জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে; রাসিক মেয়র

বা আ ॥ আন্তর্জাতিক একটি চক্র জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপতৎপরায় লিপ্ত হয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার বেলা ১২টায় নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশনে প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, সচিব মোঃ মশিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং এডভাইজার মোঃ আশরাফুল হক, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইমরানুল হক প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দেশের মধ্যে অন্যতম একটি সিটি কর্পোরেশন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহানগরীর সকল নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন, বায়ু দূষণ কমানো, ইপিআই কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পরপর ১০ বার দেশসেরা হওয়া সহ নানাবিধ ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অদম্য অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের প্রাণের মহানগরী রাজশাহীও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আন্তর্জাতিক একটি চক্র জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপতৎপরায় লিপ্ত হয়েছে। চক্রটি কৌশলে আমার পাসপোর্ট জালিয়াতি, ভুয়া ইমেইল আইডি ও
মোবাইল নম্বর ব্যবহার ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তার ভূয়া নাম, পদবী ও স্বাক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে কোরিয়ান কারিয়ান ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ নিকট হতে ৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয়ে ৯টি ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেছে বলে জানতে পেরেছি। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ তৃতীয় কোন পক্ষ দ্বারা প্রতারিত হয়েছে নাকি ঝঐওঘঝঐওঘ ঊহমরহববৎরহম ঈড়. খঃফ এর প্রেসিডেন্ট ইুবড়হম ঈযবড়ষ ঝঐওঘ ও তার সহযোগীরা নিজেরাই বিভিন্ন ভূয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ফাঁসানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, তা যথাযথ তদন্ত ও তথ্য প্রমাণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে জানা যাবে। তবে আমার সাথে ফোনালাপ কিংবা আমার ইমেইলে যোগাযোগ না করে ভূয়া ইমেইলে যোগাযোগের মাধ্যমে চুক্তিপত্র সম্পাদনের বিষয়টি অবহিত করার পরও দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ই.ঈ. ঝযরহ কর্তৃক একাধিকবার যোগাযোগ ও মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করায় আমার ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের গভীর অপচেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরো বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলীর মধ্যে ফায়ার ফাইটিং সেবা অন্তর্ভূক্ত নয়। বাংলাদেশে ফায়ার ফাইটিং এর জন্য ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স নামক একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ সরকারী সংস্থা রয়েছে। স্বভাবতই, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয়ের কোন প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিকও। বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া চ.চ.অ-২০০৬ ও চ.চ.জ-২০০৮ অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। যে কোন পণ্য (যানবাহন) ক্রয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরবরাহকারীর নিকট থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে। সরাসরি বিজ্ঞপ্তি ব্যতিরেকে সরকারি অর্থের মাধ্যমে এরূপ বৃহৎ অংকের পণ্য (যানবাহন) কোন সরবরাহকারীর নিকট থেকে ক্রয়ের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কোরিয়ান ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ এর সাথে ১০.১২ ১০.১২ গরষষরড়হ টঝউ এর সরাসরি ক্রয়চুক্তি সরকারি ক্রয় নীতিমালা পরিপন্থি ও বাস্তবসম্মত নয়।
রাসিক মেয়র বলেন, গত ১৩-০১-২০১৮ তারিখে ঝঐওঘঝঐওঘ ঊহমরহববৎরহম ঈড়. খঃফ রাজশাহীতে ১০০ গড ঝড়ষধৎ চড়বিৎ চষধহঃ নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর পত্র দেয়। পত্রের প্রেক্ষিতে সেই সময়ে ঝঐওঘঝঐওঘ ঊহমরহববৎরহম ঈড়. খঃফ এর প্রেসিডেন্ট ই.ঈ. ঝযরহ রাজশাহীতে আসেন। একাধিক আলোচনার পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঝড়ষধৎ চড়বিৎ চষধহঃ নির্মাণে অনাগ্রহ দেখানোয় সে সময়েই পত্রযোগাযোগসহ এ বিষয়টির সমাপ্তি ঘটে। এর প্রায় তিন বছর পর ০১.১২.২০২১ তারিখে ই.ঈ. ঝযরহ তার টেলিফোন নম্বর থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যাডভাইজার মোঃ আশরাফুল হককে ফোন করে ০৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন সিটি কর্পোরেশনের সাথে কোম্পানিটির কখনোই যোগাযোগ না হওয়ার বিষয়টি ই.ঈ. ঝযরহ কে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ই.