এক যুগে সরকার নতুন কর্মসংস্থান করেছে ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের

বা আ ॥ সারাবিশ্বের উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশে গত এক যুগে দারিদ্র্য ও হতদারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমেছে। এই সময়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ। মাথাপিছু আয় ৬৮৬ ডলার থেকে ৪ গুণ বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার ছাড়িয়েছে। শিক্ষার হার ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো আয় তথা রেমিট্যান্স ৭.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে প্রায় ১৭শ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ স্বাধীনতার পর জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বড় অর্জন বলে বিবেচিত হচ্ছে এখন।
বিদায়ী ২০২১ সালটি ছিল বাংলাদেশের জন্য বিশেষ একটি বছর। এ বছরটিতে একদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে দেশের মানুষ, অন্যদিকে এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়শীল দেশে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই ঘটনা বাঙালি জাতির গৌরবগাথায় যুক্ত হয়েছে আরেকটি নতুন অধ্যায়। গত ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ফ্রেব্রয়ারিতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসি এলডিসি থেকে উত্তরণে যোগ্যতা অর্জনের সুপারিশ করে। জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, এই অর্জনকে জাতির সামনে তুলে ধরতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সরকার। স্বীকৃতি পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তুতির জন্য ৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু উত্তরণ প্রক্রিয়া মসৃণ ও টেকসই করা এবং করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বাড়তি ২ বছর সময় পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ।
বর্তমান সরকারের অর্থনীতির অগ্রগতির বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ১২ বছরে অর্থনীতিতে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। করোনার সময় যখন সারা বিশ্বের অর্থনীতি ৩.১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সকল সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অর্থনীতির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করতে দীর্ঘ ৩৮ বছর লেগেছে। অথচ, গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির আকার ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার আগামী অর্থবছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানিসহ অর্থনীতির নানা সূচকের অগ্রগতি এক বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ গুণ বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬.১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৭ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা, চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে। ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬০তম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন ৪১তম স্থানে চলে এসেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, এমনটাই মত অর্থনীতিবিদদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.