বিচারালয়ে নতুন সংস্কৃতি

মানুষ বিচার প্রার্থী হয়। কেউ ন্যায় বিচার পায় আবার কেউ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয় তাও আবার বিভিন্ন কারনে। কিন্তু বিচারালয়ের স্বভাবজাত ধর্মানুযায়ী একটি বিচার হয়েছে এবং হবে আর তার সময় হতে পারে অতি অল্প বা বিলম্বীত ও প্রলম্বিত বা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়ীত। কিন্তু মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটেছে বা ঘটবে এমনটি কিন্তু নয়। কারণ বিচারে একজন সন্তুষ্ট আর একজন অসন্তুষ্ট; আর উভয়কে সন্তুষ্ট করা বিচারকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বিচারালয়ের বিচার একতরফা আবার দু’তরফাও বলা যাবে না। যেহেতু এই বিচারের ক্ষেত্রে কিন্তু রয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে কাউকেউ সন্তুষ্টি অর্জন করানো যায়নি তাই বিচার ব্যবস্থায় নতুন কি করা যায় তা নিয়ে কাজ করা সবসময়ই প্রয়োজন। তবে বর্তমানে বিচারালয়ে নতুন সংস্কৃতি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে এবং ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তার ক্রমবিকাশ ঘটছে বলে দৃশ্যমান রায়ের আলোকে বলা যায়। ইদানিং বলে বুঝাচ্ছি এই নভেম্বরেই কতগুলো স্পর্শকাতর মামলার রায় হয়েছে এবং দৃশ্যমান রায়ে যা বহি:প্রকাশ তা বর্তমান সময়ের আলোচিত এবং সমালোচিত সকলকিছুকেই ছাপিয়ে গিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির বা দৃষ্টান্তের হাতছানি দিচ্ছে। আমরা সাধুবাদ জানাই মামলা নিস্পত্তির দ্রুততার লক্ষ্যণ প্রকাশ এমনকি সরকারের ওয়াদা রক্ষার বাস্তবিক প্রয়োগ ও নিশ্চিতকরনকে।
বিচার এবং রায়ের ফলশ্রুতিতে যে জনমত দৃশ্যমান তা আশার বাতি জ¦ালিয়ে রাখতে সাহস যোগায়। কেবল সরকার নয় সাধারণ মানুষও বিচারের রায়ে সন্তুষ্ট। তবে এই বিচারের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়ায় এখন অপেক্ষারত দেশের বিচার প্রত্যাশি মানুষ। কিন্তু একটি বিষয় খুবই দৃষ্টিকটু যে, বিচারের রায়ে বাদি এবং বিবাদি দুটি গ্রুপই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। বাদি সরকার পক্ষ্য এবং আর্ন্তজাতিক মহল ও এর সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ: আর তাদের সকলের একই ইচ্ছা যে ঐ নরঘাতকদের রায় দ্রুত কার্যকর করে সরকার আগামীর মাইলফলক স্পর্শে আরো একধাপ এগিয়ে যাক। তবে সকলের খুশির সঙ্গে ঐ আসামীদ্বয় যাদের ফাসি হয়েছে তারাও খুশি। এখানেই আমাদের সাধারণ মানুষের মনে জাগে বিপত্তি। তারা নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে কিন্তু বিচারের রায়ে যে ফাসি হয়েছে তাতেও খুশি হয়ে সন্তুষ্টির যে হাসি জাগ্রত রেখেছে তাই এখন অখুশির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রায়ের পর নোয়াখালিতে আবার ওয়াজ মাহফিলে এমনকি মসজিদে এই ফাসির আসামীদের জন্য দু:খ প্রকাশ করা হচ্ছে এমনকি পাশাপাশি দোয়াও করা হচ্ছে। এই নির্বোধ লোকদেরকে আর কি করে বোঝানো যায় ঐ নরঘাতকদের অপরাধ এবং এই অপরাধের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তা বা ধর্মের কোন যোগসাজস নেই।
