সরকার ভুল পথে চলছে: ডা. জাফরুল্লাহ

প্রশান্তি ডেক্স ॥ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভুল পথে চলছে বলে মনে করছেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সব কাজই দরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভুখা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ মার্চ হরতালের সমর্থনে এ ভুখা মিছিল প্রেসক্লাবের সামনে থেকে হাইকোর্ট মোড়, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর হয়ে হোটেল ৭১–এর বিপরীতে রাস্তায় গিয়ে শেষ হয়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে সবাই অনুরোধ করে আমি যেন বিএনপিকে নিয়ে কিছু না বলি। কিন্তু মাঝেমধ্যে না বলে পারি না। বিএনপি বহু জায়গায় “না” বলছে। তারা বলেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এটাকে আমি পূর্ণ সমর্থন করি। আজকে আরেকটা বিষয়ে বিএনপিকে “না” বলতে শিখতে হবে। এই যে খালেদা জিয়াকে বারবার জামিন না দিয়ে বা জামিনের নামে বারবার অপমান করা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে যে প্রক্রিয়ায় বাইরে রাখা হয়েছে, সেটি অপমানজনক। বরং খালেদা জিয়াকে আবার সেই নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারেই ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। তিনি বাইরে থেকে কী লাভ হচ্ছে? তিনি তো আমাদের সঙ্গে এসে মিটিং করতে পারছেন না। জনগণের হয়ে কথা বলতে পারেন না। আপনাদের (বিএনপি) কাছে আমার অনুরোধ। আপনারা আন্দোলন–সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসুন। তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করুন। এতে সবারই লাভ হবে।’ এই সরকার গরিব–দুঃখীদের দেখে না উল্লেখ করে জেএসডির সভাপতি আ স ম রব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের ন্যায্যমূল্যে ভাত দেন, রুটি দেন—নইলে গদি ছেড়ে দেন।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান সরকার সাধারণ জনগণের কোনো তোয়াক্কা করে না। অন্যদিকে এক মন্ত্রী বলেন, ‘দাম বাড়লে কী হয়েছে? সাধারণ মানুষের কেনার ক্ষমতা তিন গুণ বেড়েছে।’ তাই সাধারণ মানুষের উচিত এসব বিষেয়ে প্রতিবাদ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে হরতাল করা।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘দেশের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে আমাদের সবাইকে মিলে দেশকে বাঁচাতে হবে। এই সরকারকে হটাতে হবে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু বলতে হচ্ছে, এমন দেশের জন্য আমি যুদ্ধ করিনি।’ ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২৮ মার্চ সোমবার দেশের জনগণের বেঁচে থাকা ও দুই কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে রেশন দেওয়ার দাবিতে আধা বেলা হরতাল ডাকা হয়েছে। সে হরতালে আমরা রাজপথে থাকব। দিনমজুর, অসহয় মানুষ , রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যানচালক, সরকারি–বেসরকারি মধ্যে আয়ের সর্বস্তরের জনগণকে এ হরতাল সফল করার আহ্বান জানান তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ৫ টাকার জিনিস ৫০ টাকা হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে এর মাধ্যমে সরাসরি জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য যত বাড়ে, ভ্যাট–ট্যাক্স তত বাড়ে, সরকারের কোষাগারে টাকা জমা হয়। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করতে সুবিধা হয় সরকারের লোকদের, নিজেদের পকেট ভরতে পারে তারা। এসব অন্যায়–অবিচার বর্তমান সরকার চালাতে পারছে, কারণ জনগণকে তারা তোয়াক্কা করে না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ূম, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর ভিপি নুরুল হক প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.