রোহিঙ্গা কেম্প এবং আশ্রয় একটি অনন্য দৃষ্টান্ত

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র মাথা তুলে দাড়িয়েছিল সেই ১৯৭১। কিন্তু মাথা নীচু করে পথ চলা শুরু হয়েছিল ৭৫ পরবর্তী সেই সরকারগুলোর কর্মোদ্দীপনায়। আর সেই থেকে মুক্ত করে মাথা উঁচু করে পথ চলতে আবার শিখিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। আর এরই ধারাবাহিকতায় সার্বিকভাবে জাগ্রত হয়েছে মানদন্ড এবং উন্নীত হয়েছে স্কেলের মাপ। এইতো সদ্য মানবতার এক উজ্জ্বল ও জলন্ত শিখরে এখন বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ এমন এক মানদন্ড সেট করেছে যা পৃথিবীর সকল দেশ মাথাপেতে ছাত্রের ভুমিকায় অবর্তীর্ণ হবে।  ruhinga camp visit
বাংলাদেশের কাছ থেকে সকল কিছু শিখতে আসবে। যেমনী আসছে জঙ্গী নিধনের দীক্ষা নিতে। আশ্রয়হীনের আশ্রয় দিতে যে মন ও বিশাল হৃদয়ের দরকার তার শিক্ষাও বাংলাদেশ থেকেই নিতে হলো। উন্নয়ন কিভাবে তরান্বিত করতে হয় তাও আবারা বাংলাদেশেরই আবিস্কার। প্রতিকুলতা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠারও দৃষ্টান্ত এখন বাংলাদেশের সঙ্গে উতপ্রোতভাবে জড়িত। এখান থেকেই বিশ্বকে শিখতে হবে এবং দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলাদেশকেই সামনে রেখে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘ মিশনের সফলতার পুরো কৃতিত্বই এখন বাংলাদেশের জুলিতে। তাই বাংলাদেশের উদিয়মান সূর্য্য এখন অর্থনীতি, রাজনীতি, অবকাঠামো, উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা এমনকি জঙ্গি নিমূলসহ সকল ক্ষেত্রেই। আর এই ক্ষেত্রে শতভাগ সফল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আতেল বা জ্ঞানপাপীরা বিভিন্ন কথা বলে ফালতু হিসেবে নিজেদেরকে শতভাগ না হলেও এর কাছাকাছি নিচে নামিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এবং এর জনগণ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে দেখিয়েছে আমরা পারি এবং পেরেছি। হৃদয়ের বিশালতা ও উদারতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে এসেছে মানবতাকে। আর সেই স্বীকৃতিই এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বহন করে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। বিশ্ব মানবতার মা নামক খ্যাতি অর্জন আসলে যৎসামান্যই বটে। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
টেকনাফ থেকে কক্সবাজার রাস্তার সৌন্দয্য এবং নিখুত নিরাপত্তা এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে এই মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দয্যকে আরো সুসমামন্ডিত করেছে সুদুরপ্রসারী সরকারী পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন। মানুষের আয়ের উৎস বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবন মানে উন্নয়নের হাওয়া লেগেছে যাতে করে চুরি, ডাকাতিসহ যাবতীয খারাপ কাজের ৯৫ভাগ নিস্কৃতি পাওয়া গেছে। এই অভাবনীয় চারিত্রিক এবং মানবীক উন্নয়ন এক ঐতিহাসিক মাইল ফলক মাত্র।
প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং এর সুফল কিন্তু ঘরে ঘরে পৌছে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক এবং সেবার মনোভাবে কোন ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়নি। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই সেবার মনোভাব নিয়ে প্রস্তুত। পুলিশ + বিজিবি + সেনাবাহিনীর যোগসূত্রও দৃষ্টান্তের মাইল ফলক ছুয়েছে। একসঙ্গে কাজ করার দৃষ্টান্ত এবং এর ফলাফল চমৎকার তাই বর্তমান কক্সবাজার পরিদর্শনে চোখে পড়ার মত।
রোহিঙ্গারা এই দেশে অস্থায়ীভাবে বসবাসের প্রয়োজনীয় যোগানসহ যাবতীয় ব্যবস্থা পেয়েছে। আমাদের চৌকস পুলিশ, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতাই এবং স্থানীয় জনগণের অকৃত্রিম ভালবাসায়। এই শৃঙ্খলা এবং শাস্থি ও স্থীতিশীলতা রক্ষার জন্য রোহিঙ্গা নের্তৃত্ব এর্ব আমাদের স্থানীয় ও প্রশাসনিক যোগসূত্রের কারণে। অল্প সময়ের মধ্যে এই এলাকার অপ্রত্যাশিত ১০ লক্ষ্যেরও বেশী মানুষকে একটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করা কম কথা নয়। সকলের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও থাকা খাওয়ার নিশ্চয়তাসহ যোগান দেয়া কম কথা নয়। এখানে দেখা যায় প্রতিটি এলাকায় ভাগ করে ব্লক এর মাধ্যমে ঘর করে দেয়া হয়েছে, যেখানে, টিউবওয়েল, লেট্ট্রিন, সোলার বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং লাকরির চুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনই কোন কোন রেশন দেয়া হয়েছে। ক্যাম্প থেকে রেশন নেয়ার জন্য আলাদা দৃষ্টিনন্দন ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে সুশৃঙ্খল পরিবেশে প্রবেশ করে কার্ড অনুযায়ী রেশন সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিটি মানুষের জন্য আলাদা আলাদা অইডি কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ডাটাবেইজের মাধ্যমে প্রত্যেকের আইডেনটিটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সহ যাবতীয় প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন করা হয়েছে।