রায় প্রকাশের পর মাননীয় আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব এডভেকেট আনিসুল হক সাহেবও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন এবং যে যে জায়গায় এখনও বিন্দুমাত্র সন্দ্রেহ রয়েছে সেখানে অনুসন্ধান করে নির্ভেজাল বিচারহীনতার দায়বদ্ধতা থেকে দেশ ও জাতিকে এমনকি বিধাতার আদলে রূপক বিচারালয়কে কলঙ্কমুক্ত করে বিশে^র দরবারে হাজির করাতে অঙ্গিকারের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান রাখতে দৃঢ় অঙ্গিকারই ব্যক্ত করেছেন। আমরা আশাবাদি যে, এই রায়ের ফলে সাধারন মানুষের মনে একটি আশার সঞ্চার হয়েছে এবং দাম্বিক ও ক্ষমতাধর অপরাধীদের মনে ভিতির সঞ্চার ঘটেছে। পাশাপশি দায়িত্ব অবহেলার কারণে যারা আজ বিচারের কাঠঘরায় এবং সাজার সম্মুখীন হয়েছে তাদের এই দুর্দশা দেখে আগামীর দায়িত্ব সচেতন লোকজন তাদের দায়িত্বে অবহেলা করার দু:সাহস হারিয়েছে।
আমার মূল্যায়নে বিচার এবং রায় ও তৎপরবর্তী জনআস্ফালন একটু হলেও বিচলিত হতে চিন্তামূলে কুঠারাঘাত করেছে। তবে আমি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ঐ অতি উৎসাহি সাজাবহাল অছি সাহেবের প্রতি করুনা প্রকাশ করছি। কারণ তাঁর সাজার বহরটুকু দীর্ঘায়ীত হয়েছে এমনকি জরিমানাটুকুও বড় অংকের হয়েছে। তাই এই ধরণের ক্ষেত্রে আরো ছোট সাজা বা জরিমানা এমনকি সাজার প্রকৃতিতে শর্তারোপসহ চাকুরী চুর্ত্যী ঘটানোর বিষয়টি উল্লেখ থাকলে জনসাধারণে হৃদয়াঙ্গম করতে পারঙ্গম হতো। যেহেতু এই আইনটি নতুন এবং এই রায়টিই এই আইনের প্রথম ফসল তাই এর থেকেই আগামীর জন্য আরো উর্বর ও যোগোপযোগী ফলন বা ফসল তুলতে সহায়তা করবে। আমাদের এখন আইনের সংশোধন, সংযোজন বা বিয়োজন করা খুবই সহজে পরিণত হয়েছে। কারণ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সমর্থনযোগানকারী আমাদের রয়েছে তাই যেখানেই দুর্বলতা বা অসামঞ্জস্য এমনকি কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থান রয়েছে সেখানে নমনীয় বা আরো কঠোর করার ব্যবস্থা এখন সচল এবং সরকারের সক্ষমতায় রয়েছে। আমরা আশা করব অন্যান্য যে মামলাগুলো রয়েছে সেইক্ষেত্রেও এমন দৃষ্টান্ত বহমান রাখা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সরকারের এবং বিচারালয়ের আন্তরিকতার কোন কমতি বা ঘাটতি আমরা দেখছি না বরং এর গভীর আন্তরিকতা এবং বাস্তবায়নের দৃঢ়তা ও বিচক্ষনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বিচারের ক্ষেত্রে আরো কি কি দিক বিবেচনায় নিলে আসামী এবং বিচার প্রার্থী উভয়েই সন্তুষ্টি এমনকি রায়কে সাধুবাদ জানাতে উচ্চসিত হবে সেই দিকটি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানাচ্ছি। বিচারের আগে কারাঅভ্যন্তরীন থাকার ক্ষেত্রেও আইন ও রীতি নীতির পরিবর্তন ক্ষেত্র অনুযায়ী করা আবশ্যক। তাই এই বিষয়টিও বিবেচনায় রেখে মাননীয় মন্ত্রণালয়ের কর্ণধারগণের কাছে আরজি জানাচ্ছি। একটি পরিবার ধ্বংস নয় বরং একটি পরিবার রক্ষায় মনোনিবেশ করাই আমাদের করণীয় হওয়া উচিত। সর্বোপরি বিচারালয়ের প্রতি আস্থা ফিরে আসার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের ক্ষমতায়নের ফলে এবং আবদুল মতিন খসরু সাহেবের উত্থাপিত ইনডেমেনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মাধ্যমে। