁর মতো বয়সে বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে জাগিয়েছিলেন; জয়ও তেমনি নির্বাচনে পরাজিত এবং ভিন্ন কারণে আপাত বিশৃঙ্খল আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলতে চান। তাঁর ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হচ্ছে। তিনি আসলেন এবং ভাষণ দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করলেন। বিএনপি-জামায়াতের গাত্রদাহের কারণ এজন্য যে, জয় উচ্চশিক্ষিত এবং যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার পুরোভাগে তিনি আছেন। শেখ হাসিনা যেমন নির্লোভী, মানুষকে ভালবাসেন নিজের অন্তর থেকে, জয়কেও তেমনিভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিরুদ্ধ মানুষের মন জয় করতে হবে। এজন্য ছাত্রলীগ-যুবলীগকে কাজে লাগাতে হবে। সাধারণ মানুষকে শেখ হাসিনা সরকারের কর্মসূচী, সাফল্য বর্ণনা করতে হবে। অনেকে ভাবতে পারেন তিনি আমেরিকান সিটিজেন। এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে, শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন। যেহেতু জয়ের মা নিজে এই মাটি, মানুষের নিকটজন সেহেতু তিনিও তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন।
॥ তিন ॥ ৩ ॥
সজীব ওয়াজেদ জয় এর আগে বলেছিলেন, উন্নয়নের অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করতে হলে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, নতুন ও আধুনিক একটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের জন্য এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ছিল। এ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছিলেন, আগামী তিন দিন খেয়াল রাখুন। তিন দিন পরেই চমক দেখতে পাবেন। আমরা বিরোধী দলের অপপ্রচার মোকাবেলা ও সরকারের সফলতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে ভিন্ন রকম কৌশল নিয়েছি। নেতা-কর্মীদের শুক্রবার মসজিদে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, আমি তো সারাদেশে সফর করে অপপ্রচারের জবাব দিতে পারব না। তাই বিরোধী দলের অপপ্রচারের জবাব দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি শুক্রবার মসজিদে যেতে হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতোমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদের তরুণদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যাশায় উজ্জীবিত করেছে। একাধিক বেসরকারী টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি নানা প্রসঙ্গে গঠনমূলক রাজনৈতিক কথা বলেছেন। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘লেটস টক’ শিরোনাম অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অর্ধেক এগিয়েছে। আবার রংপুরের পীরগঞ্জে এক জনসমাবেশে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের মানুষের প্রতি যে আন্তরিক আকুতি জানিয়েছেন তা সকলকে আলোড়িত করেছে। এতদিন তাঁকে তৃণমূল জনগণ সরাসরি রাজনৈতিক মঞ্চে দেখেনি, কেবল তাঁর কথা শুনে এসেছে। তাঁকে দেখা গেল রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে। মানুষের দুঃখকে অনুভব করতে। মাতাসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পিতা-মাতা ড. ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক হৃদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। এর আগে তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ঢাকায় যুবলীগের এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন অনেকে ভয়ে আছে, আমাদের সরকার কি আবার ক্ষমতায় আসবে? আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। সুতরাং আগামী ছয় মাস আমাদের মানুষের কাছে গিয়ে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদেরও প্রচারণায় নামতে হবে। এখন থেকে আগামী ছয় মাস বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে হবে। মানুষ যদি আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কথা বলে, তাহলে তখন বলবেন, আসুন আমরা বিএনপির আমলের দুর্নীতির সঙ্গে এ আমলের দুর্নীতির তুলনা করি। তাহলেই মানুষ সহজে বুঝবে। কারণ তাদের কোন সফলতা নেই। তাদের সময় বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা করে। তাদের গবেষণায় আমরা এখন দুর্নীতিতে ৪০তম কোটায় আছি। আর বিএনপি পাঁচ বছরে এক নম্বরে ছিল।. . .বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
তাঁর এ বক্তব্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। জয়ের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল থেকে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়কে সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘ষড়যন্ত্র নয়, জরিপ ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই জয় ওই কথা বলেছে।’ অর্থাৎ জয়ের মতো নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছে। রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের পদচারণা আমাদের এগিয়ে চলার পথে বাড়তি প্রাপ্তি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতেÑ প্রতিবছর ভোটার তালিকায় তরুণ ভোটার আসছে প্রায় ২৩ লাখ। ৯ কোটি ২১ লাখ ভোটারের মধ্যে ৪ কোটি ভোটারের বয়স ৪০ বছরের নিচে। মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ নতুন প্রজন্মের। তাদের জন্য নতুন প্রজন্মের নেতা অনিবার্য। সজীব ওয়াজেদ জয় এসব নতুন ভোটারের প্রত্যাশার ভাষাকে ঠিকই বুঝতে পারেন। ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে তিনি প্রার্থী হবেন বলে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। বলা হয়, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে পতাকা ওড়ানো গাড়িতে শুধু রাজাকার দেখা যাবে। আওয়ামী লীগ এদেশের যে উন্নয়ন করেছে বিগত জামায়াত-বিএনপি চারদলীয় জোট সরকার তা করেনি। বিএনপির মিথ্যা প্রচার প্রচারণা মোকাবেলা করতেই হবে। আগামী ছয় মাস তরুণ ভোটারদের কাছে বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে হবে। জয়ের ওই বক্তব্যকে বাংলা একাডেমির ডিজি শামসুজ্জামান খান ‘পার্টির মরাল বুস্ট আপ করার জন্য দেয়া নির্বাচনী কৌশল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। (বিডিনিউজ ২৪, ২৯ জুলাই) সেই সময় বিবিসি মন্তব্য করেছিল, জয় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফও বলেছিলেন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে আসবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে যোগ দিচ্ছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে রাজনীতিতে তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে কিছু কিছু প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকলেও তিনি ২০০৯ সালে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর নাতি এবং শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার পুত্র হিসেবে পারিবারিক সূত্র গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তিনি যে মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করতে এসেছেন তা বোঝার ক্ষমতা নেই বিএনপি-জামায়াত নেতাদের। তারা জয়ের বক্তব্যের মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় হলে নীরব ভূমিকা পালন করে যারা, তাদের কাছ থেকে আমরা কি প্রত্যাশা করতে পারি? প্রকৃত দেশপ্রেমীকের পক্ষে দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতককে মেনে নেয়া কি সম্ভব? আশ্চর্য হচ্ছে তাদেরই আবার ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করা হয়। প্রচার করা হয় আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী দল। এজন্য আওয়ামী লীগ যে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তার প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। কারণ বিরোধী পক্ষ বারবার ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগকে শত্রু বানিয়ে সাধারণ মানুষকে বিপথগামী করছে।
