স্বপ্নের পদ্মাসেতুর ২.৫৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আরও ২৪টি স্প্যান বসিয়ে ৩.৬ কিলোমিটার দৃশ্যমান হলে শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে গত মঙ্গলবার বসানো হয় পদ্মা সেতুর ১৭তম স্প্যান ফোর-ডি। এতে দৃশ্যমান হলো সেতুর প্রায় ২৫৫০ মিটার।
স্বপ্নের পদ্মাসেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারে স্থায়ীভাবে ১৭তম স্প্যান ‘৪-ডি’ বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ২ হাজার ৫৫০ মিটার (২.৫৫ কিলোমিটার)। ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ২৪টি স্প্যান বসিয়ে ৩.৬ কিলোমিটার দৃশ্যমান হলে। ১৬তম স্প্যান বসানোর মাত্র সাত দিনের মাথায় ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারের ‘৪-ই’ স্প্যানের সঙ্গে বসেছে এ স্প্যানটি। গত মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে স্প্যান বসানো শেষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে এ স্প্যানটি পিলারের ওপর বসাতে। কুরুলিয়া চরের পদ্মার পাড়ে চারদিকে শরতের শুভ্র কাশফুল জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আর কাশবনের পাশেই চলছে স্প্যান বসানোর কার্যক্রম। সেতু নির্মাণে প্রকৌশলীদের ব্যস্ততায়ঘেরা প্রকল্প এলাকা। কাজের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে চেষ্টার কমতি নেই দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের। সকালে সূর্যের দেখা মিললেও কুয়াশার উপস্থিতি সরতে সময় লেগেছে। তবে স্প্যান বসাতে উপযুক্ত সময়ের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি প্রকৌশলীদের। গত মঙ্গলবার সকালে শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন বহন করে এনে ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারের ওপর বসিয়ে দেয়। এর আগে সকাল ১০টায় স্প্যানবহনকারী ভাসমান ক্রেনটি রওনা করে ১০টা ৩৭ মিনিটে নির্ধারিত পিলারের সামনে এসে পৌঁছায়। প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, নোঙর সমস্যার কারণে স্প্যানটি বসাতে একটু সময় লাগে। কুয়াশার কারণে নির্দিষ্ট সিডিউলের কিছুটা পরেই কাজ শুরু করেন প্রকৌশলীরা। নোঙর করে পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিং এর ওপর। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় থাকায় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে হওয়ায় প্রকৌশলীরা অল্প সময়ের মধ্যেই স্প্যান বসাতে সক্ষম হন। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ওয়েট টেস্ট, ট্রায়াল লোড টেস্ট, বেজ পেস্নট, পাইল পজিশন, মেজারমেন্টসহ আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়। জানা যায়, পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে। স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর। স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রম্নয়ারি। স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল। স্প্যান ‘৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ মে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের উপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্স্ন্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্স্ন্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। পদ্মাসেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.