সরকারী চাকুরীতে বয়সসীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

Govt job extended ageতাজুল ইসলাম নয়ন॥ সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বর্তমানে বিদ্যমান বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ করার চিন্তা করা হচ্ছে। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা করা হচ্ছে ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৩৪। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানায় ইতিমধ্যে তিনটি মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রের আলোকে সরকারী চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৬১ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করার একটি প্রস্তাব আগামী সোমবার মন্ত্রীসভায় উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩২ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-৩৪ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করে একটি প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী সোমবার না হলে পরবর্তী মন্ত্রীসভার বৈঠকে তা উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা সিন্ধান্ত দেওয়ার পরই বিষয়টি চুড়ান্ত করা হবে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬১ বছর করার আরেকটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-৩৪ এবং সাধারণদের ৩২থেকে ৩৪ করার প্রস্তাবটিও সেখানে থাকছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই আইন মন্ত্রণালয় বসয়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে সরকারী চাকুরীর বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা যায়। সুত্রে আরো জানা যায় যে, এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এবং সংসদ, সংসদীয় কমিটি, জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন প্রস্তাব বিবেচনায় নিচ্ছে। উন্নত দেশগুলো তাদের জনগণকে মানবসম্পটদে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোন সীমারেখা নির্দিষ্ট করেনি। পাশ্ববর্তী দেশসমূহ ওই সব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশী। কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮-৪০, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালীতে ৩৫ বছর কোন কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্সে ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনি¤œ ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত। অফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলােেশর সরকারি চাকরির মতো সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যেকোনো বয়সে আবেদন করা যায়। রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগেরদিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও ষ্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বো”” ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে, তবে ৬৫ বছরের উর্ধে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনি¤œ ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকিরতে আবেদন করা যায়।
গত বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২১তম বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদের শেষদিকে মহাজোট সরকারের চমক হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক নির্দেশনা দেয়া হয়।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিসয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। ২০১৪ ও ০১৫ সালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এ প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন জেলা প্রশাসকরা সমর্থন দিয়েছিলেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তারিখে ২০১১ অধ্যাদেশ মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা ৩০ বছর রয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাছাড়া একজন প্রার্থী ৩০ বছর বয়সে চাকরির জন্য আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেক সময় ২ বছরের বেশি সময় চলে যায়, সে ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবি ওঠা স্বাভাবিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.