সার্বজনীন ভীতীকর সংস্কৃতির উর্বরতায় কম্পিত বিশ্ব

চারিদিকে ভীতির সংস্কৃতির চর্চা উন্মুক্ত হচ্ছে। যুদ্ধের ধামামাও বেজে যাচ্ছে; স্নায়ূ যুদ্ধ, অস্ত্রের যুদ্ধ, মুখের যুদ্ধ, বস্রের যুদ্ধ, খাবার এবং নিত্য পন্যের যুদ্ধ, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সততা এবং মিথ্যার যুদ্ধসহ আরো কতো কি। এই সকল যুদ্ধের পিছনে রয়েছে শয়তানের (ইবলিশের) মহা পরিকল্পনা। আর ঐ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই আজ বিশ্ব ব্যবস্থা উত্তপ্ত। এই উত্তপ্ত অবস্থায় পানি ঢালার কাজে কারা কারা নিয়োজিত এবং কিভাবে এই উত্তপ্ত অবস্থার অবসান হবে তা নিশ্চিতকল্পে কাজ করতে হবে। দেশে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে আর এই লক্ষ্যণইকি শেষ সময়ের ইঙ্গিতবাহী এবং পৃথিবীর যবনীকাপাতা টানার কাহিনীতে পরিণত হবে নাকি আরো বাকি রয়েছে তাও কিতাব বিশ্লেষণে বুঝে সামনে এগুনোর সময় এখন। মানুষে মানুষে বিভেদ এবং পিতা সন্তানে বিভেদ, স্বামী-স্ত্রীতে বিভেদ, ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদ, সমাজে, পরিবারে, সংস্কৃতিতে, রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে, ক্ষমতা নিয়ে বিভেদ, পদ-পদবী, সেবা করার মানুষিকতা এমনকি পদ ও অর্থ নিয়ে বিভেদ। কত বিভেদইনা আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছি। যা দেখে মনোকষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত করে যাচ্ছি। তবে এখনই সময় সময়োপযোগী পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার, প্রয়োজনীয় সময় নিজের কাজটুকু সততার সঙ্গে সম্পাদন করা। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও আকাঙ্কা এবং অভিপ্রায় এই তিনের সমন্বয় সাধনে সামনে এগিয়ে যাওয়া। মুখ বুঝে সহ্য করা এবং চোখ বুঝে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানুষিকতার পরিবর্তনে কাজে নেমে পড়া। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে আছেন এবং কাজ করছেন আর এই সকল কাজে আমাকে ও আপনাকে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। তাই সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সহযোগীতা, সহভাগিতা এবং সম্পর্কউন্নয়ন এমনকি তাঁর ইচ্ছায় চালিত হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
পৃথিবী কিন্তু আমাদের কাউকেই চিরস্থায়ী নাগরিকত্ব দিয়ে বরণ করে নেয়নি বরং স্বল্পসময়ের পরেই বিদায় দিয়ে স্থায়ী আবাসনে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীর কাজ অল্প সময় বসবাস করিয়ে বিদায় করে দেয়া; এই নিয়মের ব্যক্তিক্রম আজও হয়নি এবং হবেও না তাই এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য যা কিছু করেছি বা করে যাচ্ছি তার অবসানকল্পে কাজ করার প্রয়োজন এবং স্থায়ী আবাসনের জন্য চিন্তা এবং কাজের সমন্বয় ঘটানো আসন্ন। কেউ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চায়নি কিন্তু পরিস্থিতি ও সময় এবং চাহিদার যোগানে বিদায় নিতে হচ্ছে এবং হবে। তাই অনিচ্ছাস্বত্বেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং হয়েছে আর এই মৃত্যুকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেই আগামীর প্রয়োজনে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ব বিভেক জাগ্রত হউক এবং বিশ্ব মানবতা সম্মুখ সারিতে এসে সুপ্রতিষ্ঠিত হউক। সৃষ্টিকর্তার আবাসভুমি বা বসবাসের জায়গা আর নষ্ট না হউক। সৃষ্টিকর্তার বসবাসের জায়গা হলো আমাদের অন্তর বা হৃদয় আর এই অন্তরকে কোনভাবেই নষ্ট করা যাবে না, এমনকি সৃষ্টিকর্তার সিফতে সৃষ্টি মানুষকে মেরে ফেলা যাবে না; কারণ সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই বলে হুশিয়ার করেছেন যে, কোন মানুষকে মারলে আমাকেই মারা হয় আর কোন মানুষকে যে কোন রকম উপকার বা সহযোগীতা করলে আমাকেই করা হয়। তাই আর নয় মানুষ খুন বরং মানুষের জীবন রক্ষায় কাজে নেমে পড়ুন।
বিচার ব্যবস্থা এবং সামাজিক ব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা আর সেবার দ্বার উন্মোচনের জন্য দায়িত্ব বন্টনের ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রেই খোদার দেখানো পথে এগিয়ে যেতে হবে। যদি আমরা শয়তানের প্ররোচনায় প্রলোভিত না হয়ে বরং সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে এগিয়ে যায় তাহলে নিশ্চিত সফলতা দেখতে পাবো। তবে কখনো কখনো শয়তানের দ্বারা সফলতায় পৌঁছা যায় তবে তা ক্ষণস্থায়ী এবং অশান্তির। তাই ক্ষণস্থায়ী জিবনে অশান্তি ও ক্ষণস্থায়ী অবস্থানকে আর আকঁড়ে ধরে না থাকি বরং চিরস্থায়ী জিবনের স্থায়ী ব্যবস্থায় নিজেরা জড়িত থাকি। আমাদের এখন মুল্যবৃদ্ধির কবলে দিশেহারা হতে হচ্ছে তবে আশার কথা হলো এই মুল্যবৃদ্ধিতে কিন্তু জীবনের মূল্যমান এবং আয়ের বৃদ্ধিসুচক উন্নতি হয়নি বরং যারা বৃদ্ধির সংস্কৃতির সঙ্গে দ্রুতলয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কতিপয় লোভ ক্ষমতাধর শ্রেণী পেশার মানুষ নিজেদের আখের গোছানোর জন্য তাদের প্রয়োজনীয় উপাদান বৃদ্ধির সকল কৌশল চূড়ান্ত করে জাতিকে আরো কষ্টের দারস্থ করে যাচ্ছে এবং