ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু আর নেই

প্রশান্তি ডেক্স ॥ রওশন আরা বাচ্চু বায়ান্নর উত্তাল একুশে ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় মেয়েদের যে মিছিল পুলিশের ব্যারিকেডে ভেঙেছিল, সেই মিছিলের মুখ রওশন আরা বাচ্চু আর নেই। গত মঙ্গলবার ভোর রাতে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান তার মেয়ে তাহমিদা বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘মা বেশ কদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।’ ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এর আগে অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরে। সেখানে গোসল শেষ করে বাংলা একাডেমিতে নিয়ে আসা হয়। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রওশন আরা বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক ভাষা সংগ্রামী রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, লোক গবেষক শামসুজ্জামান খান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুলস্নাহ সিরাজী, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, প্রাবন্ধিক মোনায়েম সরকার প্রমুখ। তাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলা একাডেমি ও লেখিকা সংঘ।
বাংলা একাডেমি থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে তার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার পশ্চিম মণিপুরী পাড়ার বাসায়। বাদ মাগরিব সেখানকার বায়তুল আমান জামে মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর রাতে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সিলেটের কুলাউড়া থানার উছলাপাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে। সেখানে গত বুধবার সকালে তার দাফন সম্পন্ন হবে। মৌলভীবাজার জেলা কুলাউড়া থানার উছলাপাড়া গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রওশন আরা বাচ্চুর জন্ম। পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স ও পরে ইতিহাসে এমএ পাস করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতেই রওশন আরা গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টে যোগ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। সলিমুলস্নাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে যে ছাত্রনেতারা ১৪৪ ধারা ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। সেদিন তার নেতৃত্বেই ইডেন মহিলা কলেজ এবং বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমাবেশস্থলে সমবেত হন। সমাবেশস্থলের বাইরে তখন পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে। আরও কয়েকজন ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রওশন আরা বাচ্চু সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন এবং দলের অন্যদের নিয়ে বেরিয়ে যান। পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করলে আহত হন দুজন, তাদের একজন রওশন আরা। ঢাকার আনন্দময়ী স্কুল, লিটল অ্যাঞ্জেলস, আজিমপুর গার্লস স্কুল, নজরুল একাডেমি, কাকলি হাইস্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ দিন। সবশেষে ২০০০ সালে বিএড কলেজের অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান সংগ্রামী এই নারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.