প্রশান্তি ডেক্স ॥ হঠাৎ করেই পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটার একটি ফ্লাইটে তার ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর যথাক্রমে আমাদের বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান রয়েছে। ওইসময় তার দেশে থাকা জরুরি। সেজন্য ভারত সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’ তিনি বলেন, জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আগামী শনিবার মাদ্রিদ যাবেন। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকও দেশে নেই। তিনি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানির কারণে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থান করছেন। এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগে অংশ নিতে ভারত যাওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। এ সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করারও কথা ছিল তার। তবে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর বাতিল করায় ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মন্ত্রণালয়ের আমেরিকান উইংয়ের মহাপরিচালক ফেরদৌসী শাহরিয়ার। মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শে ভারত সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা বলছেন, ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল সংসদে পাস হওয়ায় এক প্রকার মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের আসামে সংঘাত শুরু হওয়ার কারণে সফরটির জন্য অনুকূলীয় সময় এখন নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে। ড. মোমেনের এই সফর বাতিল নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমও বলছে, সফরের আগের দিন রাতে ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসকে কেন্দ্র করে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়ায় এই সফর বাতিল হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল নিয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি উল্লেখ করে ভারতের গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইস্যুতে বেশ কয়েকদিন ধরেই ঢাকা অস্বস্তি প্রকাশ করছিল।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পূর্বনির্ধারিত তিনদিনের ভারত সফর বাতিল করেছেন। এর আগে, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না থামার কারণে তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি এনেছেন।’ তার এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এ ব্যাপারে যে কথা উঠেছে, সেগুলো সত্য না। আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্মীয় নির্যাতন হয় না। আমাদের দেশে ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে অন্য ধর্মের কেউ নির্যাতিত হয় না। সাম্প্রতিককালে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক লোক দেশে ফিরে আসছে, তার কারণ হচ্ছে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি এবং এখানে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।’ এছাড়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি আইনে পরিণত হলে ধর্মনিরপেক্ষ দেশের অবস্থান থেকে ভারতের পদস্খলন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।