প্রশংসা ও সমালোচনা

প্রশংসা ও সমালোচনা এই শব্দ দুইটি পাশাপাশি থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে এই দুইটি শব্দের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দুটি শব্দ সতিনে সতিনে লড়াই চালিয়ে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত রূপ লাভ করেছে। সমালোচনা ছাড়া প্রশংসার যেমন গুরুত্ব নেই ঠিক তেমনি প্রশংসা ছাড়া সমালোচনারও কোন গুরুত্ব নেই। আমাদের সমাজে এই দুটি শব্দকে এখন পরস্পর বিরোধী বলে আখ্যায়িত করে রেখেছে। এই দুইটি শব্দের ইতিবাচক বহুল ব্যবহার আশু প্রয়োজন। প্রশংশা করার কৃপনতা কমিয়ে আনতে হবে এবং ইতিবাচক সমালোচনার মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে। কোন ক্রমেই নেতিবাচকতায় প্রশংসা এবং সমালোচনাকে জলাঞ্জলী দেয়া যাবে না।
আমরা ইদানিং দলীয় কর্মকান্ডে এমনকি এমপি, মন্ত্রী, সাবেক এবং বর্তমানের এমনকি অফিস আদালতের, পরিবারের সর্বক্ষেত্রে নেতিবাচক সমালোচনা চলছে এমনকি ইতিবাচকতা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যারপরনায় আমরা এক আজানায় পাড়ি দিতে যাচ্ছি। এইতো সেদিন বিচারালয়ে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে ফুসে ফুলে ফেপে উঠেছে। যা দেখতে ও শুনতে বেমানান। শুধু যে বেমানান তাই কিন্ত নয় বরং ইহা একটি ক্ষতিকর দৃষ্টান্তও বটে। আমরা এই ক্ষতিকর অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে ইতিবাচকতা, সহনশীলতা, ক্ষমা, ভালবাসা জাগ্রত রাখতে হবে এবং ব্যক্তি ইগু পরিহার করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা এবং ঐক্য পুনরুদ্ধার করে শেখ হাসিনার অভিপ্রায় বাস্তবায়িত করতে হবে। নতুবা গতিশীলতা এবং গতিময়তা স্তব্ধ হয়ে যাবে। থমকে যাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি। দল এবং দলীয় আদর্শের ধারক ও বাহকদেরকে বুকে আগলে রাখতে হবে। মামলা-হামলা নয় বরং ক্ষমা ও ভালবাসায় কাছে টেনে নিয়ে আগামীর কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।
আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, মাননীয় আইনমন্ত্রী জনাব এডভোকেট আনিছুল হক সাহেব উপযুক্ত সময়ে আগুনে পানি ঢেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং দলীয় বিভেদে এক্যের ভিত্তি সুদৃঢ় করেছেন। এখানে তিনি যা করেছেন তা তাঁর বিচক্ষণতা ও দুরদর্শীতার পরিচায়ক বটে। তবে কতিপয় সমালোচকের সমালোচনা যে শুধু বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা তা কিন্তু নয় বরং রাজনীতি এবং ভাবমুর্তি দুটোই বিনষ্টের তরে। আমরা বলতে চাই যারা সমালোচনা করেছেন অথবা যারা ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন এমনকি নেতিবাচক রূড় ব্যবহার ও আচরনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন: আপনাদের বলছি; যদি আপনি ঐ সময় আইন মন্ত্রীর ভুমীকায় থাকতেন তাহলে কি করতেন? আগুনে পানি ঢেলে নিয়ন্ত্রণে আনতেন নাকি ঘি ঢেলে আগুণ আরও বেশী করে প্রজ্জ্বলিত করে রাষ্ট্রীয় স্থীতিশীলতা বিনষ্ট করতেন? যদি তা না হয় তাহলে কেন ঐ ধরনের মূর্খ্যতা প্রকাশ করে যাচ্ছেন। এতে করে আপনাদের মান-মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। মানুষ আপনাদেরকে নিন্দুক ও সমালোচক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে শুন্যে ছেড়ে দিচ্ছে। তাই নিজেদেরকে আর কোথায় নিবেন? চোরের মায়ের বড় গলায় কথা শোভা পায় না। তাই সততা এবং সাহসের সঙ্গে সকল প্রতিকুলতাকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মোকাবেলা করুন।
সমালোচকদের বলছি, সমালোচনা করুন তবে নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচক দিকনির্দেশনামূলক। যারে দেখতে নারি চলন বাকা এই ফর্মূলায় আর সামনে এগুনোর সময় নেই বরং নতুন কোন ইতিবাচক ফর্মূলা নিয়ে সামনে এগুন। আপনারা যা পারেননি তা করে দেখিয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ এবং বর্তমান স্থানীয় সভাপতিদ্বয়। এই দেখে লজ্জ্বা পাওয়া ছাড়া এমনকি হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোন বাকি আছে কি? তাই মায়াকান্না এবং মিথ্যা নিয়ে না চলে এবং বলে সত্য ও সত্যের মুখোমুখী হউন। সত্যকে নিয়ে সামনে এগুন। বাংলাদেশের রাজনীতির পট পরিবর্তন এবং শুভ ইতিবাচক ভাবমুর্তী অর্জনে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তাই শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধীতা নয় বরং ঐক্যের ভিত্তিতে দেশের উন্নয়নকে আরো গতিশীল করুন। উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হতে পারে এমন কোন কার্যক্রমে নিজেদেরকে আর জড়াবেন না। তবে এযাবৎ যা করেছেন যদি তার থেকে শিক্ষা না নেন তাহলে বোকার স্বর্গেও আপনাদের জায়গা হবে না। তাই সময়ও এখনও আছে ফিরে আসুন ইতিবাচকতায় এবং নেতিবাচকতাকে পরিহার করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
