রাজমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে চাঁদাবাজি, জবরদখলে গ্যাং চক্র গড়ে কবির

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ১৯৯০ সালে কবির পরিবারসহ বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় আসে। প্রথমে রাজমিস্ত্রি কাজে পিতার সহযোগী ছিল কবির। পরবর্তীতে গাড়ি চালনা এবং বিভিন্ন হাউজিং প্রজেক্টে চাকরিও করেছে। ২০১০ সালে গাংচিল সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দিয়ে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি কবিরের। তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে চাঁদাবাজি শুরু করে। অপরাধ জগতে ‘জলদস্যু’ কুখ্যাতি মেলে। র‌্যাবের অভিযানে গাংচিল বাহিনীর অস্তিত্ব সংকটে পড়লে ২০১৬ সাল হতে কবির বাহিনী নামে দুর্র্ধষ বাহিনী গড়ে তোলে। বখে যাওয়া ছেলেদের নিজের বাহিনীতে যোগদান করাতো। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা, চাঁদ উদ্যান ও এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত কবির বাহিনী।
এছাড়াও জবর দখল, ভাড়ায় শক্তি প্রদর্শন এবং আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে কবির। গত বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে র‌্যাব-২ এর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কবির বাহিনীর মূলহোতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী কবির হোসেন ওরফে জলদস্যু কবির ওরফে গাংচিল কবির ও তার ৭ সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এ সময় জব্দ করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল ও ৪ রাউন্ড তাঁজা গুলি ভর্তি ম্যাগজিন, ছোরা, চাকু, স্টিলের গিয়ার হোল্ডিং ছুরি, লোহার পাইপ, ৪টি চাপাতি, ৪১৭ পিস ইয়াবা এবং ৭টি মোবাইল। গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামের একটি কিশোর গ্যাংকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। র‌্যাব মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধ জড়িত বেশ কয়েকটি গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে। কয়েকজন ভুক্তভোগীও ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে র‌্যাবের নিকট অভিযোগ দেয়।
এ প্রেক্ষিতে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র‌্যাব মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কবির বাহিনীর মূলহোতা কবির হোসেনসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- রুবেল ওরফে পানি রুবেল (২৭), আমির হোসেন (২১) মো. মামুন (২৫), মো. রিয়াজ (২০), মেহেদী হাসান (২৫), মামুন ওরফে পেটকাটা মামুন এবং মো. বিল্লাল (২৪)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কবির বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। এই দলের সদস্যরা সংঘবদ্ধ অপরাধী দল। দলের মূলহোতা গ্রেফতার জলদস্যু কবির ওরফে গাংচিল কবির। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২০/২২ জন। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা সন্ত্রাসী, মাদক কেনাবেচা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কবির ২০১৮ সালে প্রথম গ্রেফতার হয়। হত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, মারপিটসহ সর্বমোট ২৪টি মামলার আসামি। গ্রেফতার অপর সদস্যরা ক্ষুদ্র ব্যবসা, গাড়ি চালনা, দিন মজুরসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। গ্রেফতার রুবেল ওরফে পানি রুবেলের নামে ৭টি, মামুন ওরফে ড্যান্ডি মামুনের নামে ৫টি, পেটকাটা মামুনের নামে ৪টি, আমির হোসেনের নামে ৩টিসহ অবশিষ্ট সদস্যদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রত্যেকটি চক্রের নেপথ্যে একজন গডফাদার থাকে।
কবির বাহিনীর পেছনে কোনো গডফাদার বা রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছিল কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। আর তার পেছনে কোনো গডফাদারও নেই। কবির নিজেই একটি চালিকাশক্তি। যখন যেখানে প্রয়োজন হয়েছে সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে। চক্রের সদস্যদের অনেকে গ্যাং কালচারে জড়িত। ভাড়ায় জবরদখল, আধিপত্য বিস্তার ও হাউজিং এ চাঁদাবাজি করতো। তার বিরুদ্ধে গ্যাং রেপের একটি মামলাও চলমান। সেই মামলায় সে জেলও খেটেছে। চক্রের সদস্যদের সবার স্থায়ী ঠিকানা ঢাকার বাইরে হলেও জন্ম সূত্রে ২০/২৫ বছর ধরে ঢাকায় তাদের অবস্থান। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.