সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রামীন ফোনের কর্মচারী ইউনিয়ন

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
আসসালামু আলাইকুম!
গ্রামীণফোন এ্যমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জি.পি.ই.ইউ.) তথা এর সকল সম্মানিত সদস্যগণের পক্ষ থেকে আমি মিয়া মোঃ শাফিকুর রহমান মাসুদ, ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক, আপনাদের সকলকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই।
আপনারা জানেন, গ্রামীণফোন লিঃ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানী নরওয়ে ভিত্তিক ”টেলিনর” এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যার প্রায় ৩৪ শতাংশ শেয়ারর মালিক গ্রামীণ টেলিকম এবং ১০ শতাংশ পাবলিক শেয়ার। গ্রামীণফোন লিঃ একটি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ১৯৯৭ সালে থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ৬ কোটির বেশি গ্রাহক নিয়ে গ্রামীণফোন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন কোম্পানী। gp 1
বিগত ১৯৯৭ সাল হতে কর্মরত এদেশের সকল দক্ষ, মেধাবী ও সুশিক্ষিত শ্রমিক-কর্মচারিগণদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীনফোন লিঃ আজ বাংলাদেশে এক নম্বর (৮ বিলিয়ন) কোম্পানীতে পরিনত হয়েছে, যার বর্তমান বার্ষিক রাজস্ব প্রায় ১২৫০০ কোটি টাকা। গ্রামীণফোনে কর্মরত সকল দক্ষ, মেধাবী ও সুশিক্ষিত শ্রমিক-কর্মচারিগণ প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমান আয়কর প্রদান করাসহ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
আর এসকল দক্ষ, মেধাবী ও সুশিক্ষিত শ্রমিক-কর্মচারিগণ, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আদায়ের মান্সে এক ক্রান্তিকালিন সময়ে তথা ২০১২ সালের জুন মাসে ”গ্রামীণফোন এ্যমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জি.পি.ই.ইউ.)” নামে একটি আদর্শ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করে।
gp2
আমাদের এই ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের মূল ভিত্তি হলো-
১. বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ৩৮ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত ও প্রদত্ত ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের মৌলিক অধিকার
২. বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৭৬ নং ধারা এবং শিল্পসম্পর্কীত অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ৩ নং ধারায় বর্ণিত ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার
৩. বাংলাদেশ কর্তৃক স্বীকৃত ও স্বাক্ষরিত আই.এল.ও. কনভেনশন নং ৮৭ ও ৮৯ অনুসারে ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথ দর কষাকষি করার অধিকার
৪. ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষনাপত্রের ২৩ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত ও প্রদত্ত ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার
৫. গ্রামীণফোন ও টেলিনর এর প্রণীত ও স্বীকৃত নিজস্ব আচরনবিধি এবং টেলিনর কর্তৃক স্বীকৃত/সম্মত ও.ই.সি.ডি নীতিমালায় বর্ণিত ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার।
উপরোল্লিখিত সাংবিধানিক তথা আইনগত অধিকারের আলোকে, আমরা গ্রামীণফোনে কর্মরত অধিকাংশ স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারিগণ বিগত ১৪ জুন ২০১২ ইং তারিখে ”গ্রামীণফোন এ্যমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জি.পি.ই.ইউ.)” নামে একটি আদর্শ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করি। আইনগত সকল নিয়মনীতি পালন করে বিগত ২৩ জুলাই ২০১২ ইং তারিখে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষ তথা শ্রম পরিচালক বরাবর রেজিষ্ট্রেশন এর জন্য আবেদন করি। কিন্তু শ্রম আইনানুযায়ী ইউনিয়নকে ভুল সংশোধনের কোন নোটিশ প্রদান না করে, ৪ কর্মদিবসের মধ্যে অথাৎ ২৯ জুলাই ২০১২ ইং তারিখে জি.পি.ই.ইউ. এর রেজিষ্ট্রেশন এর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।
বাংলাদেশের শ্রম আইনের বিধান মতে, ২৬ আগষ্ট ২০১২ ইং তারিখে উক্ত আবেদন প্রত্যাখ্যান এর বিরুদ্ধে জি.পি.ই.ইউ. ২য় শ্রম আদালত, ঢাকায় একটি আপীল দায়ের করেন এবং প্রায় ২ বছর পর, ২য় শ্রম আদালত, ঢাকা আপীল শুনতে বিব্রত বোধ করে বিষয়টি শ্রম আপীল ট্রাইবুনালে প্রেরণ করেন। শ্রম আপীল ট্রাইবুনাল শুনানী শেষে বিগত ২১/০৭/২০১৪ ইং তারিখে জি.পি.ই.ইউ. এর পক্ষে ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন প্রদানের আদেশ দেন।
শ্রম আপীল ট্রাইবুনাল এর রায়ের বিরূদ্ধে গ্রামীণফোন লিঃ ৭৬০০/২০১৪ নং রীট মোকদ্দমা দায়ের করেন। শুনানী শেষে মহামান্য হাই কোর্ট, শ্রম আপীল ট্রাইবুনালকে জি.পি.ই.ইউ. এর আপীল মোকদ্দমাটি শ্রম আদালতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন।
শ্রম আপীল ট্রাইবুনাল উক্ত আপীল মোকদ্দমাটি ১ম শ্রম আদালতে প্রেরণ করিলে পর ১ম শ্রম আদালত শুনানী অন্তে ১৫/০৪/২০১৫ ইং তারিখে আপীলটি খারিজ করিয়া দেন।
