বার্সার সর্বনাশের রহস্য জানালেন..সুয়ারেজ

খেলা ডেক্স ॥ গভীর ক্রন্দন ‘যেতে নাহি দিব।’ হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়! লুইস সুয়ারেজের বার্সেলোনা ছাড়ার বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কবিতার লাইনের মতো ছিল না। বরং তাঁর বেলায় হয়েছে ঠিক এর উল্টোটা। সুয়ারেজ বার্সেলোনা ছেড়ে যেতে চাননি, তবু তাঁকে বার্সেলোনা ছাড়তে বাধ্য করেছেন বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউ আর কোচ রোনাল্ড কোমান। বার্তোমেউ তো সরাসরিই বলেছিলেন, সুয়ারেজ বার্সেলোনার লকার রুমের পরিবেশ নষ্ট করেন। আর বার্সার কোচের দায়িত্ব নিয়েই কোমান নাকি জানিয়ে দিয়েছিলেন, সুয়ারেজ তাঁর পরিকল্পনায় নেই।
গভীর কষ্ট নিয়ে বার্সেলোনা ছেড়েছেন সুয়ারেজ। আতলেতিকো মাদ্রিদে যাওয়ার আগে কষ্ট নিয়েই বলে গিয়েছিলেন, ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোর ক্লাবটিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলবেন। পরোক্ষে এটা ‘বার্সেলোনাকে দেখিয়ে দেব’ ধরনের একটা হুমকিই ছিল সুয়ারেজের তরফ থেকে। সুয়ারেজ বার্সাকে দেখাচ্ছেনও। ৩৪ বছর বয়সেও আতলেতিকোর জার্সিতে দুর্দান্ত খেলছেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। গত মৌসুমে আতলেতিকোতে নাম লেখানোর পর লিগ জিতিয়েছেন। দলটির হয়ে খেলা ৪৭ ম্যাচে করেছেন ২৫ গোল।
বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোমান। আতলেতিকো মাদ্রিদের উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ মনে করেন, বার্সেলোনার সর্বনাশের কারণ মূলত কোমান আর সভাপতি লাপোর্তার দ্বন্দ্বছবি: রয়টার্স
অন্যদিকে সুয়ারেজের পর লিওনেল মেসিকেও হারানো বার্সেলোনা রীতিমতো ধুঁকছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বেনফিকার কাছে হেরে গেছে দলটি। কোমানের চাকরিও যাই যাই করছে। আর সুয়ারেজ দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোতে নায়কের মর্যাদা পাচ্ছেন। এসি মিলানের বিপক্ষে দলের ২১ ব্যবধানের জয়ে যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে জয়সূচক গোলটি করেছেন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার। বার্সায় শেষ দিকে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া আতলেতিকোর এই নায়ক সম্প্রতি স্প্যানিশ পত্রিকা স্পোর্তের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি কথা বলেছেন নানা বিষয় নিয়ে। স্বাভাবিক কারণেই সেই সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে উঠেছে বার্সেলোনার প্রসঙ্গে। বার্সেলোনার এমন করুণ অবস্থার কারণ জানাতে গিয়ে দোষ দিয়েছেন দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা সমস্যাকে, ‘ ক্লাবের অভ্যন্তরীণ (কোচ কোমান আর বর্তমান সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার মধ্যকার) ঝামেলা খেলোয়াড়দের সর্বনাশ করছে।’ আর খেলোয়াড়দের সর্বনাশ তো আদতে বার্সারই সর্বনাশ।
