বাইরে পরিপাটি, ভেতরে নোংরা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা জেলা সদর হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। তবে হাসপাতালটি বাইরে থেকে দেখতে যতটা পরিপাটি মনে হয় এর ভেতরটা ঠিক ততটাই নোংরা। অপরিষ্কার মেঝে ও টয়লেট নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। এখানে সেবা নিতে এসে দুর্ভোগের শিকার হন রোগী ও তাদের স্বজনরা। যদিও স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থীদের চাপকেই দুর্ভোগের মূল কারণ হিসেবে দেখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কুমারশীল মোড়ে ১ একর ৭০ শতাংশ জায়গা নিয়ে ১৯৯২ সালে জেলা সদর হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটি ২০১২ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ধীরে ধীরে সম্প্রসারণ করা হয় হাসপাতাল ভবনও। বর্তমানে হাসপাতালে সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, ডাইরিয়া, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজিসহ নয়টি ওয়ার্ড সচল রয়েছে। তবে নানা সমস্যার কারণে সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটিতে টিকিট কাউন্টার রয়েছে মাত্র দুইটি। এর ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতেই কাহিল হয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা। আর রোগীর তুলনায় শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে মেঝেতে চাটাই পেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। তবে রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয় হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ। অপরিচ্ছন্ন টয়লেট ও মেঝের সামনে পড়ে থাকা আবর্জনার উৎকট গন্ধে নাজেহাল রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মীরা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আরিফ মিয়া নামে এক রোগী জানান, পেটে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার বেডটি টয়লেটের পাশে হওয়ায় দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর তিনি নাক চেপে ধরে রাখেন। তাছাড়া ওয়ার্ডের মেঝে স্যাঁতসেঁতে এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই। কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। এক রোগীর স্বজন দুলাল মিয়া জানান, মাস খানেক আগে তার বড় মেয়ে কল্পনার বুকে ফোঁড়া সমস্যার কারণে অপারেশন করিয়েছিলেন। কিন্তু পুরোপুরি ভালো না হওয়ার কারণে আবারও হাসপাতালে আসতে হয়েছে। তবে হাসপাতালের ভেতরের পরিবশে খুবই নোংরা। হাসপাতালের মেঝে এবং টয়লেটগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকায় দুর্গন্ধ আসে। এতে রোগীর সমস্যা হয়। আরেক রোগীর স্বজন হনুফা বেগম বলেন, দুইদিন ধরে হসপাতালে আছি। ওয়ার্ডের ভেতরটা তেমন পরিষ্কার না। টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এ অবস্থায় আমরা সুস্থ্য মানুষরাই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি। হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন খোদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেনও। এর জন্য অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থীকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দিন-রাত মিলিয়ে একজন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে অন্তত ২৫ জন হাসপাতালে আসেন। এতে করে টয়লেটগুলোতে অনেক বেশি চাপ পড়ে। হাসপাতাল ভবন সম্প্রসারিত হলেও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা একই রয়ে গেছে। এটি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগে কথা বলার পর তারা জানিয়েছে হাসপাতালের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ১৫০ শয্যা অনুযায়ী। এখন এটা বাড়াতে গেলে পুরো ভবন সংস্কার করতে হবে। ডা. মো. শওকত হোসেন বলেন, হসপাতালে অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভেতেরর পরিবেশ ৮০ শতাংশ ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আমাদের কর্মচারীরা প্রায়ই রোগীর স্বজনদের হাতে লাঞ্ছিত হন। তারপরও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.