কসবায় পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করছে পাহাড় খেকোরা। পাহাড় কাটার উপযুক্ত সময় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত। নেপথ্যে কাজ করছে এলাকার প্রভাবশালী মহল। এতে করে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র পড়েছে হুমকির মুখে। পাহাড় কাটায় স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় লোকজন ও সচেতন মহল । পরিবেশ অধিদপ্তরকে ফোন দিলেও তড়িৎ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করার অভিযোগ রয়েছে।
গত কিছুদিন যাবত উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে পাহাড় কেটে মাটি দিয়ে নিচু জমি ও জলাশয় ভরাট করার সময় স্থানীয়রা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.নুরুল আমিনকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার সময় ত্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন দিলে সেখান থেকে জরুরী মেসেজ পেয়ে কসবা থানা পুলিশ রাত ১১ টায় ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে একটি টিলার আড়ালে মাটি কাটায় ব্যবহৃত ভেকু মেশিনটি লুকিয়ে রাখে। অপরদিকে ৮টি ট্রাক্টর রাতের আধারে এদিক-সেদিক ছুটে চালকসহ জড়িতরা পালিয়ে যায়। পুলিশ মাটি কাটায় জড়িত জয়নগর বাজারের জাহাঙ্গীর আলমের ফার্নিচারে দোকানে গিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করেন। এছাড়া ওই এলাকায় একাধিক চক্র পাহাড়ের মাটি কাটায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
গত রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মধুপুর এলাকায় কাতার প্রবাসী মাসুদ মিয়ার ৮৫৮ দাগের পাহাড় কেটে জয়নগর বাজারের পাশে নিচু জমি ভরাট করা হয়েছে।
একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও বোরহান উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে গত ৩-৪ দিন যাবত রাতের আধারে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি দিয়ে নিচু ফসলী জমি ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পাহাড় কাটা বন্ধের বিষয়ে কোনো ভুমিকা না রাখার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় থাকা স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহলের লোকজন পাহাড় কাটায় মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
পাহার কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে গত রবিবার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিদর্শক জুবায়ের হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু ওই রাতেই আবারো মাসুদ মিয়ার পাহাড়ের মাটি কেটে ৬টি ট্রাক্টর দিয়ে সরাতে থাকলে ত্রিপল নাইনে ফোন দিলে তারা কসবা থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে রাত সোয়া ২টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছলে শ্রমিকরা দ্রুত গা ঢাকা দেয়। পুলিশ চলে আসার পর রাতভর পাহাড়ের অবশিষ্ট অংশ কেটে মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
এবিষয়ে মাটি কাটায় জড়িত জাহাংগীর হোসেন ও বোরহান উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, প্রবাসী মাসুদ মিয়া তাদের আত্মীয় হওয়ায় রাতের আধারে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে তাদের নিজস্ব ফসলী জমি ভরাট করা হচ্ছে। তারা গত ১৪ ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসনের বরাবর আবেদন করে মাটি কেটেছেন বলে জানায়। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি কাটার বিষয়ে অনুমতি দেখাতে পারেননি।
এদিকে মাসুদ মিয়ার বাড়ির পাশে মহসিন মিয়া নামে এক প্রবাসীর প্রায় দুই বিঘা পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার বিষয়ে স্থানীয় বাড়াই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক আমজাদ হোসেন ও তার বড় ভাই মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক আমজাদ হোসেন ও তার ভাই মুক্তার হোসেন তাদের এক নিকটাত্মীয়ের নাম ভাংগিয়ে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত পাহাড় কাটার মতো জঘন্য কাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানান।
এ বিষয়ে প্রবাসী মহসিন মিয়া জানায়, পাহাড় কাটার সমস্ত প্রশাসনিক দায় দায়িত্ব্ নিয়েছেন শিক্ষক আমজাদ হোসেন ও তার বড় ভাই মাটি ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন। তাদের দুটি মাটি কাটার ভেকু মেশিন রয়েছে। তারা আমার ছোট একটি জমি ভরাট করে দিয়ে বাকি মাটি তারা নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানায়; পাহাড়ের মালিক মহসিন মিয়াকে আমি চিনিনা এবং তিনিও আমাকে চিনেননা। আমি শিক্ষক মানুষ। আমি মাটি ব্যবসার সংগে জড়িত নই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কসবা উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক প্রভাষক মুন্সি রুহুল আমিন টিটু বলেন, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পাহাড় কেটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে বিরান ভুমিতে পরিণত করা হচ্ছে। এখানে প্রশাসনের উদাসীনতা এজন্য দায়ী।
কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর ভুইয়া জানান, ত্রিপল নাইনের (৯৯৯) নির্দেশনা পেয়ে দু’রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাটি কাটায় জড়িতরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সনজিব সরকার বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আবেদন জানালেও আমি কোনো অনুমতি দেইনি। আমি ওসি সাহেবের সংগে কথা বলে জড়িতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী কমিশনার (ভুমি)কে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.