শীতজনিত রোগে সারাদেশে দু’মাসে ৪৯ জনের মৃত্যু

প্রশাুন্তি ডেক্স্। রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে মায়ের কোলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু। রাজধানীসহ সারাদেশে শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। গত ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৪ দিনে (প্রায় দুই মাসে) শীতজনিত বিভিন্ন রোগে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সময় সারাদেশের হাসপাতালে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে মোট দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬৫৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানিয়েছেন, এআরআই (একিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা) ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি নিয়ে হাসপাতালে ভিড় করছেন মানুষ। যাদের মধ্যে শিশু-নারী-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সব বয়সের মানুষই রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এআরইউতে ৯২৯ জন ও ডায়রিয়ায় এক হাজার ৯৫৮ জনসহ মোট দুই হাজার ৮৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জানান, গত দুই মাসেরও কম সময় রাজধানীসহ সারাদেশে মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এআরআইতে ৪১ হাজার ৬৪৫ জন, ডায়রিয়ায় এক লাখ চার হাজার ৭৫৭ জন এবং অন্যান্য রোগে এক লাখ ১২ হাজার ২৫৫ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে এআরআইতে ১৬ জন, ডায়রিয়ায় চারজন এবং অন্যান্য রোগে ২৯ জনের মৃত্যু হয়। অন্যান্য রোগের মধ্যে জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। দিনে ৬০০ শিশু আইসিডিডিআরবিতে: এদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ শিশু রাজধানীতে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) তে ভর্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ২৫ জন শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে। গত বুধবার আইসিডিডিআরবিতে সরেজমিন দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাই বেশি। কল্যাণপুরের বাসিন্দা আসমা আক্তার তার সাত মাসের শিশু সন্তানকে আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় আমার সন্তানের অতিমাত্রায় ডায়রিয়া দেখা দেয়। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। গত তিন দিনের চিকিৎসায় বর্তমানে আগের চেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে। তার সন্তানকে আরও তিন-চার দিন ভর্তি রাখতে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। পাশের বেডে রীনা বেগম তার পাঁচ মাসের সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। দুই-তিন দিন ধরে তার সন্তানের পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। গতকাল থেকে তা বারবার হতে থাকে। এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় গতকাল মাঝরাতে আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি করান। বর্তমানে তার শরীরে স্যালাইন দিয়ে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
গত চারদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে চার বছরের শিশু তাহসীন। তার মা নিপা জানান, ২১ ডিসেম্বর থেকেই পানির মতো পাতলা পায়খানা হতে থাকে। অবস্থার আরও অবনতি হলে গত ২২ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাহসীনকে। টানা তিনটি স্যালাইন দিতে হয় তাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবিতে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ৩০০- ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫৫০-৬০০ জন ডায়ারিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই শিশু। শৈত্যপ্রবাহে শীত বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবি’র চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বুধবার বলেন, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের ডায়রিয়া বাড়ছে। শীতের কারণে শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া রোগ দেখা দিচ্ছে। এ কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘৫৫ শতাংশই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হচ্ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে দুই বছরের কম বয়সীরা আরও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই শিশু কি খাচ্ছে, মুখে আঙুল দিচ্ছে কিনা, সেটি খেয়াল রাখতে আর বাইরে থেকে কেনা খাবার না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। আইসিডিডিআরবি’র আরেক চিকিৎসক প্রদীপ বলছিলেন, রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৫-৬ দিনে এর সংক্রমণ শরীরে বিচরণ করে। এ কারণে ৫-৬ দিন শিশুদের চিকিৎসা দিতে হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ৫৫০-৬০০ জন রোগী ভর্তি হলেও তা স্বাভাবিক, শীত কমে গেলে রোগীর সংখ্যা কমে যাবে বলে মনে করি। তবে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন ৭৫০-৮০০ হলে তা মহামারি আকার ধারণ করবে। এই চিকিৎসক বলেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মুখের মধ্য দিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে যায়। বড়দের ক্ষেত্রে রোটা খুব একটা দুর্বল করতে পারে না। তবে শিশুরা যথাসময় চিকিৎসা না পেলে মারাও যেতে পারে। এ কারণে ডায়রিয়া দেখা দিলে শিশুদের বেশি বেশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এটি বেড়ে গেলে দ্রম্নত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সবশেষ খবর পর্যন্ত এ বছর কোনো হাসপাতাল থেকেই ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেন এই চিকিৎসক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.