আমিষের চাহিদা পূরণে ভরসা পাঙ্গাস, ব্রয়লার ও গিলা কলিজা

ঢাকা॥ গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ৯০০। পছন্দ করে মাছ কিনতে গেলেই কেজি পড়ছে ৪-৫শ’ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে তাই একমাত্র ভরসা ১২০ টাকা কেজির পাঙ্গাস ও ১৪০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি। আরও অসহায় মানুষগুলো সন্তানের মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দিতে কিনে নিয়ে যাচ্ছে মুরগির পা ও গিলা-কলিজা।
শুক্রবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর সূত্রাপুর, কাপ্তান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার ও গেন্ডারিয়ার স্বামীবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র।
গিলা-কলিজা কেনার সামর্থ্যও নেই, ৬০ টাকা কেজিতে মুরগির পা কিনছেন আম্বিয়া খাতুন। শুধু মুরগির পা কেনার বিষয়ে জানতে চাইলেন ওই নারী বলেন, গত সশুক্রবারে বাচ্চারা বিরানি খেতে চায়। গোসত কিনে বিরানি খাওয়ানোর মতো টাকা তার নেই। তিনি নিজে অন্যের বাসায় কাজ করেন। স্বামী একটা কোম্পানিতে ডেলিভারিম্যানের কাজ করেন। বেতন মাত্র ৮ হাজার টাকা। বাচ্চাদের পড়াশোনা ও ঘর ভাড়া দেওয়ার পর একদিন ভালোমতো বাজার করার সামর্থ্যও তাদের হয় না। বাধ্য হয়েই মুরগির পা দিয়ে বিরানি রান্না করে সন্তানদের খাওয়ান। সর্বশেষ মাংস কবে খেয়েছে আপনার সন্তানেরা? এমন প্রশ্নের উত্তরে আম্বিয়া বলেন, গত ঈদে একজন গোশত দিয়েছিলেন। এরপর আর পরিবারে গরুর গোশত কেনা হয়নি, খাওয়া হয়নি। মাছ কিনি মাঝেমধ্যে, সেটাও পাঙ্গাস।
স্বামীবাগ বাজারে গিলা-কলিজার কেজি কত টাকা? জানতে চাইলে দোকানদার আরশাদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আগে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করতাম। ক্রেতা বাড়ায় এখন ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে। কাস্টমারও বেশি আগের চেয়ে। কাস্টমার বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি, খাসি ৯০০ টাকা, কর্ক ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৪০ টাকা ও দেশি মুরগী ৫২০ টাকা কেজি। অন্যদিকে পাঙ্গাস বাদে মাছের বাজারে কেউ ঢুকতেই সাহস পায় না। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় লোকজন গিলা-কলিজা কিনছে। একসময় যে মানুষটা মুরগি কিনে গিলা-কলিজা দোকানদারকে দিয়ে যেতেন, তিনিই আজকে এসেছেন সেই গিলা-কলিজার ক্রেতা হয়ে। এমনই এক নারী জানালেন কেন গিলা কলিজা কিনছেন। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেই হারে আয় বাড়েনি। তাই বাধ্য হয়েই গিলা কলিজা কিনছি। কিছুদিন আগেও এসব গিলা কলিজায় বিষাক্ত পদার্থ আছে জেনে মুরগি কেনার পর দোকানদারকে দিয়ে যাইতাম। কী করব, করার কিছু নেই। গিলা কলিজা দিয়েই পরিবারের আমিষের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।
গত শুক্রবার (১১ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, নারিন্দা ও গেন্ডারিয়া রেললাইনের মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্রেতাই পাঙ্গাশ মাছ কিনছেন। কমেছে মাছ কেনার পরিমাণও। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, যারা কয়েকদিন আগেও হাফ কেজি, এক কেজি বা দুই কেজি মাছ কিনতেন। তারা এখন ২৫০ গ্রাম মাছ কিনেই বাড়ির পথ ধরছেন। অনেকে দাম শুনে না কিনেই ফিরে যায়। এসব বাজারে পাঙ্গাস মাছের দাম ছিল ১৪০ টাকা কেজি, মাঝারি বেলে মাছ ৬০০ টাকা কেজি, শিং মাছ (চাষের) ৪০০ টাকা, জাটকা ইলিশ ৩০০ টাকা, কই ২০০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, সিলভারকাপ (এক কেজি সাইজ) ২২০ টাকা, রুই (এক কেজি সাইজ) ২৮০ টাকা, বাইম ১২০০ টাকা, বোয়াল ৯০০ টাকা, শোল ৭০০ টাকা, ফলি ৫০০ টাকা, আইর (ছোট) ৬০০ টাকা, পাবদা ৫০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, চিংড়ি (মাঝারি) ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর সামুদ্রিক পোয়া মাছ ২০০ টাকা ও সুরমা মাছ ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, আগে যেখানে কয়েক পদের মাছ মিলে কয়েক মণ মাছ বিক্রি হতো প্রতিদিন। সেখানে বর্তমানে ১৫/২০ কেজি বিক্রি করায় কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ায় তাদের ব্যবসাও কমে গেছে।
গত শুক্রবার (১১ মার্চ) সবজির বাজারেও দাম নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের। নতুন কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। বিক্রি হচ্ছিল ৮০ টাকা কেজি। নতুন পুঁইশাক নামলেও দাম ৪০ টাকা কেজি। লাল শাক, মেথি শাক, পালং শাক আগের মতোই ১০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে। লাউশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা আর আলু ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া করলা, ঢেড়স আর পটল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। তবে বেশিরভাগ মানুষ ২০ টাকা দিয়ে এক বোঝা (১০/১২ টি) ডাটা নিয়ে যাচ্ছেন। সূত্রাপুর বাজার সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, দেশে প্রচুর শাক সবজি আবাদ হচ্ছে। প্রচুর পরিমাণে মাছ চাষও হচ্ছে। এরপরও দাম না কমা মানে হচ্ছে জ্বালানি তেল বৃদ্ধির ফলে গাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়া। এর ওপর বাড়তি হিসেবে যোগ হয়েছে সয়াবিনসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়া। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে কারা, তা জানেন না নিজাম উদ্দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.