মার্চের উত্তাল দিনগুলো আমাদেরকে কি স্মরণ করিয়ে দেয়? আমরা কি ভুলে গেছি অগ্নিঝড়া মার্চের অগ্নিস্ফুলিঙ্গকে। ভুলিনাই তবে ভুলতে বসেছি মাত্র। এই মার্চেই ফুসে উঠেছিল বাংলার জনগণ। এই মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিল। ১৮ মিনিটের সেই স্বর্ণখচিত ভাষনটি আজ বাংলা এবং বাঙ্গালীকে এনে দিয়েছিল নতুন এক দেশ। এই মার্চের সেই ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তখনও সমালোচনা এবং প্রশংসা ছিল এবং দুটোই একসঙ্গে কাজ করেছে। যা ইতিবাচকতায় ভরপুর এবং ঐক্যের মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ। সেই সমালোচনায় নেই কোন ষড়যন্ত্রের লেষ তবে যারা সমালোচনা করতো তারা প্রকাশ্যে ষড়যন্ত্র করে বাংলাকে ধ্বংস করে দেয়ার সকল প্রকাশ্য কুকর্ম চালিয়েছে। যা বিশ্ব ইতিহাসে এক জঘন্য এবং ন্যাক্কারজন উপাধিতে পর্যবসীত হয়েছে।
বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ সৌহাদ্ধ্যের দেশ; বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার রূপকার এবং বাস্তবায়নকারী দেশ। এই দেশ তাঁর জন্মদাতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানেও ষড়যন্ত্র এমনকি নেতিবাচক সমালোচনা। তাই ভাবতে এবং বলতে ও দেখতে এমনকি শুনতেও ঘৃণাবোধ জাগে ঐসকল সমালোচকদের কথাকে। তবে কিছু মানুষ আবার রাজনীতির মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদেশী মেহমান আগমনে বাধাস্বরূপ হয়ে। এতো যেন আপনে মানেনা গায়ে মোড়ল সাজার ভাব। তবে যত ষড়যন্ত্রই হউক না কেন মেহমানদ্বয় আসবে এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করবে আর বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বকীয়তায় উদ্ভাসিত করবে সাম্য, ঐক্য, ভাতৃত্ব, সৌহাদ্য এবং অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। তাই যারা এর বিরোধীতায় উজ্জ্বীবিত তাদের প্রতিহতে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে আসুন।
করুনা ভাইরাস নিয়ে কোন গুজব বা সমালোচনা নয় এমনকি ভিতি ছড়ানোরও প্রয়োজন নেই। কারণ আল্লাহ আমাদেরকে ভালবাসেন এবং তিনি তাঁর ভালবাসা রক্ষা করবেন এমনকি সবাইকে ঐ বালাই থেকে মুক্ত রাখবেন। এতে ভয়ের কোন কারণও অবশিষ্ট নেই; কারন এই রোগের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের প্রচেষ্টায় আর আল্লাহ মানুষের ঐ প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে রক্ষা করবেন। ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে রক্ষায় সকলের সার্বিক সহযোগীতা এবং অব্যাহত প্রচেষ্টা কার্যকর রাখতে হবে। তবেই ঐ মরণঘাতি ব্যধি দূরীভূত হবে। আমরা যেন সৃষ্টিকর্তার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে মানবতার কল্যানের তরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

বহুদিন পড়ে বাংলাদেশের তরুন ক্রিকেটাররা একটি অর্জন জাতিকে উপভোগ করতে দিয়েছে। জাতি ঐ আনন্দের মুহেুর্ত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয় এবং ইতিহাসের অর্জন উপভোগ করছে। তাই এই অসামান্য কৃতীত্ব ও অবদানের জন্য ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ এবং শুকরিয়া জানাই। যারা মাঠে থেকে অসামন্য অর্জনকে বাস্তবে রূপদান করেছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই এবং উত্তোরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধী কামনা করি। ক্রিড়াঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সমুজ্জ্বল হউক এবং বিশ্বকে প্রমানস্বরূপ দেখিয়ে দিক আমরাও পারি ও পেরিছি এবং পারব। তবে নিন্দুকদের সমালোচনাকে সাধুবাদ জানিয়ে আগামীর কল্যাণের তরে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাব এই হউক আমাদের প্রত্যয়দৃপ্ত অঙ্গিকার।
অনেক খারাপির সঙ্গে ক্ষমতারও ভারসাম্য রয়েছে তবে যেখানে ভারসাম্যে ফাটল ধরেছে সেখানেই বিপত্তি ঘটেছে। আর এই বিপত্তির নেতিবাচক ফলাফল জনসম্মুখ্যে প্রকাশিত। তাই অতিত ও বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে করে ঐ ক্ষমতার অপব্যবহার এমনকি নেতিবাচক ভারসাম্য পরিলক্ষিত না হয়। মূল্যবোধ এবং বিবেক ধ্বংসকারী সকল কার্যক্রম এবং চর্চা থেকে বিরত থেকে আগামীর সমালোচনা এবং প্রশংসাকে ভারসাম্যের মধ্যে রেখে জাতির কল্যাণে ব্যবহার করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.