নির্বাচন, আন্দোলন ও ওমিক্রন

চলমান নির্বাচন এবং আন্দোলন ও ওমিক্রন এই তিনে মিলে একে পরিণত হয়েছে। তবে নির্বাচন ও আন্দোলন এক হয়েছে ভিন্ন মাত্রায় যুক্ত হয়ে আর ওমিক্রন যুক্ত হয়েছে ঐ দুই কে আলাদা করার জন্য কিন্তু প্রকারান্তরে মানুষকে ঘরমুখে করে : মানুষ, পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি, সরকার ও দেশকে আলাদা করে অর্থনৈতিক এমনকি সার্বজনীন কর্মকান্ডে স্থবিরতা আনয়নসহ পঙ্গু করার জন্য। এই তিনের সামষ্টিক অর্থ এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দিনের শেষে বা হিসেবের শেষে একে পরিণত হয় এবং হয়েছে আর আগামীতেও হবে। যদিও আন্দোলন ও নির্বাচনের আদতে আদী উদ্দেশ্য ছিল মহৎ এবং জনকল্যাণকর কিন্তু যুগের পরিক্রমায় এসে জনঅকল্যাণকরে পরিণত হয়ে আগামীর জন্য প্রমানিত হয়ে দন্ডায়মান রয়েছে। তারপরও নির্বাচন এবং আন্দোলন হয়েছে এবং হবে আর এর সঙ্গে সদ্য যুক্ত হওয়া ওমিক্রনদের আক্রমনও অব্যাহত থাকবে। তবে হয়তো এই নামের পরিবর্তন হবে এবং আকৃতি ও ধরণ এমনকি অদৃশ্য অবস্থান বিরাজমান থাকবে। নির্বাচনের জন্য দল, গোত্র এবং সংগঠনের জন্ম হয়েছে আর হচ্ছে তবে এতে লাগাম টানা বা জন্মনিরোধ ব্যবহার আবশ্যক করা জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা আগামী দিনে সরকার এবং জনগণ ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকা দূরুহ হয়ে পড়ছে।
আগের দিনে আন্দোলন হতো জনকল্যাণের স্বার্থে এবং জনকল্যাণের নিমিত্তে কোন বিষয় (ইস্যু) নিয়ে। কিন্তু এখন আন্দোলন হয় ব্যক্তি স্বার্থে অথবা জন অকল্যাণের জন্য। তবে ব্যক্তি স্বার্থের আন্দোলনই বেশী হচ্ছে ইদানিং এবং এই আন্দোলনে বুঝে না বুঝে জনগণের একাংশ শরীক হয়ে জন আকাঙ্খার বিপরীতে গিয়ে জন অকল্যাণ সাধিত করে থাকেন। তবে আন্দোলনের পিছনে কাজ করছে নীল নকশা এবং এর বাস্তবায়নে অপ্রদর্শীত অর্থ যা জনগণকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে ক্ষতির কাজটুকু সুসম্পন্ন করে থাকে। তবে এই অন্ধকারের পরক্ষণেই আলোতে ফিরে এসে ঐ অন্ধকারের দ্বারা কৃতকর্ম এবং ঐ সময়টুকুর যে ক্ষতি সাধিত হয়েছিল তা পুষাতে জীবনবাজী রেখে অথবা জীবনের সমাপ্তি টেনেও পুষানো সম্ভব হয়ে উঠে না। আগের আন্দোলন ছিল সেই মার্তৃভাষা বাংলার আন্দোলন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন আর ঐ সকল আন্দোলনগুলো পরিচালনা এবং রূপদান ও বাস্তবায়নে ছিল নি:স্বার্থ চিন্তার নি:লোভ মানুষগুলো। তাদেরই একজন আমাদের জুলিওকুঁড়ি উপাধি পাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যিনি নিজের জিবন বিলিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছেন এবং অর্জন করেছেন নিজস্ব স্বত্তা। দিয়ে গেছেন দেশোন্নয়নের রূপরেখা এবং সকল ইতিবাচক কর্মকান্ডের বীজ রোপন এবং পরিচর্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রশিক্ষণ। সেই সময়ের অধিকার এবং স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলন আজ অনুপস্থিত। তবে সেই আদলে ব্যক্তি ও পরিবার কেন্দ্রীক স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তবে এর থেকে বের হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে আগামীর পথদর্শন হতে পারে করোনা বা নতুন নামকরণে কোন অদৃশ্য মহামারী বা অতিমারি। তবে এতেও রয়েছে ধনীক শ্রেণীর স্বার্থ জড়িত আর সাধারণের স্বাধীন মত ও পথের এমনকি অধিকার আর স্বাধীকারের পরিপন্থি সকল দিক।
