কসবায় অনিয়ম, দূর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে এক মাদ্রাসা সুপার গ্রেপ্তার

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের কাঠেরপুল এলাকায় অবস্থিত আজগর আলী দাখিল মাদ্রসার সুপার মো. আবদুর রহমান সরকার মানিকের বিরুদ্ধে দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার (০২ ডিসেম্বর) বিকেলে তাকে মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কমিটি বিহীন চালাচ্ছিলো এ প্রতিষ্ঠানটি। সভাপতির সই জাল করে টাকা উত্তোলন, নারী কেলেঙ্কারীসহ অবৈধ কাজের সাথে জড়িত সহ মাদ্রাসার ৫০টি গাছ বিক্রি করে টাকা আতœসাতেরও অভিযোগও রয়েছে এই সুপারের বিরুদ্ধে। তার এসকল অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ও এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দেন। গত সোমবার বিকেলে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী অনিয়ম এবং কেলেঙ্কারীর কারনে তাকে বহিস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে তাকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাউছার ভূইয়া, কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাফর আহাম্মদ, কসবা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনার সত্যতা পান। পরে ওই সুপারকে গ্রেপ্তার করে কসবা থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন। উল্লেখ্য ওই সুপারের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেংকারীর অভিযোগও রয়েছে। কয়েক বছর আগে তাকে এক নারীর সাথে অনৈতিক কাজে আটক করে স্থানীয় লোকজন। উপজেলা প্রশাসন, লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে কসবা উপজেলার কুটি আজগর আলী দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন বিএনপি সাংসদ মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ। ১৯৯৫ সালে মাদ্রাসাটি এমপিও ভূক্ত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সুপার হিসাবে সুপার হিসেবে নিয়োগ পান কুটি গ্রামের মো.আবদুর রহমান সরকার ওরফে মানিক। শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসছে তার বিরুদ্ধে। মাদ্রাসায় এবছর ৫৫জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছেন। পরীক্ষার ফরম পূরণ থেকেই অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ১ হাজার ৮শ টাকার নেয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চার হাজারেরও বেশী টাকা আদায় করেছেন। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে সুপারকে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের চাপ দিয়ে আসছিলো।
মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সাড়ে চারহাজার, তিন হাজার নয়শত পঞ্চাশ আবার কারো কারো কাছ থেকে বেশীও নিয়েছেন। অভিভাবক নিলুফা আক্তার বলেন ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকার নেয়ার বিষয়টি জানানোর কারনে মাদ্রাসার সুপার তাদেরকে ভয় দেখিয়ে বলেন, আপনারা চেয়ারম্যান সাহেবকে গিয়ে বলবেন, আমরা বোর্ড নির্ধারিত ফি দিয়েই ফরম পূরণ করেছি। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির সাবেক সাংসদ সদস্য মিয়া আবদুল্লা ওয়াজেদ বলেন, কমিটিতে আমি সভাপতি আছি কি নাই তা বলতে পারিনা। সুপারই সবকিছু করে। আমার কাছ থেকে ১০ বছর ধরে কোন সই স্বাক্ষরও নেয় না।
কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল কাউছার ভূইয়া বলেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়, তাঁর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী, ১০ বছর কমিটি না করে সাবেক সভাপতির সই জাল করে টাকা আতœসাৎ, সরকারি ৫০টি গাছ কেটে বিক্রি করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে শতশত মানুষ প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি দুদকের ১০৬ নম্বরে অভিযোগ করা হয়েছে।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বলেন, মাদ্রাসার সুপার দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন। এলাকার লোকজন অভিযোগ পাওয়ায় তাকে ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত টাকা ফেরৎ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও সে ফেরত দেয়নি। এ ছাড়াও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কমিটি না করে বিষয়টি গোপন রেখেছেন। সরকারি গাছ কেটে ফেলেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.