তাহলে কি কোচ বদল করার মধ্যেই এর সমাধান? বেনফিকার কাছে হারার পর গুঞ্জন উঠেছে যেকোনো সময় বরখাস্ত হতে পারেন কোমান। বার্সেলোনার সম্ভাব্য কোচ হতে পারেন কে, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। বার্সার নতুন কোচ নেওয়ার প্রসঙ্গ এলেই আসে দলটির সাবেক প্লেমেকার জাভি হার্নান্দেজের নাম। বর্তমানে কাতারের ক্লাব আল সাদের এই কোচকে বার্সেলোনা নিয়ে এলে কেমন হবে—এমন একটি প্রশ্নের উত্তরে সুয়ারেজ বলেছেন, ‘একজন ফুটবলভক্ত হিসেবে আমি মনে করি না এখনই বার্সেলোনার কোচ হওয়া উচিত তাঁর।’
কেন জাভির এখনই বার্সেলোনার কোচ হওয়া উচিত নয় প্রশ্নে সুয়ারেজের উত্তর, ‘তিনি বুদ্ধিমান। এ কারণেই তিনি ক্লাবের কঠিন সময়টার বিষয়ে জানেন। তাঁর উচিত হবে বার্সার কোচ হওয়ার জন্য মোক্ষম সময় আসার অপেক্ষা করা।’ সুয়ারেজ অবশ্য জাভিকে যোগ্য কোচই মনে করেন। তবে বার্সার বর্তমান কঠিন অবস্থার কথা চিন্তা করে বলেছেন, ‘বার্সেলোনার ভেতরে তাঁর সাবেক অনেক সতীর্থ আছে। তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া (একাদশে না রাখা, বাদ দেওয়া) তাঁর জন্য কঠিন হবে।’
বার্সেলোনায় জাভির সাবেক সতীর্থদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রসায়ন ছিল লিওনেল মেসির সঙ্গে। দুজনে মিলে অনেক ম্যাচই তো জিতিয়েছেন ক্যাম্প ন্যুতে। সেই মেসি এখন বার্সায় নেই। বার্সা থেকে মেসির বিদায় নেওয়ার বিষয়টিও অনেকটা ছিল সুয়ারেজের মতো। মেসি যেতে চাননি, ক্যারিয়ারের শেষ করতে চেয়েছিলেন প্রিয় ক্লাবটিতে। কিন্তু তাঁর বেতন বার্সা বইতে পারবে না বলেই তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। এ বিষয়ে সুয়ারেজ স্পোর্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘লিও আমাকে বলেছিল সে বার্সেলোনাতেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চায়। এটা করতে পারলে সে অনেক বেশি খুশি হতো।’
মেসি নেই, সুয়ারেজ নেই, সর্বশেষ দলবদলে আঁতোয়ান গ্রিজমানও চলে গেছেন আতলেতিকোয়। সব মিলিয়ে নড়বড়ে এ বার্সা আগামী পরশু লা লিগায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আতলেতিকো মাদ্রিদের। স্পেনের ফুটবলে গুঞ্জন, এ ম্যাচটি দেখার পরই কোচ কোমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বার্সেলোনা। আর কোমানের ওপর একটা রাগ তো আছেই সুয়ারেজের। সেই রাগ বা ঝালটা কি এ ম্যাচে ঝাড়বেন সুয়ারেজ! তিনিই কি হবেন কোমানের চাকরি হারানোর কফিনের শেষ পেরেক!
সে বিষয়ে তো প্রশ্ন করা যায় না! তবে ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোর সেই ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সুয়ারেজকে। বার্সেলোনার বিপক্ষে গোল অবশ্যই করতে চান তিনি। সেই গোলে কোমানের চাকরি যাবে কি যাবে না, সেটা তাঁর কাছে হয়তো কোনো বিষয় নয়। তবে বার্সেলোনার বিপক্ষে গোল করার পর কী করবেন, সেটি বলেছেন সুয়ারেজ, ‘গোল করে আমি উদ্যাপন করব না। না, না না…কোনোভাবেই না। বার্সার প্রতি আমার একটা শ্রদ্ধাবোধ আছে।’ সে তো থাকবেই। ক্লাবটিকে যে বড় ভালোবেসে ফেলেছিলেন সুয়ারেজ!

Leave a Reply

Your email address will not be published.