আগে নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে স্বাধীকার, অধিকার, সাম্য, ন্যায়বিচার, মূল্যবোধ, সার্বজনীন সহাবস্থান ও ধর্মীয় শৃঙ্খলায় সমাজ, সংস্কৃতি আর রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সম্বৃদ্ধি অর্জনে জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভুমিকা অর্জিত হতো। কেউ কোন বৈষম্যের স্বীকারে পরিণত হতো না এমনকি ন্যায়-পরায়নতায় ঐক্যবদ্দ সহাবস্থান বিরাজমান থাকত। জনগণের পক্ষ থেকে একজন সরকারে প্রতিনিধিত্ব করত এবং ঐ একজন জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই অগ্রসর হতো যদিও জনগণ দ্বারা স্বচ্ছভাবে নির্বাচিত হতো। তবে এখন নির্বাচন হয় ক্ষমতা আর অর্থের বাহাদুরীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে। অর্থ এবং ক্ষমতা ছাড়া কোন নির্বাচন নয় এমনকি জনগণও তাদের মতামত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে অর্থকে এমনকি পেশি শক্তি বা ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কখনো কখনো অর্থই নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়ার হাতিয়ারে পরিণত হয়। তবে নির্বাচন এবং নির্বাচিতরা দ্বারা জনআকাঙ্খা পূর্ণ হওয়াতো দূরের কথা বরং জন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আর এই মানুষকে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই সন্তুষ্ট করতে পারেনি কিভাবে একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা সন্তুষ্ট করা সম্ভব? তাই নির্বাচন সময়কাল এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়কাল দ্বিধা-দন্ধ, হামলা ও মামলা এমনকি ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে মনোমালন্য বিরাজমান থাকে। যে উদ্দেশ্য নির্বাচন এর আভির্ভাব সেই উদ্দেশ্যে বিরুপ মনোভাব এবং নেতিবাচক সংস্কৃতি এখন বিরাজমান। নির্বাচনের ভাবনায় নতুনত্ব আনয়ন জরুরী এবং ভোটারের ভাবনায় সততা এবং ন্যায়পারায়নতা ও বিচার বিবেচনাবোধ জাগ্রত রাখা জরুরী। যুগের প্রয়োজনে নির্বাচন নিয়ে, অধিকার নিয়ে, ভোট নিয়ে, নির্বাচন পরবর্তী সময় নিয়ে ইতিবাচক সচেতনতামূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা জরুরী। নির্বাচনে মূল্যবোধ প্রয়োগের সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বনে কাজ করা এখন যুগের উর্বর দাবী।
ভোটার এবং প্রার্থীকে এক কাতারে বসে সেবার মানদন্ড ঈমান ও বিশ্বাসের সংমিশ্রনে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে ঠিক করা উচিত। একজন ভোটারের মনোভাব বা মনেবৃত্ত্বি এমনকি ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে আন্ধাজ করা বড়ই ত্রিমাত্রিক জটিল কাজ। যা গত ২২ বছর চেষ্টা করেও সঠিকতা আবিস্কার করতে বা মানদন্ড ঠিক করতে পারিনি। তবে দলীয় ব্যানারে নির্বাচন একটু ভিন্ন আর দলবিহীন নির্বাচন বড়ই জটিল। তবে এই ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতা-মহামনীষি এমনকি নবী ও রাসুলগণকে অনুসরণ করার যথেষ্ট কারণ ও সুযোগ এখন আমাদেরকে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ ঐ নেতাদের জীবন ও কর্মকে অনুসরণ করুন, তাদের সামাজিক, রাজনৈতি ও অর্থনৈতিক অবস্থানকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ্য করুন। তাদের অর্থ ও সম্পদকে বিবেচনায় আনুন এবং সেই আলোকে নিজেদেরকে