দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেক্স ॥ ২০ বছরে কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করলেও তিন ফরম্যাটে প্রাপ্তির খাতায় কিছু ছিল না বাংলাদেশের। এবার অধরা জয়ের আশাতেই সফরে গিয়েছিল। আগের দলগুলো যা পারেনি, সেটাই করে দেখালো তামিম ইকবালরা। সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। এই বছর নিউজিল্যান্ডে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় এলো ঐতিহাসিক ওয়ানডে জয়ও। তাতে তিন ম্যাচের প্রথমটি জিতে ১-০ তেও এগিয়ে গেলো সফরকারী দল। মূলত সব বিভাগে পরিকল্পনা নিয়ে লড়েই সাফল্যের ফুল ফুটিয়েছে তামিমরা। ব্যাট হাতে শুরুতে টস হেরেও বাংলাদেশ ছুড়ে দিতে পেরেছিল ৩১৫ রানের অনতিক্রম্য এক লক্ষ্য। যে মাঠে একবারই ৩১৯ রান তাড়া করে জেতার নজির দক্ষিণ আফ্রিকার।
এমন পরিসংখ্যানের মুখে ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। যার বড় কৃতিত্ব শরিফুল-তাসকিনের। মাঝে বাভুমার সঙ্গে ৮৫ ও পরে ডেভিড মিলারকে নিয়ে ৭০ রানের জুটি গড়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। কিন্তু বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের মুখে রান রেটের বাড়তি চাপ প্রোটিয়ারা পরে আর নিতে পারেনি। ৪৮.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছে ২৭৬ রান।
চতুর্থ ওভারে শুরুর আঘাতটা হানেন শরিফুল। ৪ রানে মুশফিককে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মালান। নবম ওভারে প্রোটিয়াদের আরও বিপদে ফেলে দেন তাসকিন। তার দুর্দান্ত গতির কাছে পুরোপুরি পরাস্ত হন ওপেনার ভেরিয়েনে। এলবিডাব্লিউ হয়ে ২১ রানে ফিরেছেন। দুই বল পর তাসকিন তুলে নেন নতুন ব্যাটার এইডেন মারক্রামের (০) উইকেটটিও! পয়েন্টে মিরাজের কাছে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন এই ব্যাটার। তাতে বিশাল লক্ষ্যের বিপরীতে পাওয়ার প্লেতেই চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। পাশাপাশি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং প্রোটিয়াদের খোলসবন্দি রাখে অনেকক্ষণ। ধীরে ধীরে চাপে পড়ে যাওয়া পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছিলেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও বাভুমা। ৮৫ রানের জুটিতে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান তারা। প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমাকে ফিরিয়ে স্বস্তি ফেরান পেসার শরিফুল। বাড়তি বাউন্সে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। সেই ফাঁদে পড়েই গ্লাভসবন্দি হন বাভুমা। তাতে ৩১ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।
স্বাগতিক দল হাল ছাড়েনি এর পরেও। ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইটা চালিয়ে নিতে থাকেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। ১১তম হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন প্রোটিয়া ব্যাটার। এই জুটিতে একটা সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছিল ঠিকই, সমান্তরালে বাড়তে থাকে রান রেটের চাপও। এই সময় মেরে খেলতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ইয়াসির আলীর অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ডুসেন। তাসকিনের বলে বিদায় নেওয়ার আগে ৯৮ বলে করেছেন ৮৬ রান। তাতে ছিল ৯টি চার ও এক ছয়। তার বিদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭০ রানের জুটি ভাঙার পরেই মূলত শেষ হয় যায় সব সম্ভাবনা। অবশ্য প্রোটিয়া ব্যাটারকে আরও আগেই ফেরানো যেত। বাংলাদেশ তাকে রানআউট করলেও তিনি বেঁচে গেছেন টিভি আম্পায়ারের ভুলে! ডুসেনের ফেরার পর মিলার প্রান্ত আগলে লড়াই অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু লেজের ব্যাটাররা সঙ্গ দিতে পারেননি তাকে। মিরাজের ঘূর্ণিতে একে একে ফিরেছেন আন্দিলে ফেলুকাও, মার্কো ইয়ানসেন ও কাগিসো রাবাদা। সঙ্গীহীন হয়ে মিলারও ফিরেছেন এর পর। মিরাজের বলে স্টাম্পড হয়েছেন ৭৯ রানে। মিলারের ৫৭ বলের ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৩টি ছয়। তার পর লুঙ্গি এনগিদি ও কেশব মরাহাজ বিলাসী শট খেলে বিনোদন দিলেও শেষ দিকে তা ব্যবধানই কমিয়েছে। মাহমুদউল্লাহ কেশব মহারাজকে এলবিডাব্লিউ করলে সিরিজের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়ারা অলআউট হয় ২৭৬ রানে।
বল হাতে মেহেদী মিরাজ ছিলেন সবচেয়ে সফল। ৬১ রানে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। ৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। শরিফুল ৪৭ রানে নিয়েছেন দুটি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৪ রানে একটি। শুরুতে টস হেরেই ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সতর্ক শুরুর পরও প্রোটিয়াদের ৩১৫ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেয় সফরকারী দল। ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ৩১৪ রান। ঢিমেতেতালায় শুরুর পর ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসেন তামিম-লিটন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৫ রানের রেকর্ড ওপেনিং জুটিও গড়েন তারা। পরে ছন্দপতন ঘটলেও ইনিংসটা ভালো জায়গায় পৌঁছাতে বড় অবদান সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলীর শত রান ছাড়ানো জুটির। ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিও ছিল এটি। ১১৫ রানের এই জুটির পর মেহেদী মিরাজ-তাসকিন আহমেদের শেষের কার্যকারিতায় ইনিংসটা পেয়েছে অনতিক্রম্য একটা জায়গা। কারণ, সেঞ্চুরিয়নে ৩১৯ রান তাড়া করে জেতার নজির একটিই। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই রান তাড়ায় জিতেছিল প্রোটিয়ারা। গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ার পথে সাকিব ৬৪ বলে খেলেছেন ৭৭ রানের ইনিংস। ম্যাচসেরা হন তিনি। সঙ্গী ইয়াসিরও দেখা পেয়েছেন ফিফটির। অর্ধশত করেছেন ওপেনার লিটন দাসও।

Leave a Reply

Your email address will not be published.