দেশকে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলব…প্রধানমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে দেশকে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলব। যাতে বিশ্বের কাছে কোনো বাঙালিকে আর মাথা নিচু করে চলতে না হয়। দেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন অগ্রগতিকে আলোর পথের যাত্রা আখ্যায়িত করে তিনি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। গত বৃহস্পতিবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তেজগাঁওয়ের নিজ কার্যালয়ে তিনি এ পুরস্কার বিতরণ করেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সমগ্র জাতি এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, অনুরোধ থাকবে-সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে সমৃদ্ধ করে তোলা। উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে আমরা মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাব। আলোর পথের এ যাত্রা অব্যাহত থাক, বাংলাদেশের মানুষ সুখী-সমৃদ্ধ এবং উন্নত জীবন লাভ করুক। তিনি বলেন, ‘যে জাতি নিজের মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়, স্বাধীনতার জন্য রক্ত দেয় সে মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কথা বলে গেছেন।’ আমিও এটা বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি-তা ধরে রেখে এর সুফল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব এবং দেশে দেশে খাদ্য সংকট থাকলেও আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তার সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, দেশে বেসরকারি খাতে গণমাধ্যমকে ছেড়ে দেওয়ায়-এর অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে অনেক ছোটখাটো বিষয়ও এখন সামনে চলে আসছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংকটের বিষয়টি বিশ্বের অনেক দেশ প্রচার করে না।
তবে আমরা জানি অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি সারা বিশ্বে যারা মোড়লগিরি করে বেড়ায় তাদেরও অনেক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলেও করোনাভাইরাস মোকাবিলা করেও বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা আমরা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ জন্য তার সহকর্মী এবং সংশ্লিষ্টদের দিন-রাত পরিশ্রমের উল্লেখ করে তাদের তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, সরকারি লোকেরা যেমন করেছেন, তেমনি আমার দলের লোকেরাও আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে।
‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে অনেক মানুষ ছড়িয়ে আছেন-যারা নিজেদের উদ্যোগেই মানুষের সেবা করেন। সেই ধরনের মানুষগুলোকেও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদেরও পুরস্কৃত করতে হবে। যারা মানুষের কল্যাণে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন-এমন অনেকেই কখনো প্রচারে আসেননি। তারা দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকেন। তাদেরও খুঁজে বের করে আমাদের পুরস্কৃত করা উচিত। যাতে তাদের দেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং অন্যরা শিক্ষা লাভ করতে পারে। তিনি বলেন, মানুষের সেবা ও কল্যাণের মধ্যদিয়ে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়-হাজার ধন সম্পদ বানালেও সেটা হয় না। কাজেই সেভাবে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১-রূপকল্প অর্জনের পর এখন আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। যাতে আগামী দিনে আমাদের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে।
আর এ ব্লদ্বীপ অঞ্চলের মানুষ যাতে আগামীতে একটি সুন্দর জীবন পায় এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন পেতে থাকে সেজন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা এ সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। ফলে বাংলাদেশ আর পরমুখাপেক্ষী থাকবে না। বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে উঠবে এবং বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের স্বাবলম্বিতা অর্জনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে গেলে অনেকের পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা শুনতে হতো। কিন্তু আজকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা এতদূর অর্জন করেছি যে-আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের শতকরা ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। এটা যেন অব্যাহত থাকে- সেটাই আমরা চাই। ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ নিলেন নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি : অনুষ্ঠানে মঞ্চ থেকে নেমে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুদ্দীন আহমেদ ও আব্দুল জলিলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য এবার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (মরণোত্তর) শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম) (মরণোত্তর) ছাড়াও মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস এবং সিরাজুল হক (মরণোত্তর) ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন।
‘চিকিৎসাবিদ্যায়’ পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম এবং ‘স্থাপত্যে’ ক্যাটাগরিতে প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়াও, ‘মুজিববর্ষে’ বাংলাদেশকে শত ভাগ বিদ্যুতায়নে সাফল্যের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ বিভাগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং সম্মানী চেক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এবং ‘স্বাধীনতা পুরস্কার পদক-২০২২’ বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে শোনান। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.