ক্ষমা…

Tajul Picture fpr pp copy2ক্ষমা একটি মহৎ গুণ এই কথাটি শৈশব থেকেই শুনে এসেছি। আবার বাস্তবে দেখেছি কিভাবে অপরাধিকে ক্ষমা করা হয়। এমনও দেখেছি, সামাজিক বিচারে ক্ষমার দৃষ্টান্ত; পাশাপাশি কখনো কখনো নিজেও ক্ষমা করেছি। কারনে অকারণেও ক্ষমা করেছি। তবে বেশির ভাগ ক্ষমাই করা হয়েছিল যখন আর আমার দ্বারা কোন কিছু করার থাকেনা তখনই ক্ষমা করা হয়েছে বা করেছি। তবে এই ক্ষমা করা মনে হয় শেষের অংশটির মতই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তবে ইদানিং আবার দেখলাম আমাদের বিএনপি নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা করেছেন; তাও আবার প্রকাশ্যে বিচারালয়ের কাঠঘরাই দাড়িয়ে বলেছেন। কি সুন্দর এবং বিচিত্র এই ক্ষমা। ক্ষমাপ্রার্থী নিজে হয়ে অন্য আরেক জনকে কিভাবে ক্ষমা করেন তা বিবেকবান রক্তে মাংসে গড়া কারোরই বোধগম্য নয়। তবে আমি এই ক্ষমা করার বিষয়টিকে অসহায়ত্বের প্রলাপ বকা বা সকল কিছু মেনে নিয়ে এই ক্ষমা করে একটু শান্তির পরশ অনুভব করার দৃষ্টান্তকে সাধুবাদ জানাই। আবার এমনও হতে পারে এই ভেবে যে, পৃথিবীর সময় শেষ লগ্নে এসে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য কামনায় কাতর হয়ে ক্ষমার কথা উল্লেখ করেছেন। হযরত ঈসা আল মসীহ তাঁর অনুসারীদের বলেছেন-“আমি যেরুপ তোমাদের ক্ষমা করেছি, তেমনি তোমরাও অন্যদের (যারা তোমার উপর অন্যায় করেছে) ক্ষমা কর।” যদি এই হয় তাহলে হয়ত খুবই সুন্দর যে তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় ঐ কথা বলেছেন এবং ক্ষমা করেছেন।
তবে বিষয় হলো তিনি; শেখ হাসিনাতো খালেদা জিয়ার উপর কোন অন্যায় করেননি আর আদালতে তা প্রমানও হয়নি। দৃশ্যত অনেক অন্যায় তিনি (খালেদা জিয়া) শেখ হাসিনার উপর করেছেন এবং প্রকারান্তরে করে যাচ্ছেন। সেই দিক থেকে এই ক্ষমার একটি অর্থবহতা রয়েছে। এই ক্ষমাকেতো বলা যাবে না যে আল্লাহর ইচ্ছায় জুলুমকারীকে ক্ষমা করেছেন। তাহলে এই ক্ষমাকে বলতে হবে অক্ষম ও অসমর্থ হয়ে এই ক্ষমার কথা রাগত স্বরে উচ্চারিত করেছেন মাত্র। কারন তিনি খালেদা জিয়া যত পরিকল্পনাই করেছেন এবং আগামীতে যত পরিকল্পনাই করে যাবেন সবই প্রকাশিত এবং নিস্ফল হয়েছে ও হবে। তাই তিনি এখন এই ধরনের প্রলাপ বকা ছাড়া আর কিই বা করতে পারেন।
যেহেতু তিনি ক্ষমা চাননি বিচারক ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে; সেহেতু উনার ছল ছাতুরী এবং কৌশল কালক্ষেপন অগ্রাহ্য করে ন্যায় বিচার কার্যকর করা হউক। জাতি দেখুক কোন মানুষই আইনের এবং বিচারের উদ্ধে নয়। যে যত বড় ক্ষমতার অধিকারীই হউক না কেন। এখানে প্রশ্ন জাগে যেখানে থানায় একটি জিডি হলেই পুলিশ আর বাাড়ি ছাড়ে না সেখানে এই মহিলার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বের হওয়া সত্তেও গ্রেফতার না হওয়াটি একটি প্রশ্নবোধক বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে দৃশ্যমান। কে কার মুখ বন্ধ করবে? তাই আগামী দিনে পুলিশকেও আরো সাবধানতা অবলম্বল করে জনগনের দুয়ারে হাজির হতে হবে। নতুবা জনরোষে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম হতে পারে।