যাবে। তাই সবাধান এবং সচেতন হউন ঐসকল সুবিধাভোগী লোভাতুর শ্রেণীর কর্মকান্ড সম্পর্কে। কারণ সামনে নির্বাচন এবং ঐ নির্বাচনকে সামনে রেখে লোভী ও ক্ষমতারোহীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত এমনকি কৌশল প্রণয়নে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে। ঐসকল পদোন্নতি এবং বেতন বৃদ্ধি আর মুল্য বৃদ্ধির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও কঠিন তারপরও সফল হতে হবে এবং দেশের গতিশীলতা ও চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। চলমান নির্বাচন ব্যবস্থার যে উন্নতি সাধিত হয়েছে আর নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন ও এর প্রয়োগের যে চর্চা শুরু হয়েছে তার শেষ ফল দেখতে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে দল, জনগন এবং সরকার উভয়ে মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে ধৈয্যধরে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ধৈয্যধারণ কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন আর ধৈয্যের পরই শান্তির পুরস্কার বা ফল পাওয়া যায়। তাই মুখের যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, ইতিবাচক মনোভাবের চর্চার গতিময়তা বৃদ্ধি করতে হবে। নেতিবাচকতা এবং এর চর্চার অপসংস্কৃতির লাগাম টেনে ধরে এর সমাপ্তি টানতে হবে।
যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার সমাপ্তি টানতে সকলেই মনযোগী হতে হবে। স্ব স্ব ধর্মের আহবান শুনে মনযোগী এবং একনিষ্ট হয়ে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য চেয়ে তাঁর ইচ্ছায় সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ক্ষমা ও ভালবাসার মোহনীয়তা প্রকাশ করতে হবে। নি:শর্ত ভালবাসার বন্ধন এবং বিনামূল্যের দান বিলিয়ে দিয়ে মানুষকে শয়তানের কাছ থেকে মুক্ত করতে হবে। শয়তানমুক্ত মানুষই এই পৃথিবীকে শান্ত করে খোদায়ী অভীপ্রায় সুপ্রতিষ্ঠীত করতে কার্যকর হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুন:প্রতিষ্ঠিত করার কাজে শরীক হতে সকলেই ঐক্যবদ্ধ হউন। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করুন। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের সকল উপকরণ প্রতিহত করুন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যুক্ত থাকার মানুষিকতায় এগিয়ে আসুন। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং দেশ ও বিদেশ সকল ক্ষেত্রেই একই মনোভাব পোষণে মনোনিবেশ করুন। কর্মক্ষেত্রে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে সততার আবরণে আর ধর্মীয় শিক্ষায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক সকল লোভনিয় প্রলোভন যা শয়তান দ্বারা ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য আকষর্ণনীয় তা প্রতিহতে মনোনিবেশ করুন। এখনই শুরু করুন এবং নিজেকে সৃষ্টিকর্তার সহকর্মী হিসেবে ভাবতে শুরু করুন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে বর্তমানের উত্তাল পৃথিবীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনুন। আর এটাই হলো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির নিঘুর সত্য এবং ইচ্ছা। মাবুদ আল্লাহ তাঁর মত করে তাঁর সঙ্গে মিল রেখে মানুষ তৈরী করলেন। তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখি, পশু, বুকে হাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত দুনিয়ার উপর রাজত্ব করুক। পরে আল্লাহ তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে। আল্লাহ তাদের আশির্বাদ করে বললেন, তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হও, আর নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে দুনিয়া ভরে তোলো এবং দুনিয়াকে নিজেদের শাসনের অধীনে আন। এছাড়া তোমরা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী এবং মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো প্রত্যেকটি প্রাণীর উপরে রাজত্ব কর। এই রাজত্ব করার সময় এখন শুরু হয়ে গেছে তাই আল্লাহ ভক্তরা একত্রিত হউন এবং পৃথিবীর মাঝখান থেকে পাপকে দুরীভূতকরণের জন্য উপযুক্ত ভুমিকা রাখুন। শয়তানকে পৃথিবী থকে বিতাড়িত করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন এবং সৃষ্টিকর্তার কর্মী হিসেবে নম্র ও কোমল হৃদয়ের ক্ষমাশীল ইতিবাচক কল্যাণকামী হয়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। চলমান এই দ্বন্ধ বা দৃশ্যমান সকল নেতিবাচক প্রকাশ; যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কার্যকরী হয়ে উঠুন। আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টি সকল কিছু দেখে একটি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল আর তা হলো “সত্যিই চমৎকার হয়েছিল”। আসুন আমরা পৃথিবীকে আবার পুনরায় সেই চমৎকার অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টায়রত থাকি। সেই চমৎকার অবস্থানই পারে বর্তমান বৈষম্য বা যুদ্ধ বন্ধ করতে। হ্যাঁ আসুন এই বর্তমান থেকে চমৎকার অবস্থানে ফিরে যেতে শান্তির যাত্রা শুরু করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.