কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিকের কারখানায় আগুন, দগ্ধ ৩০

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের হিজলতলা এলাকায় ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’-এর কারখানায় আগুন লেগেছে। ঘটনাস্থলে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় একজনের লাশ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধারকৃত লাশটি আগুনে পুড়ে বিকৃত হওয়ায় লাশ দেখে চেনা যাচ্ছে না হতভাগা মানুষটি পুরুষ না মহিলা। গত বুধবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এই অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কেরানীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের চারটি ইউনিট কাজ করছে। তারা ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট পর বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতদের মধ্যে কারখানার ম্যানেজার নজরুল ইসলামও রয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি। আগুনে পুড়ে কারখানার সব মেশিনারিজ ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে কারখানার মালিক পক্ষের কাউকে না পাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। একজনের লাশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রামানন্দ সরকার। তবে নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। উদ্ধারকারী মো: জাহিদ জানান, আগুনে দগ্ধ হয়ে ২৫ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদেও মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা কেউ বলতে পারেনি। হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছে অগ্নিদগ্ধরা নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দগ্ধ শ্রমিকরা। কারো পুড়েছে দুই হাত, কারো পুড়েছে দুই পা, কারো বুকে দগ্ধ হয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দগ্ধ ৩০ জন শ্রমিককে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। এ সময় যন্ত্রণায় তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, কারখানায় অগ্নিদগ্ধদের বেশির ভাগই গুরুতর। অনেকেরই শরীরে ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আহতরা হলেনÑ ফয়সাল (২৯), ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর (৫২)। তার মেয়ে জামাই কোরবান, শফিকুল (২৭), বসির (২০), ফয়সাল (৩৫), দুর্জয় সরকার (১৭), সুমন ইসলাম (২৫), মেহেদী (২০), আসাদ (২৩), মো: সিরাজ (৫০), সাজিদ (২৯), জিনারুল হোসেন (৩২), সাখাওয়াত (৩০), আবু সাইদ (১৬), সোয়ান (২২), মো: বাবুল (২৫), জাকির হোসেন মাতুব্বর (২২), মো: আলম (২২), তার ভাই আবদুর রাজ্জাক (৪২)। আহতদের মধ্যে ১৪ জনের অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়। আগুন লাগা কারখানাটির অনুমোদন ছিল না : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী কেরানীগঞ্জে আগুন লাগা প্লাস্টিক কারখানাটির অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানান, সেখানে আরও অননুমোদিত কারখানা রয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৩০ জন দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছে। কারখানার ভেতর থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের দেখতে এসে তিনি এ কথা বলেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তল্লাশি করে একজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। তিনি বলেন, আহতরা কেউ শঙ্কা মুক্ত নন। তাদের সবার ৩০ শতাংশের বেশি শরীর দগ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা অনেকবার বলেছি, শিল্পকারখানা হবে নির্দিষ্ট জোনে। স্থানীয় সরকার ও পরিবেশ অধিদফতরকে আমি অনেকবার বলেছি। কিন্তু, কারখানাগুলো সরানো যায়নি। কারখানাটিতে ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক কাজ করত। এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা। অনুমোদনহীনভাবে কারখানা গড়ে তোলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এ সময় তিনি দগ্ধদের সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.