সেবা থেকে জনগণ যেন বঞ্চিত না হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বা আ॥ সরকারি সেবা থেকে জনগণ যেন বঞ্চিত না হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রোববার সকালে শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। কাজেই সেই জনগণকে ঘিরেই আমাদের সমস্ত কাজ। জনগণের সার্বিক উন্নয়নটাই আমাদের লক্ষ্য।” 

“আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে… তারা যেন কখনও সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারণ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্যই তো আমাদের এই স্বাধীনতা। কাজেই যখনই যে যেখানে দায়িত্ব পালন করবেন, অবশ্যই মানুষের কথা চিন্তা করবেন।”

গত রোববার ১২১, ১২২, ১২৩তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি যুক্ত হন অনুষ্ঠানে।

নবীন সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যে যেই এলাকায় কাজ করবেন সেই এলাকা সম্পর্কে জানতে হবে। সেখানকার মানুষের আচার আচরণ সম্পর্কে জানতে হবে। জীবন-জীবিকা সম্পর্কে জানতে হবে এবং কীভাবে তাদের উন্নতি করা যায় সেই বিষয়েও আপনাদের জানার সব থেকে ভালো সুযোগ রয়েছে।“আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রজেক্ট বিভিন্ন এলাকায় কার্যকর হয়। অনেক সময় সেই সব এলাকায় কাজের সময় জমি নির্দিষ্ট করা বা এই ধরনের নানা কাজে সমস্যাও দেখা দেয়। সেখানে আমি মনে করি একটা সমন্বয় একান্তভাবে প্রয়োজন। কাজগুলো যাতে সুপরিকল্পিতভাবে হয় সেই দিকটায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত।”

কেবল নবীন কর্মকর্তা নয়, বিভিন্ন দপ্তরে যারা উচ্চ পদে আছেন, তাদেরও একই নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “যারা বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়নে আছেন, আমরা যেগুলো করে দিই, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বিষয়টা দেখতে হবে।”

বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমি মনে করি বাংলাদেশটাকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেবেন। কারণ আমরা চাই এদেশ এগিয়ে যাক।

“৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু। তারা সেটা দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। শুধু প্রধানমন্ত্রী না। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো সুনিশ্চিত করা, তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং দেশের উন্নয়নটা তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়ন করা।”

বিসিএস ক্যাডারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজকে আপনাদের মধ্য থেকেই সবাই উচ্চপদে যাবেন এবং দেশের জন্য আরো উন্নত কাজ করবেন। মাঠ পর্যায়ে কাজের মধ্য দিয়ে আপনারা যে জ্ঞান লাভ করবেন, সেটাই আগামী দিনে আরও যখন উচ্চ পর্যায়ে যাবেন, আরও বাস্তবভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।“বিশেষ করে বাংলাদেশকে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল কারিগর আপনারাই হবেন। কাজেই এখন থেকেই আপনাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “একটি প্রশিক্ষিত দক্ষ সিভিল সার্ভিস সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অন্যতম সহায়ক শক্তি বলে আমি মনে করি। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দেই সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্বটা কিন্তু আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

“কাজেই সেইক্ষেত্রে আপনাদের… আমি মনে করি, আধুনিক যুগের ছেলে-পেলেদের মেধা এবং শক্তি, জ্ঞান, উদ্ভাবনী চিন্তা, ভাবনা আরও অনেক বেশি স্বচ্ছ, অনেক বেশি শক্তিশালী। কাজেই আপনাদের জ্ঞান মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে এই দেশকে আপনারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং জনগণের সেবা করবেন। সেটাই আমরা চাই।”

বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। কোভিড মোকাবিলা করে মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথাও তিনি বলেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.