প্রশান্তি ডেক্স ॥ চেক ডিজঅনার মামলায় যুগান্তকারী রায় দিলেন সুপ্রিম কোটের আপীল বিভাগ। রায়ে বলা হয়েছে, এনআই অ্যাক্টের ৪৩ ধারা অনুযায়ী যে ‘কনসিডারেশনে’ চেক দেয়া হয়েছিল সেই ‘কনসিডারেশন’ পূরণ না হলে বা কোন ‘কনসিডারেশন’ না থাকলে চেক দাতার কোন দায়বদ্ধতা নাই।এ সংক্রান্ত এক আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল আদালত গত মঙ্গলবার (১৮ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণা করেন। আদালতে বাদী পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনসরুল হক চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার চৌধুরী মুর্শেদ কামাল টিপু। আর আসামি পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম আমিন উদ্দিন।রায়ের বিষয়টি ব্যারিস্টার চৌধুরী মুর্শেদ কামাল টিপু ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রায়ে চেক ইস্যুর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য প্রমাণ সাপেক্ষে আদেশ দেওয়া হয়েছে। যা নজির হিসেবে ডিএলআর এ স্থান পাবে।ব্যারিস্টার মুর্শেদ কামাল আরও বলেন, ২০০০ সালে এন আই অ্যাক্ট সংশোধন করা হয় যাতে পূবের আইনে ১৩৮ ধারায় সংযুক্ত “ দেনা বা দায় দায়িত্ব পরিশোধের জন্য “ শব্দগুলো কর্তন করা হয়। ফলে নতুন আইনে এতোদিন বাদী পক্ষে চেক দাতার কাছে তার পাওনা প্রমাণ করার দরকার হতোনা এবং সেই পাওনা পরিশোধের জন্যই যে চেক দিয়েছিল তা প্রমান করার দরকার ছিলনা। আপীল বিভাগের রায়ের ফলে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে কী কনসিডারেশনে চেক দাতা চেক ইস্যু করেছিল এবং সেই কনসিডারেশন ফেইল করেনাই অর্থাৎ সত্যিই বিবাদীর কাছে বাদীর পাওনা আছে।জানা গেছে, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার পয়াত হুময়ূন রশিদ চৌধুরীর ছোট ভাই, সাবেক কূটনীতিক কায়সার রশিদ চৌধুরী মৃত স্ত্রী সামছি খানমের মালিকানাধীন নর্থ গুলশানস্থ ৩০ কাটা জমি বিগত ১৯৭৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সম্পাদিত ইজারা চুক্তি মূলে আমেরিকান দূতাবাসকে ১১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়। যেহেতু ওই ইজারা চুক্তিটি নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) করা হয়নি এবং বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে মৃত সামছি খানমের উত্তরাধিকারগণ (ইমরান রশিদ চৌধুরী, পারভেজ রশিদ চৌধুরী ও জিনাত রশিদ চৌধুরী) জমিটি বিক্রয়র সিদ্ধান্ত নেন।বিষয়টি জানতে পেরে আবুল কাহের শাহিন নামের এক ব্যক্তি ইমরান রশিদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেন এবং জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য তথা ১৫০ কোটি টাকায় কিনতে আগ্রহী ক্রেতা রয়েছে এবং তিনি তা বিক্রি করে দিতে পারবেন। ইমরান রশিদ চৌধুরী ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ শাহিনের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। এই চুক্তির শর্তানুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বর্তমান বাজারমূল্যে জমিটি বিক্রি করন দেবেন এবং তার জন্য শাহিন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১৩% টাকা (দালালি) পাবেন। তখন ইমরান রশিদ চৌধুরী পোস্ট ডেইটেড ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার চারটি চেক আবুল কাহের শাহিনের নামে ইস্যু করেন। কিন্তু ৯০ দিন অতিবাহিত হওযয়র পরও শাহিন বর্তমান বাজার মূল্যে কোনো ক্রেতা যোগড় করতে ব্যর্থ হন। ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৬ আগস্ট জমিটির ইজারা গ্রহীতা আমেরিকান দূতাবাসের সাথে জমিটির মালিকগণ একটি বায়না চুক্তি সম্পাদন করেন এবং শেষ পযন্ত ২০১৩ সালের ৩ জুলাই বিক্রয় পূর্বক দলিল সম্পাদন করেন। এরপর শাহিনকে চেকগুলো ফেরত দিতে বলেন।এদিকে আবুল কাহের শাহিন ওই পোস্ট ডেইটেড চেক চারটি ফেরত না দিয়ে নিজে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার ফন্দি করতে থাকেন। একপর্যয়ে তিনি চেক চারটি নগদানের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করেন। ইতোমধ্যে ইমরান রশিদ চৌধুরী শাহিনকে দেয়া চেকগুলো সম্পর্কে ব্যাংকে ‘স্টপ পেমেন্ট ইন্সস্ট্রাকশন’ দিয়ে রাখলে সেগুলো যথারীতি ডিজঅনার হয়। তারপর শাহীন সিলেটের আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করে তার পক্ষে রায় পান।ইমরান রশিদ চৌধুরী উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট রায় প্রধানের মাধ্যমে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেন। এতে আবুল কাহের শাহিন উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ১নং আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার (১৮ফেব্রুারি) উক্ত আপিল (আপিল নং ৬৩/৬৪/৬৫/৬৬/২০১৭) খারিজ করে দিয়ে হাইকোটের রায় বহাল রাখেন।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post