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজ সফল ও ফসপ্রসুতার দ্বারপ্রান্তে কড়া নাড়ছে ন্যায় বিচারের বানী। বিচারহীন অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে বিচারালয়ের নিরপেক্ষতা। এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুরদৃষ্টি এবং বিচক্ষণ আইনমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায়। তবে আগামী দিনে আরো নতুন দৃষ্টান্তের অবলোকন করার আশা জাগ্রত রেখে এই আইন-বিচার এবং উকিল মোক্তার, কোট-কাচারির পরিচ্ছন্নতা ও স্বচ্ছতা এমনকি জবাবদিহীতা কামনা করছি। এখনও যে সকল নৈরাজ্য বা অন্ধকার রয়েছে এমনকি কসাইসুলভ আচরণ প্রত্যক্ষ করা যায় তার অবসানকল্পে সরকারের হস্তক্ষেপ এমনকি বিচারকের স্বজাগ দৃষ্টি অত্যাবর্শ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোর্ট এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দুবৃত্তায়নের দৌরাত্তে বিচার প্রার্থীগণ জর্জরীত। তাই এই জীর্ণদশা থেকে মুক্তকরণের নিমিত্তে সরকারকে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করে কিছু একটা করা সময়ের দাবি। যুগের পরিবর্তনের সাথে ঐ পুরোনো বিচার ব্যবস্থা ও কোর্টের দৌরাত্ত বন্ধে সরকার, জনগণ এবং বিচারক এই তিনের সম্মিলন এক হওয়া জরুরী। তিনে মিলে এক হলে সবই সম্ভব এবং ফিরে আসবে ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এবং বৃহৎকারে জতির মজ্জ্বাগত ইতিবাচক রূপান্তর। আরো আশাবাদি যে, এই চলমান প্রক্রিয়ায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক আইন। তাই ঐ অইনদ্বয়গুলোকেও স্বচ্ছতার সঙ্গে জবাবদিহীতার আবরণে প্রয়োগ এবং এর ফল উৎপাদনে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। তাই আমরা সকল ক্ষেত্রেই বিচারালয়ের দৃষ্টান্তকে সামনে এনে শান্তি ও স্থীতিশীলতার নিমিত্তে নুতন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে আইনের সংস্কার এবং বিচক্ষণতার তাৎক্ষণিক বহি:প্রকাশ প্রয়োজন।
পুলিশ রিপোর্ট নিয়ে বলার ক্ষেত্রে এখন কি বলব তা মুশকিলে আছানের মত হয়েছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ রিপোর্ট সঠিক হয়না বরং অর্থ ও ক্ষমতার আদলে তৈরী হয়। তবে এই ক্ষেত্রে পিবিআই এবং টেরোরিষ্ট ইউনিটের তদন্ত যথেষ্ট স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে এবং জনগণ এর সঙ্গে একমতও পোষণ করেছে। তবে অন্যান্য যে সকল তদন্দ সংস্থা রয়েছে সেখানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহীতার অনেক অভাব রয়েছে। আর এই রিপোর্টের আলোকেই বিচার কার্য সম্পাদন হয় এবং নিরিহী অনেকে এর ফাঁদে পড়ে জীবন বিপন্ন হয় এবং পরিবার ধ্বংস হয়ে নি:শেষ হয়ে যায়। তাই এই ক্ষেত্রগুলোতে নজর দেয়া সময়ের ও যুগের অন্যতম দাবী। আমি সুযোগ পেলে সহায়তা করার মনোভাব জাগ্রত রেখে সামনে এগিয়ে নেয়াই ভুমিকা রাখব। আমার লিখা সমালোচনা নয় বরং প্রতিবন্ধকতা এমনকি অসচ্ছতার মূলে আঘার করার পথ দেখানো বা সচেতনার উদ্ধালোকে পৌঁছে দেয়া। তবে এই কাজে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে এগিয়ে যেতে ও নিতে সহায়তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রত্যয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.