প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে এবং প্রতিটি মানুষই আত্ম সন্তুষ্টির হাসি মাখু মুখ নিয়ে এগিয়ে এসে আত্মস্বাক্ষ্য দিয়ে থাকেন। প্রশ্নের জবাবে বলেন আমাদের কোন অভাব নেই। সরকার আমাদের সবই দিয়েছেন। আমরা খুশি। কিছু মানুষ এমনও বলেছেন তারা এই দেশেই থেকে যেতেন চাই আর ফিরতে চান না। শান্তির এই ভুমি থেকে চিরবিদায় নিতে চান। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত চেহারায় পুষ্টি এবং শান্তির ছাপ ফুটে উঠেছে।
মসলা করার মেশিন সহ চালের গুরা করার মেশিনও প্রদান করা হয়েছে। এইযে কি আনন্দ। অনেকের দুপুরের খাবারের মেনু জানতে চাইলে বলে কুড়া দিয়ে খেয়েছি (কুড়া মানে মুড়গি)। সকালের খাবার মেনু জানতে চাইলে বলে ভাত, ছোট মাছ আর ডাল দিয়ে খেয়েছি। মনোরম এই তৃপ্তির ডেকুর যেন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মাত্র। এক ইমামের উক্তি। এখানে সুখের রাজ্য পেয়েছি। মরলেও শান্তি আর আমি এখানেই মরতে চাই। আমাদের বড় হুজুর এখানে মরেছেন এবং লক্ষ মানুষের জানাজা পেয়েছেন; এত বড় সৌভাগ্য আর কার হতে পারে। যদি মিয়ানমারে মারা যেতো কারো জানাজা পেতো না এমনকি সুন্দরভাবে ইসলামী নিয়মে দাফনও করা যেতো না। তাই আমিও এখানেই মরতে চাই।
এই যে ব্যবস্থা তা কিন্তু সত্যিই চমৎকার। তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সহায়তা এবং দেশী ও বিদেশী এনজিওদের কাজের সমন্বয়ে সরকারের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। সকল এনজিওদের কাজের সমন্বয়ও সরকার করে দিয়েছে যাতে করে কোন ভূল বোঝাবোঝি এবং নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহীতা সমুজ্জ্বল রয়েছে। এই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিকে কাজে লাগীয়ে আগামী দিনে আরো বড় কোন অসাধ্যকে সাধ্যের মধ্যে আনয়ন করা সম্ভব। আশার কথা হলো শেখ হাসিনা এবং তার দুরদর্শী চিন্তা এবং বাস্তবায়নকারী কর্মবাহিনী।
এখন ভাবার সময় হয়েছে যে, কিভাবে ঐ বেকার মানুষগুলোকে কাজে লাগিয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করা যায়। কারণ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডা। আর ঐ আড্ডাখানায় পরিণত হওয়ার পুর্বেই একটি ব্যবস্থা করতে পারলে সকলের মঙ্গলই সাধিত হবে বলে আশা করা যায়। তাদেরকে যেহেতু ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সরকারী পর্যায়ে চেষ্টা চলছে সেহেতু ধৈয্য ধারান ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তবে মঙ্গলের বার্তা হলো লেখাপড়ার বিষয়টি। সরকার বার্মিজ ভাষা এবং ইংরেজিতে লেখাপড়া শিখাচ্ছে। যাতে করে দেশে ফিরে গিয়ে স্বদেশীয় ভাষা এবং আন্তর্জাতিক ভাষা দুটোই কাজে লাগাতে পারঙ্গম হয়।
আরেকটি বিষয় আমার মনে হচ্ছে উখিয়া, কুতুবপালং, পালংখালী এই জায়গাগুলোতে মানসম্পন্ন একটি খাবার হোটেলের ব্যবস্থা থাকলে আরো উত্তম হতো। কারন সবাই কক্সবাজার থেকে যেতে হয় এবং খাবারের জন্য আবার কক্সবাজার ফিরে আসতে হয়ে। তাই যদি ঐ যায়গাগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে আর কোন কিছুর অভাব পরিলক্ষিত হতো না।
আশা করি নিন্দুকরা এবং জ্ঞানপাপিরা এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় আতেলরা আর আতলামী করবেন না বা মাতাল হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় করাবেন না। কারণ ঘুরে আসুন এবং এবং নিজেদেরকে সংশোধ করেন পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে ভাল কাজের প্রশংসা এবং মন্দ কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে শিখুন। সত্যিই এক চমৎকার ও বিরল কাজ করিয়ে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আমার সঙ্গে জার্মান, আমেরিকান বিদেশী ছিল…. তাদের অভিব্যক্তি এক কথায় চমৎকার এবং বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে হবে পৃথিবীর সংকটকালীন দেশসমূহের। বাংলাদেশ অভিজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.