সাজিয়ে সেবার মানদন্ড ঠিক করে কাজে নামুন বা ভোটদাতারাও ঐ একই মানদন্ডকে বিবেচনায় এবং বিবেকবোধে জাগ্রত রেখে কাজটুকু করুন। পবিত্র আমানত কখনো খেয়ানত করবেন না। নির্বাচন নিয়ে গত ২২ বছর যে গভেষনা হয়েছে তার ফল শুন্য তবে এর থেকে উত্ত্বরণের একমাত্র পথ হতে পারে স্ব স্ব ধর্মের আবরণে উল্লেখিত মানদন্ডগুলো। তবে এর বাইরে গিয়ে কোনকিছু করলে বর্তমানের হালচাল অব্যাহত থাকবে আর নেতিবাচক সকল মনোভাসনা এবং কামনাগুলি গজিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়াবে। সকলেই দুনিয়াবী যাবতীয় আকর্ষণ ও চাহিদার দিকেই ছুটবে এবং এই ছুটার মাধ্যমেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অশান্তি ও অকল্যাণকে টেনে নিয়ে জাহান্নামের লেলিহান শিখার লাকড়ি হিসেবে পরিণত হবেন।
মহামারী বা অতিমারির বর্তমান রূপ হলো করোনা। আর এর বহুমাত্রিক নামকরণে এখন পৃথিবী দিশেহারা। তবে নির্বাচন ও আন্দোলন যা করতে পারেনি বা সম্পন্ন করেনি সেটা সম্পর্ন্ন করতে এই করোনার আভির্ভাব। তবে এই ওমিক্রন নামকরণে ডরচালানে লোভি লোভাতুর উঁচু শ্রেণীর আর শয়তান ইবলিসের খায়েস পূরণে চলমান কাজটুকু যৌথভাবে সম্পন্ন করতেও খোচট খাচ্ছে এবং খাওয়াচ্ছে। এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় এখন জানা থাকলেও অজানাতেই দৃষ্টিসিমার বাইরে রয়েছে। তবে নির্বাচন এবং আন্দোলন এর সঙ্গে বহুমাত্রীক নেতিবাচক আকাঙ্খার সংমিশ্রনে যুক্ত হয়ে ত্রিমাত্রিক ঐক্য সৃষ্টি করেছে যা বিশ^বাসীর জন্য অথবা সৃষ্টির সেবাজীব আশরাফুল মাখলুকাতের জন্য অশনি সংকেত। যার ফলশ্রুতিতে জনজীবন দিশেহারা। তবে স্বার্থান্বেষী মহল ও লোভ শ্রেনীর মানুষজন আজ করোনাকে (ওমিক্রন) হার মানাচ্ছে। ভয়হীন অবস্থায় দাড়িয়ে সমাজ, সংস্কৃতি, আবেগ, ঐক্যবন্ধ সম্প্রীতির বন্ধনে চিড় ধরিয়ে সকল ইতিবাচক উন্নয়ন ও অগ্রগামীতাকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। নেতিবাচক খায়েস পূরণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এখনই সময় এই তিনের সংমিশ্রণকে ভেঙ্গে চুড়মার করে দেয়ার। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতা নিয়ে করোনা বিরোধী অবস্থান দৃশ্যমান করুন। কোন টিকার উপর বিশ্বাস নয় বরং সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস ও নির্ভরতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময়টুকু কাজে লাগান। অসুস্থ্যকে সুস্থ্য করার যে ক্ষমতা বা আদেশ সৃষ্টিকর্তা দিয়েছে সেই আদেশকে পরিপূর্ণতা দিয়ে বিশ্বকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তায় পরিপূর্ণ করুন। অসুস্থ্যকে সুস্থ্য করুন, অন্ধকে চোখে আলো দিন, মৃতকে জীবন দিন, বিপদগ্রস্থকে বিপদ থেকে উদ্ধার করুন, যার যা প্রয়োজন তাকে তাই দিন। প্রত্যেকের জন্য মোনাজাত করুন; সজাগ থাকুন এবং সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী সামনে অগ্রসর হউন। দুনিয়াবী নয় আখেরাতের সকল কিছু দুনিয়াতে বিরাজমান রাখতে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধিত্ত্ব করুন। শিশুরমত সরল হউন; কবুতরের মত সরল হউন; সাপের মত সতর্ক হউন। ভয়ের উদ্ধে উঠে পৃথিবীকে জয় করুন এবং নির্বাচন ও আন্দোলন এবং ওমিক্রনকে পৃথিবীর মধ্যে থেকে বিতারণে নিজ নিজ ভুমিকা পালনে নিয়োজিত থাকুন। এই হউক আমাদের আগামীর প্রত্যয়দৃপ্ত অঙ্গিকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.