আফগানিস্তানের মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়াবে পাকিস্তান, উজবেকিস্তান

আন্তজার্তিক ডেক্স ॥ পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান আফগানিস্তানের মাধ্যমে শুধু সড়ক বা আকাশপথে নয়, ট্রেনের মাধ্যমেও যোগাযোগ বাড়াতে সম্মত হয়েছে, যা পাকিস্তানকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সংযুক্ত করবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বৃহস্পতিবার উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শভকাত মিরজিওয়েভের সাথে আলোচনার পরে এই তথ্য জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের সফররত উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকের পরে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান বলেন যে, দুই দেশ ঐতিহ্যগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি তীর্থযাত্রা পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রচারের মাধ্যমে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং প্রেসিডেন্ট মিরজিওয়েভের মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের পাশাপাশি তাদের প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল, যা আফগানিস্তদানের বিরাজমান পরিস্থিতি এবং ইসলামোফোবিয়ার মতো বিষয়গুলোর উপরও আলোকপাত করেছিল।
যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান পরিমাণ এবং দুই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ইমরান বলেছেন যে, গত বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০ শতাংশ বেড়েছে এবং যৌথ উদ্যোগ পাঁচগুণ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘উভয় পক্ষই শুধুমাত্র বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে নয়, সাংস্কৃতিক সংযোগের মাধ্যমে (দ্বিপাক্ষিক) সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে সম্মত হয়েছে। উভয় দেশেরই একটি যৌথ সংস্কৃতি ও ইতিহাস রয়েছে।’
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা আরও বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করতে দুই রাষ্ট্রপধান গত শুক্রবার দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি আলোচনাসভায় যোগ দেবেন। উর্দু এবং উজবেক ভাষার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার সাধারণ শব্দ প্রকাশ করে একটি বই উপস্থাপনের জন্য উজবেক প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উভয়ে দেশ উজবেক বংশোদ্ভূত মুঘল সম্রাট জহিরুদ্দিন বাবরের উপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে নিরবচ্ছিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সম্পর্কে সফরকারী গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অবহিত করেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাব বাস্তবায়নে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামোফোবিয়া নিয়ে আলোচনা করার সময়, দুই নেতা একমত হন যে, বাক স্বাধীনতার নামে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কোনো অবমাননা অনুমোদন করা যাবে না। ইমরান খান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন, বাকস্বাধীনতার অজুহাতে মহানবী (সাঃ)-এর অবমাননার বিরোধিতা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান বলেছেন যে, উভয় পক্ষই আফগানিস্তানের মাধ্যমে সংযোগ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। তিনি যোগ করেছেন, ‘কানেক্টিভিটি প্রকল্পগুলো শুধুমাত্র পাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের জনগণকে উপকৃত করবে না বরং আফগানিস্তানকেও উপকৃত করবে যারা গত ৪০ বছরে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, পাকিস্তান এবং উজবেকিস্তান উভয়ই আফগান সরকারের স্বীকৃতির দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন উপায়গুলো নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিদেশী ব্যাংকগুলোতে আফগান সরকারের সম্পদ মুক্ত করার জন্য লবিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তার বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট মিরজিওয়েভ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উনয়নের প্রশংসা করেন। তিনি আরো বলেন, উভয় দেশ শুধু কৌশলগত অংশীদারিত্বই গড়ে তুলছে না, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনও করছে। মিরজিওয়েভ তাকে এবং তার প্রতিনিধি দলের প্রতি উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি যোগ করেছেন যে, কোভিড মহামারীর কারণে তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সফর বিলম্বিত হয়েছে; তবে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০তম বার্ষিকীতে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সূত্র: ট্রিবিউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.