এটা ঠিক যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ এখনও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী দল। এখানে অন্য কোন দলের এত শক্তি নেই যে, তারা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সমান হতে পারে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের যে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তা অন্য কোন দলের নেই। সজীব ওয়াজেদ জয় সেই গৌরবকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন। মধ্যবিত্তের সন্তান বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানী শাসকদের ফাঁসির ভয়কে উপেক্ষা করেছেন। জেল খেটেছেন মাসের পর মাস। সেই ত্যাগী নেতার নাতি হিসেবে জয়কে মনে রাখতে হবে, এসব মূঢ়, মূক মানুষের মুখে দিতে হবে ভাষা। তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় নিয়েই। জাতির পিতা নিজের সন্তানকে (শেখ মণি, শেখ কামাল) রাজনীতিতে এনেছিলেন। আর তা ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। পারিবারিক পর্যায়ে তিনি যা করেছিলেন তা ছিল দেশের স্বার্থে, মানুষের মঙ্গল চিন্তা করে। অনেকেই তাঁর বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধাচরণ করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দেশের জন্য মমত্ববোধকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না।
॥ ৪ ॥ চার ॥
রাজনৈতিক নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এগিয়ে এসেছেন মানুষের আকর্ষণে। মাতার সান্নিধ্য তাঁকে রাজনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী সমর্থক সকলেই খুশি হবেন। কারণ তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন। আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নেতৃত্ব ও উন্নয়নকে একই সঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে। জয় হঠাৎ আবির্ভূত নেতা নন। তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর আছে দৃঢ়চেতা অভিভাবক। যিনি সকল বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারঙ্গম। কখনও পথ চলতে ছিটকে পড়লে শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়ে ঠিক পথে আনতে পারবেন তাঁকে। কারণ জয় একান্তই মাতৃ অনুগত। জয় আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সদস্য। এর বাইরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। এ অর্থে তিনি দলের নীতি-নির্ধারক না হলেও বিভিন্নভাবে দল ও দলের নেতৃত্বকে অনেকরকম সহযোগিতা দিচ্ছেন। এখন এগিয়ে যাচ্ছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। স্বাধীনতার চেতনায় মথিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জনের পরও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হওয়ার জন্য জাতির জনককে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধে চেতনার বিপরীত দিকে হাঁটা দায়ী। চলতি বছর (২০১৭) তাঁর বক্তব্য হলো- ‘আমরা লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ৪ বছরেই নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছিলাম। সেই সময়ে আসে ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এরপর স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি ক্ষমতায় আসে।’ সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণদের মূল্যবান কথা বলেছেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা কোনদিন ভুলবেন না। ভুলতে দেবেন না। আর কাউকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেবেন না। এমন মিথ্যা প্রচারের সুযোগ দেবেন না, যাতে জাতি শহীদদের ভুলে যায়।’ তাঁর মতে, ‘যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা বাংলাদেশের ওপর কি বিশ্বাস রাখবে?’
নতুন প্রজন্মের কাছে দলের আবেদন বাড়াতে জয়কে অনেক কিছু করতে হবে। প্রথমেই দলের কোন্দল, গ্রুপিং মিটাতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা মোকাবেলা করতে তিনি ইতোমধ্যে অবতীর্ণ হয়েছেন। তবে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে গঠনমূলক কর্মকান্ডে উৎসাহী করতে হবে। ক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে তিন শত সংসদীয় আসনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজে নামতে হবে। যোগ্য ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে আগে থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলতে হবে। দেশ-বিদেশের রাজনীতিকে পর্যবেক্ষণ করে নিজেদের কৌশলপত্র প্রণয়ন ও সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে নিয়োজিত হতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীকে বাধ্যতামূলক প্রযুক্তিমুখী হতে হবে। মূল সংগঠন ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর দেশব্যাপী শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য এর কোন বিকল্প নেই। সংগঠনের দুর্বলতা কাটানোর জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে সংকট উত্তরণের পথ আবিষ্কার করা খুবই জরুরী। শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনায় সজীব ওয়াজেদ জয় যেমন তৎপর তেমনি নিজের নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের নতুন কান্ডারী সজীব ওয়াজেদ জয়কে অভিবাদন।
॥ ৫ ॥ পাঁচ ॥
মূলত বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে- একথা সজীব ওয়াজেদ জয় বারবার বলে এসেছেন। এজন্য দরকার যুবসমাজের ভোট। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ৪-৫ বার ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে হবে। শেখ হাসিনা সরকার এক নাগাড়ে আট বছর ক্ষমতায় আছে। তাতে দেখা যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ এখন। এজন্য আরও ১০-১৫-২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারলে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্বভাবে এগিয়েছে। বিশ্বে আমাদের অর্থনীতি এখন ৩৩তম। কারণ তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সর্ব প্রকার ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার দূর করার জন্য সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.