আসছে নো টিকা নো সার্ভিস

উবায়দুল্লাহ বাদল ও শামীম আহমেদ ॥ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ঠেকাতে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’-এর পর এবার ‘নো টিকা নো সার্ভিস’ নীতির পথে যাচ্ছে সরকার। যে কোনো সরকারি সেবা নিতে হলে টিকার সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী টিকার সনদ ছাড়া হোটেল-রেস্টুরেন্টের মতো শপিং মলেও প্রবেশ করা যাবে না। ট্রেন, বিমান, লঞ্চেও চলাচলে দেখাতে হবে এই সনদ। জনসমাগমের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হতে পারে। এমনকি প্রথম ডোজের টিকা ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এটা (সেবা নিতে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা) অলরেডি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে দু-এক দিনের মধ্যে পরামর্শ করে সময় দিয়ে ইনশা আল্লাহ আমরা অর্ডার করে দিচ্ছি। অলরেডি আমরা বলে দিয়েছি, এখন থেকেই মোটিভেশন ও প্রমোশনাল কাজ করবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪০ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা ৯৯ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার টানা পাঁচ দিন বেড়ে ৪.৮৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এক দিনেই বেড়েছে দশমিক ৬৬ শতাংশ। সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি শনাক্ত হারের খবর জানানো হয়েছিল ১০৮ দিন আগে। সংক্রমণ সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে ঢাকায়। ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ২.৩১ শতাংশ। ১০ দিনে ৩.২২ শতাংশ বেড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে ৫.৫৩ শতাংশে। ঢাকা জেলায় এ হার ছিল ৫.৬৮ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ঢাকায় দ্রুত শনাক্তের হার বাড়ায় ওমিক্রন গুচ্ছ সংক্রমণ থেকে সামাজিক সংক্রমণের পথে যাচ্ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেশে পাওয়া ১০ জন ওমিক্রন রোগীর সবাই ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকাতেই ১০ দিনের ব্যবধানে শনাক্তের হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আইইডিসিআরের উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে বুঝতে হবে গুচ্ছ সংক্রমণ থেকে সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ঢাকাতেই মূলত ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়ছে। যদিও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেই বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ ব্যাপকতা পেতে পারে বলে জানিয়েছেন সরকারি সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। আর এই ভাইরাসটির সংক্রমণ-ক্ষমতা ছয় গুণ বেশি হওয়ায় দ্রুত তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ওমিক্রন প্রতিরোধে আগের মতো আবারও বিধিনিষেধের পথে যাচ্ছে সরকার।
এর ইঙ্গিত দিয়ে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ওমিক্রন নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছে। সেখানে ভ্যাকসিন জোরদার করা, বুস্টার ডোজ কমফোর্টেবল ও বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রেস্টুরেন্ট, শপিং মলে প্রবেশ এবং বিমান, ট্রেন ও লঞ্চে ওঠার ক্ষেত্রে টিকার দুই ডোজ নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও আসছে। রেস্টুরেন্টে সনদ যাচাই প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মোবাইলে সফট কপি কিংবা হার্ড কপি থাকবে। ভিজিল্যান্স টিম থাকবে প্রতিটি শহরে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা টাইম দিয়ে এটা করা হবে। ওমিক্রন ঠেকাতে গেলে কঠোর হতেই হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত রাখতে হবে।
মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি বাধ্যতামূলক করা হবে। বিশেষজ্ঞরা চাইলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত করা হবে। যদি সংক্রমণ আরও বাড়ে, তাহলে গণপরিবহনে হয়তো ৫০ শতাংশ (আসন সংখ্যার অর্ধেক) যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা আসতে পারে। ওটা এখনো (চূড়ান্ত) হয়নি। আমরা বিআরটিএকে বলে দেব, কোনো ভাড়া বাড়ানো যাবে না।’ শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ১২ বছরের বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টিকার বিষয়ে প্রচারণা চালানোর জন্য স্বাস্থ্য, পিআইডি, স্থানীয় সরকার, প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইমাম সাহেবদেরও খুতবায় টিকার কথা বলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, যে শিক্ষার্থীরা ভ্যাকসিন নেবে না, তারা স্কুল-কলেজে আসতে পারবে না। টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য অপেক্ষার দরকার নেই। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি বা যে কোনো একটি পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেই তারা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে। এদিকে ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। তবে চলমান পরীক্ষা, ব্যবহারিক ক্লাস ও দাফতরিক কার্যক্রম সশরীরে অব্যাহত থাকবে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রশাসনিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.