ঈ. ঝযরহ কয়েকটি ই-মেইল পাঠিয়ে তার কোম্পানি থেকে ০৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয় বিষয়ক ভুয়া ডকুমেন্ট প্রেরণ করেন। সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যাডভাইজার মোঃ আশরাফুল হকের নিকট প্রেরিত ডকুমেন্ট ও পূর্বের কথিত ইমেইলসমূহ যাচাই করে দেখা যায় যে, ই.ঈ. ঝযরহ ০৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় যোগাযোগ একটি ভূয়া ইমেইল এড্রেস (শযুুধসধহথষরঃড়হ@ুধযড়ড়.পড়স) এর সাথে করেছেন। যা আমার ইমেইল এড্রেস নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমার ইমেইল এড্রেস শযুধসধহথষরঃড়হ@ুধযড়ড়.পড়স। লক্ষনীয় যে, আমার ইমেইল এড্রেস থেকে ই.ঈ. ঝযরহ এর যোগাযোগকৃত ইমেইল এড্রেসে একটি জেড (ু) বেশি। ই.ঈ. ঝযরহ তার কথিত অর্থ লেনদেনের কোনো পর্যায়ে তিনি আমার সাথে ফোনালাপ বা আমার প্রকৃত ইমেইল এড্রেসে কোন ইমেইল প্রেরণ করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এ.এই.এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, এরপরও গত ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে তিনি আমার বরাবর কথিত যে য উবসধহফ ঘড়ঃরপব প্রেরণ করেছেন, তার সংযুক্তি হিসেবে প্রাপ্ত ০৯টি ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে আমার পাসপোর্ট জালিয়াতি ও ভূয়া ইমেইল আইডি ব্যবহার, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তার ভূয়া নাম, পদবী ও স্বাক্ষর ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। যার কিছু বর্ণনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
ই.ঈ. ঝযরহ এর ডকুমেন্টে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের যে প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে, তা কর্পোরেশনের নয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর যে নাম দেখানো হয়েছে, সে নামে কোন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সিটি কর্পোরেশনে কখন কর্মরত ছিলেন না। চুক্তিতে মো: ইসলাম খান উদ্দিন নামে সিটি কর্পোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নাম, পদবী ও সীল উল্লেখ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সিটি কর্পোরেশনে মো: ইসলাম খান উদ্দিন নামে কোন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বর্তমানে কর্মরত নেই বা কখনো ছিলেন না। এতে প্রমানিত হয়, কোরিয়ান ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ এর প্রদানকৃত চুক্তিপত্রটি বানোয়াট ও ভূয়া। এছাড়া ইমেইলে (এগঞ+১) টাইম জোন দেখা যায়। যা বাংলাদেশ (এগঞ+৬) বা দক্ষিণ কোরিয়া (এগঞ+৯) এর টাইম জোন নয়। বরং (এগঞ+১) টাইম জোন নাইজেরিয়াসহ কয়েকটি দেশের। ডকুমেন্টে প্রদত্ত ইমেইল এড্রেস ও মোবাইল নাম্বার আমার নয়। ডকুমেন্ট হিসেবে সংযুক্ত আছে পাসপোর্টের দুটি জাল পাতা। সেখানে প্রদত্ত আমার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ইর্মাজেন্সী কন্টাক্ট ও অন্যান্য তথ্যাদি সঠিক নয়। পাসপোর্টে থাকা ছবিটি পাসপোর্ট সাইজের না। আমার ছবিটি পোস্টার বা ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে পাসপোর্টে লাগানো হয়েছে। সুতরাং ই.ঈ. ঝযরহ এর কথিত লেনদেনের দায় আমার বা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর উপর বর্তায় না। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার হতে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তফশিলী ব্যাংকে এল.সি খোলার মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করা হয়ে থাকে। কোরিয়ান ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ তাদের স্ব-ব্যাখ্যাত আবেদনপত্রে দাবী করেছে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয় কোরিয়ান ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ কে ফিলিপাইন ও যুক্তরাজ্যের জনৈক ব্যক্তিবর্গকে ৭৮,৮৯৩ টঝউ প্রদান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সংযুক্তিতে তঞ্চকতাপূর্ণ ক্রয়চুক্তিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় কোরিয়ান ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ কর্তৃক দক্ষিণ কারিয়ায় উৎপাদিত ফায়ার ফাইটিং ট্রাক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে সরবরাহ করবেন। সেক্ষেত্রে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয় কর্তৃক কোরিয়ান ঝঐওঘঝঐওঘ এষড়নধষ ঈড়. খঃফ কে ফিলিপাইন ও যুক্তরাজ্যে অর্থ প্রেরণের নির্দেশনার দাবীটি হাস্যকর ও অযৌক্তিক।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় অপতৎপরতায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রাসিক মেয়র বলেন, এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশ দূতাবাস, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়াকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। চক্রটির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিটি মেয়র মহোদয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.