কসবায় বিদ্যালয়ের নলকুপের কুপ থেকে অবিরত নির্গমন হচেছ গ্যাস ॥ কাজ করছে পেট্রোবাংলার ৪ সদস্যের টেকনিক্যাল টিম

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউপি’র শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন টিউবওয়েলের কুপ থেকে দুই দিন যাবত অবিরাম বের হচেছ গ্যাস । সাথে উঠছে বালি ও পানি। গত বুধবার (৫ জানুয়ারি) থেকে বিকট শব্দে এই কুপ থেকে গ্যাস নির্গত হচেছ। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন। গ্যাস নির্গমনের ফলে গর্ত বড় হয়ে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনির্দিষ্ঠ কালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন। বিপদের আশংকায় আতংক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে কসবা থানা পুলিশ ও বিজিবি। ঢাকা পেট্রোবাংলা থেকে এসেছে ৪ সদস্যের টেকনিক্যাল টিম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। তিন দিন পর্যবেক্ষনের পর বলা যাবে এটিকে বন্ধ করা যাবে কিনা। গ্যাস নির্গমনের পাশে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ের আশে পাশে ভীড় করছে উৎসুক নারী-পুরুষ।
বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান ও শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুন ভ’ইয়া জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন টিউবওয়েলটি কাজ না করায় সরকারী ভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ববধানে গত ৪ দিন যাবত একটি টিউবওয়েল বসানোর কাজ করছিলো শ্রমিকরা । প্রায় পাঁচশত চল্লিশ ফিট বোরিং করার পর বালি এবং পানির লেয়ার পাওয়ায় ফিল্টার পাইপ লাগানোর জন্য পাইপ উপরের দিকে তুলছিলো। আনুমানিক দেড়শত ফিট উপরে তুলার পর হঠাৎ করে বিকট শব্দে গ্যাস উঠতে থাকে। সাথে উঠছে বালু ও পানি। এই অবস্থা দেখে টিউবওয়েল মিস্ত্রিরা ভয়ে দুরে সরে যায়। গ্যাসের সাথে নিচের বালু উঠে আসার কারনে দুটি ভবন এখন হুমকির মুখে। প্রচন্ড বেগে নিচ থেকে গ্যাস,বালু এবং পানি উঠার কারনে বালিতে একটি ভবন অর্ধেক বালির নিচে চলে যাচেছ। অপর ভবনটির মধ্যে হালকা কাপুনি অনুভ’ত হয় এবং গ্যাস উঠার জায়গায় গর্ত বড় হয়ে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারটি। বালি এবং পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ একাকার হয়ে গেছে। দ্রুত এ বিষয়টি নিরসন না হলে বিদ্যালয়ের প্রায় ৮শত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত এলাকাবাসী। পাশেই অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেও একটি নলকুপের পাইপ থেকে গ্যাস নির্গমন হয়। গত বুধবার রাতে পেট্রো বাংলা থেকে এসেছে ৪ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল দল। তারা পরীক্ষা করে দেখছেন এবং ঢাকায়ও স্যাম্পল পাঠাবেন পরীক্ষা করার জন্য। আরো কয়েকজন টেকনিক্যাল কর্মকর্তা আসবেন পর্যবেক্ষন করার জন্য।
ঢাকা থেকে আসা টেকনিক্যাল টিমের কথা বলতে চাইলে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সালদা গ্যাস ফিল্ডের প্লান্ট অপারেটর রেজাউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন; গভীর রাত থেকে পেট্রোবাংলা টেকনিক্যাল টিম স্যাম্পল সংগ্রহের কাজ করছেন। বিকট শব্দ এবং প্রচন্ড বেগে গ্যাস-পানি ও বালি উঠার কারনে কাজ করতে খুব বেগ পেতে হচেছ। ৭২ ঘন্টা পর্যবেক্ষনের পর বুঝা যাবে কি সিদ্ধান্ত নিবেন বাপেক্স কর্র্তৃপক্ষ। পর্যবেক্ষনের পর আমরা ভাল একটি শুভ সংবাদ পাব বলে আশা করছি।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জীবন এবং উপজেলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ। তিনি এ বিষয়টি আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি এবং জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি মহোদয়কে অবহিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি নতুন গভীর নলকুপের কুপ থেকে বুধবার সকাল থেকে দ্রুত গতিতে গ্যাস বের হচ্ছে। কোন ভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা থেকে আসা টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সকল প্রকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.