অপারেশনে রোগীর মৃত্যু, ১০ হাজার টাকায় লাশ দাফনের প্রস্তাব

প্রশান্তি ডেক্স ॥ পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে চিকিৎসা অবহেলায় রুপালী খাতুন (৩০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। মৃত রুপালী খাতুন ভাঙ্গুড়া উপজেলার পাটুলিপাড়া গ্রামের শাহাদত হোসেনের স্ত্রী। দীর্ঘ আট বছর ধরে ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর এবার চিকিৎসা অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু হলো। গত বছরের জানুয়ারি মাসে হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে ক্লিনিকের চিকিৎসক মাসুদ করিম পালিয়ে যান। এই ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় একই ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তোলপাড় চলছে। রুপালী খাতুনের স্বজনরা জানান, গত রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রুপালীকে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে রুপালীর সিজারিয়ান অপারেশন করেন ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক হালিমা খানম। এ সময় পুত্রসন্তান জন্ম দেন রুপালী। অপারেশনের কিছুক্ষণ পরই রুপালীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়। এ নিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের বাগবিতন্ডা হয়। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রুপালীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলে। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রুপালীকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রুপালীর পরিবারের অভিযোগ, রুপালীর সিজারিয়ান অপারেশন করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এজন্য অপারেশনের পর চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রুপালী খাতুনের পরিবারকে ম্যানেজ করে। আপস-মীমাংসার জন্য রাতভর চলে বৈঠক। এ নিয়ে রুপালীর পরিবার মামলা করতে চাইলে মরদেহ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা দিতে চায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। মরদেহ দাফন শেষে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হবে বলে রোগীর স্বজনদের জানায় তারা।
রুপালীর স্বামী শাহাদত হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সিজারিয়ান অপারেশনের পর কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসকরা ভালোভাবে চিকিৎসা দিলে আমার স্ত্রী বেঁচে যেত। সরকারি ডাক্তার হয়েও আমার স্ত্রীকে ভালোভাবে চিকিৎসা দেননি। আমার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। এদের নিয়ে আমি এখন কী করব। মা-হারা সন্তানদের কীভাবে মানুষ করব আমি। ওরা ১০ হাজার টাকা নিয়ে মরদেহ দাফন করতে বলেছে। কিন্তু আমি টাকা নেব না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ারের পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই প্রসূতির অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছিল। তবে ওই প্রসূতির উচ্চ রক্তচাপ ছিল। এজন্য অপারেশনের পর তার অবস্থার অবনতি হয়ে মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও রুপালীর অপারেশনকারী চিকিৎসক হালিমা খানম বলেন, সফলভাবে সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হৃদরোগজনিত কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে অন্যের নাম এবং বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে চিকিৎসক সেজে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ হয় মাসুদ করিম নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি সংবাদ প্রকাশ হলে মাসুদ করিম পালিয়ে যান। আট বছর ধরে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও আবাসিক চিকিসক হিসেবে কাজ করেছেন মাসুদ করিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.