আর যদি কেউ ক্ষমা চায় তাহলেও আল্লাহ তায়ালা তাঁর আসমানী কিতাবের মাধ্যমে বলেছেন…. যেটা হযরত ঈসার অনুসারীদের প্রশ্নের জবাবের মাধ্যমে প্রকাশিত “হুজুর, আমার ভাই আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করলে আমি কতবার তাকে মাফ করর? সাতবার কি? হযরত ঈসা তাঁকে বললেন, “কেবল সাত বার নয়, কিন্তু আমি তোমাকে সত্তর গুণ সাতবার পর্যন্ত মাফ করতে বলি। এই শিক্ষাটি আমাদের সমাজের জন্য প্রয়োজন।
ক্ষমা এখন প্রয়োজন হয়েছে আমাদের রাজনৈতিক কালচারে। আর এই ক্ষমার শিক্ষায় যদি আমরা অগ্রসর হয় তাহলে হয়ত আমাদের পরিবার, সমাজ এবং দেশ আগামী দিনে আরো তড়িৎ গতিতে উন্নয়নের শেষ চূড়াই পৌঁছতে পারবে। এইজন্য হযরত ঈসার একটি গল্প উল্লেখ করছি যা তিনি তার সাহাবীদের বলেছিলেন;- “দেখ, বেহেশতী রাজ্য এমন একজন বাদশাহ্র মত যিনি তাঁর কর্মচারীদের কাছে হিসাব চাইলেন। তিনি যখন হিসাব নিতে শুরু করলেন তখন তাদের মধ্য থেকে এমন একজন কর্মচারীকে আনা হল, বাদশাহর কাছে যার লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ ছিল। তার ঋণ শোধ করবার ক্ষমতা ছিল না। তখন সেই মালিক হুকুম করলেন যেন সেই লোককে এবং তার স্ত্রী ও  ছেলে-মেয়েকে আর তার যা কিছু আছে সমস্ত বিক্রি করে পাওনা আদায় করা হয়। তাতে সেই কর্মচারী মাটিতে পড়ে মালিকের পা ধরে বলল, ‘হুজুর, আমার উপর ধৈর্য ধরুন, আপনাকে আমি সমস্তই শোধ করে দেব।’ তখন মালিক মমতা করে সেই কর্মচারীকে ছেড়ে দিলেন এবং তার ঋণ মাফ করে দিলেন।
“পরে সেই কর্মচারী বাইরে গিয়ে তার একজন সংগী কর্মচারীকে দেখতে পেল। তার কাছে সেই সংগী কর্মচারীটির প্রায় একশো টাকা ঋণ ছিল। সেই কর্মচারী তার সংগীর গলা টিপে ধরে বলল, ‘তুই যে টাকা ধার করেছিল তা শোধ কর।’
“সংগী কর্মচারীটি তখন তার পায়ে পড়ে তাকে অনুরোধ কলে বলল, ‘আমার উপর ধৈর্য ধর, আমি সব শোধ করে দেব।’ কিন্তু সে রাজী হল না বরং ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে জেলখানায় আটক রাখল।
“এই সব ঘটনা দেখে তার অন্য সংগী কর্মচারীরা খুব দু:খিত হল। তারা গিয়ে তাদের মালিকের কাছে সব কথা জানাল। তখন মালিক সেই কর্মচারীকে ডেকে বললেন, ‘দুষ্ট কর্মচারী! তুমি আমাকে অনুরোধ করেছিলে বলে আমি তোমার সব ঋণ মাফ করেছিলাম। আমি যেমন তোমাকে দয়া করেছিলাম তেমনি তোমার সংগী কর্মচারীকে দয়া করা কি তোমার উচিত ছিল না?’ পরে তার মালিক রাগ করে তার সমস্ত ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে কষ্ট দেবার জন্য জেলাখানার লোকদের হাতে তুলে দিলেন।
“ঠিক সেইভাবে, তোমরা প্রত্যেকে যদি তোমাদের ভাইকে অন্তর দিয়ে মাফ না কর তবে আমার বেহেস্তি খোদাও (মালিক) তোমাদের উপর এই রকম করবেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published.