ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষমা করবে নাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এখন থেকেই কাজ শুরু করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার স্পেনের ফেরিয়া দা মাদ্রিদে (আইএফইএমএ) ‘অ্যাকশন ফর সারভাইভাল: ভালনারেবল নেশনস কপ-২৫ লিডার্স সামিট’ এ দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সিভিএফ এবং ভি -২০ দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিমুখী সহযোগিতার অসাধারণ উদাহরণ এবং আমরা বর্তমান সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।”তিনি বলেন, “আমরা যদি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে তারা ক্ষমা করবে না। প্রতি মুহূর্তে আমাদের নিষ্ক্রিয়তা পৃথিবীর প্রতিটি জীবিত মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখনই সময় কাজ করার।” শেখ হাসিনা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য একটি কঠিন বাস্তবতা। এটি এখন মানুষের জীবন ও পরিবেশ, বাস্তুশাস্ত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। ১৯৯২ সালে আর্থ সামিটের পর থেকে আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাসে খুব বেশি অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি, এর নির্গমণ এখনও বেড়ে চলেছে। এই প্রবণতা পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। “ঝুঁকিতে থাকা আমাদের মতো দেশগুলো, এই পরিস্থিতি মোকাবেলা সীমিত ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। ক্ষয়ক্ষতির জন্য তুচ্ছ বা কোনো অবদান না রাখলেও ক্ষতির ধাক্কাটা আমাদেরকেই সামলাতে হচ্ছে। এটি একটি অবিচার এবং অবশ্যই বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিষয়টি স্বীকার করতে হবে।”তিনি বলেন, “২০০৯ সালের নভেম্বরে মালেতে ফোরামের প্রথম সভার পর বৈশ্বিক জলবায়ু দৃশ্যপটের যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসির প্রক্রিয়ার অগ্রগতি খুব ধীর এবং অপর্যাপ্ত। বিশেষত আমাদের মতো দুর্বল দেশগুলোতে জাতীয়ভাবে গ্রহণ করা অভিযোজনমূলক উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য খুব কমই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। “বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠন করা তহবিলগুলোতে পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব রয়েছে। সরাসরি এবং সহজে তহবিল পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত এবং মানদন্ড রয়েছে, বেশিরভাগই সেসব সক্ষম দেশগুলোর পক্ষেই যায়।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা আমাদের মতো দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও ধারণার চেয়েও কম সহায়তা পাচ্ছি। এক্ষেত্রে একটি নতুন সিভিএফ এবং ভি-২০ ট্রাস্ট তহবিল গঠন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ সম্ভব হলে সেটি হবে বড় সাফল্য।”মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। “মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নানাভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে পরিবেশ বিপর‌্যয়ের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাও আমাদের হয়েছে। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, এর প্রভাব এবং মোকাবেলার সক্ষমতা অভাবের ওপর ভিত্তি করে দুর্বল দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিয়মিত সমর্থন এবং আলাদাভাবে উন্নয়ন তহবিল রাখতে চাই।“জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশি দায়ী দেশগুলোর ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা দেখি আমরা। এতে বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আমাদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সুতরাং এই উদাসীনতার জবাব চাইতে আমাদের দ্বিধা করা উচিত নয়।” “ব্যাপক হারে অভিবাসনেও জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত। সংঘাতের চেয়ে আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের কারণে এরই মধ্যে অনেক মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো ধীরগতির প্রভাবের দিকেও বিশ্বের নজর কম। এই ভারসাম্যহীনতা ঠিক করতে আমাদের কাজ করা উচিত। তিনি বলেন, “অভিবাসনের ক্ষেত্রে আমরা একটি কার্যকর অভিযোজন কৌশলের প্রতি আমারা গুরুত্ব দেই, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠির অভিযোজন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিতে চাই। স্থান হারানো মানুষের পুনর্বাসন এবং সুরক্ষার প্রতিও বিশ্বের নজর দেওয়া উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব মানুষ স্থান হারিয়েছে, তাদেরকে সহায়তা দিতে একটি কার্যকর কর্মকৌশল তৈরিতে আমাদের এখনই আলোচনা শুরু করা দরকার।” জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের ২৫তম বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে গত রোববার স্পেন পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.