নববর্ষ : পটকা আতশবাজিতে প্রকম্পিত ঢাকা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ঢাকার আকাশে আতশবাজি ‘ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম-আকাশে হাজার হাজার আগুন ভেসে বেড়াচ্ছে। ফানুসের আগুন’। ফেসবুকে এমনটি লিখেছেন একজন। কিন্তু শুধু আকাশে ফানুসের আগুন, নতুন বছরের প্রথম প্রহরে রাত ঠিক ১২টায় ঢাকার আকাশ কেঁপে উঠেছে পটকা আর আতশবাজির শব্দে। এলাকায় এলাকায় শোনা গেছে হাই ভলিউম সাউন্ডবক্সে ভেসে আসা গান কিংবা স্টেজ পারফরমেন্স। অথচ খোলা জায়গায় জমায়েতের পাশাপাশি পটকা আতশবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল ঢাকার পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার নানা এলাকায় যাতায়াত বন্ধ বা সীমিত করে দেয় পুলিশ। গুলশান বনানীতে প্রবেশপথগুলোতে তলস্নাশির কারণে অফিসফেরত হাজার হাজার মানুষকে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে নগরবাসীর জমায়েত ঠেকাতে ঢাকার হাতিরঝিল রাত ৮টায় বন্ধ করে দিলে চরম দুর্ভোগে পড়েন আশপাশের মগবাজার, মধুবাগ, রামপুরা, বনশ্রী ও বাড্ডার মানুষজন। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চার দিক থেকে বন্ধ করে টিএসসি এলাকায় অসংখ্য পুলিশ অবস্থান নিলেও তা শিক্ষার্থীদের আটকে রাখতে পারেনি। বাড্ডায় ফানুস আতশবাজি ছাড়াও লেজার লাইট শোও দেখা যায়। এমনকি মিন্টো রোড এলাকায় মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর এলাকাতেও সরকারি কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারগুলো ছাড়াও অফিসার্স ক্লাব থেকেও ভেসে এসেছে উচ্চৈঃস্বরে গানবাজনার শব্দ। ঘরোয়া আয়োজনের দিকেও এবার নজর ছিল পুলিশের। বলা হয়েছিল ছাদে আয়োজন না করতে। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা কার্যত শুনেনি কেউ। বরং কেক কেটে, ফানুস উড়িয়ে কিংবা গানবাজনার মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘরে। সবমিলিয়ে রাত ১২টায় নতুন বছরের আগমনের মুহূর্তে উৎসব উদযাপনে প্রকম্পিত হয়েছে ঢাকা শহর। সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলেন, নিয়ন্ত্রিত থাকলেও মানুষ যে আনন্দ করেনি তা কিন্তু নয়। ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দেখেছি বিধি-নিষেধ কিন্তু মেনেছে সবাই। আবার আনন্দটাও সবাই করেছে নির্বিঘ্নে।’ ‘ঘরোয়া আয়োজনে অনুমতির বিষয়টা হয়তো বাড়াবাড়ি ছিল। তবে নিরাপত্তার জন্য যেসব ব্যবস্থা ছিল, তা ছিল যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। সেদিক থেকে পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে আয়োজনগুলো নির্বিঘ্নেই হয়েছে’। গণযোগাযোগের শিক্ষক শামীম রেজা বলেন, ‘নিরাপত্তা হুমকি থাকলে বা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে। কিন্তু একটা বিষয় অবশ্যই মানতে হবে যে বিধিনিষেধ দিয়ে আর যাই হোক উৎসব আয়োজনের স্পৃহাকে দমিয়ে রাখা যায় না।’ ‘উৎসব আসলে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না। হয়তো উন্মুক্ত জায়গায় করবে না, কিন্তু করবে। আর যে উৎসবকে ঘিরে কথা তার একটি বৈশ্বিক দিক আছে। এগুলোও বিবেচনায় রাখা দরকার।’ রেজা বলছেন, ‘সারা বিশ্বে যা হবে এখানে মানুষকে তার বাইরে রাখা অসম্ভব। আমি নিজেও দেখেছি গত রাতে উদযাপন করছে সবাই, উচ্চৈঃস্বরে গান বাজছে বা অন্য আরও আয়োজন ছিল অনেকের’। তিনি বলেন, এই শহরে বেশি রাস্তা নেই, এমনকি বিকল্প সড়কই নেই অনেক এলাকায় আসা-যাওয়ার। সেখানে শহরের প্রাণকেন্দ্র হাতিরঝিল, গুলশান, বনানী এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষের কথা চিন্তা না করেই। ‘অথচ অনেক শহরে এসব উদযাপনে যেন মানুষ যেতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বাস দেয়, বিনা টিকিটে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে।’ গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় সামনে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে যে, পরিকল্পনা এমন হওয়া উচিত যাতে নিরাপত্তার কারণে উৎসব বিঘ্নিত না হয়; বরং উৎসব আয়োজনকে নিরাপত্তা দেওয়া হোক, এমনটাই মনে করছেন রেজা। ‘বিধিনিষেধ সহজ করে বা আয়োজনে বাধা না দিয়ে কিভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় অন্য দেশের মতো সেটি আমাদেরও আয়ত্ত করতে হবে। কারণ নিরাপত্তার বিষয়েও কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না’। সুশৃঙ্খলভাবে নগরবাসী আনন্দ উপভোগ করেছে : পুলিশ ঢাকা মহানগর পুলিশের অনলাইন পোর্টাল ডিএমপি নিউজে পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। রাতেই বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে গুলশান-২ চত্বরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের যেসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপিত হয় প্রায় সমস্ত জায়গা আমরা ঘুরে দেখেছি। প্রতিটি স্থানেই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে নগরবাসী এই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করছেন’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে নিরাপত্তার ভেতরে থেকে আনন্দটা উপভোগ করতে পারে সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। মানুষকে তাদের স্বাভাবিক আনন্দ থেকে বিরত রাখতে আমরা হস্তক্ষেপ করছি না। খোলা স্থানে যাতে কোনো অনুষ্ঠান না করে সেই অনুরোধ করছি’। পুলিশের প্রকাশিত ওই নিউজের সঙ্গে কর্মকর্তাদের নিয়ে পুলিশ কমিশনার নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে কেক কাটছেন তেমন একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.