অতঃপর, জি.পি.ই.ইউ. ১ম শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপীল ট্রাইবুনালে আপীল দায়ের করিলে, আদালত শুনানী অন্তে বিগত ৩০/০৬/২০১৬ ইং তারিখে প্রকাশ্য আদালতে জি.পি.ই.ইউ. এর পক্ষে রায় দেন।
কিন্তু বিগত ৩০ জুন, ২০১৬ ইং তারিখে প্রকাশ্য আদালতে জি.পি.ই.ইউ. এর পক্ষে রায় ঘোষনা করা হলেও শ্রম আপীল ট্রাইবুনাল হতে এই রায়ের সার্টিফাইড কপি বা নকল পেতে সময় লেগেছে দেড় বছরের অধিক সময়। রায়ের সার্টিফাইড কপি পেতে জি.পি.ই.ইউ. এর পক্ষে ৬ বারের বেশী আবেদন করলেও কোন লিখিত কপি দেয়া হয়নি। অবশেষে জি.পি.ই.ইউ. এরপক্ষে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীট মোকদ্দমা দায়ের করা হয়, যাহার নম্বর ১৭১৯৭/২০১৭। রীটের শুনানী শেষে মহামান্য আদালত ১ (এক) মাসের মধ্যে রায়ের কপি প্রদানের জন্য শ্রম আপীল ট্রাইবুনালকে নির্দেশনা দেন।
অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর আইনি লড়াইয়ের পর, বিগত ০৯/০১/২০১৮ ইং তারিখে রায়ের কপি পাওয়ার পর জি.পি.ই.ইউ. এর পক্ষে এর সাধারন সম্পাদক, আমি মিয়া মোহাম্মাদ শাফিকুর রহমান মাসুদ বিগত ১০/০১/২০১৮ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন এর বরাবরে রেজিষ্ট্রেশন প্রদানের জন্য আবেদন করি যা শ্রম আইনানুযায়ী (ধারা ১৮২) ০৭ দিনের মধ্যে শ্রমপরিচালক বা মহাপরিচালক ও রেজিষ্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদান করবেন। কিন্তু ১৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা এখনও অবদি রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট পাই নাই যা আদালত অবমাননা বা আইনভঙ্গের সামিল।
দীর্ঘ ৬ বছরের অধিক সময় লেগেছে শুধুমাত্র রায় পেতে। জি.পি.ই.ইউ. আশংকা করছে, জি.পি.ই.ইউ. এর রেজিষ্ট্রেশন বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যে কোন কোন মহল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় গ্রামীণফোন এ্যমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জি.পি.ই.ইউ.) তথা এর সকল সম্মানিত সদস্যগণ আজকের সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্দন এর আয়েজন করেছে। আমরা এই কর্মসূচির দ্বারা আপনাদের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও কর্তৃপক্ষকে জোরালভাবে জানাচ্ছি যে, উচ্চ শ্রম আদালতের রায় বাস্তবায়নে কোনরূপ কালবিলম্ব না করে অনতিবিলম্বে জি.পি.ই.ইউ. এর রেজিস্ট্রেশন প্রদান করে আদালতের রায় ও আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করুন। অন্যথায় গ্রামীণফোনের সকল শ্রমিক-কর্মচারীগণ আইনগত ব্যাবস্থাসহ বৃহত্তর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবেন।
আমরা আরও জানাতে চাই যে, আমরা বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসাবে বৈদেশীক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোন অসৎ উদ্দেশ্য আমাদের নেই বরং আরো বৈদেশীক বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে চাই। দেশের উন্নয়ন ও জনগনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে চাই। সরকারের ”ভিশন ২০২১” এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন এ্যমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জি.পি.ই.ইউ.), গ্রামীনফোন লিঃ ও সরকারের গৃহীত সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা পালনে বদ্ধ পরিকর।
সর্বপরি, দেশের অভ্যন্তরীণ, জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শ্রমিক-কর্মচারিদের আইনগত ও ন্যায্য অধিকার আদায় ও রক্ষার জন্য আমরা কাজ করে যাব।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মুখপাত্র হিসাবে সংবাদপত্র, মিডিয়া তথা সকল সাংবাদিক ভাই বোনদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ,
বর্তমান সরকারের ঘোষিত নির্বাচনী এসতেহার, জাতীয় শ্রমনীতি ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশে শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল শ্রমিক-কর্মচারিদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনাদের ভূমিকা ও সহায়তা একান্তকাম্য।
পরিশেষে, আদালতের রায় অনুযায়ী গ্রামীণফোন এ্যমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জি.পি.ই.ইউ.) এর রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন, জবাবদিহিতা ও দ্রুত রায় বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি। আপনাদের সকলের সহযোগীতা ও সবসময় আমাদের পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জি.পি.ই.ইউ. এর সভাপতি জনাব ফজলুল হক এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্তিত ছিলেন, মাতুজ আল-কাদরী, সাংগঠনিক সম্পাদক; রফিকুল কবির সৈকত, আদিবা জেরিন, প্রচার সম্পাদক গ্রামীণফোন এ্যমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন; বি.এম. জাহিদুর রহমান, সাধারন সম্পাদক গ্রামীনফোন পিপুলস কাউন্সিল সহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.