চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মিলানোর সময় এখন

চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মিলানোর সময় এখন নয়! তবে হিসেবে নিকেশের গরমিল খুজে পাওয়ার সময় এখন। সকল মানুষের জন্য বা সৃষ্টির জন্যই হিসেবের দিন ধার্য্য করা আছে। তবে এখন আমরা যে যার মত করে হিসেব কষে যাচ্ছি কিন্তু আমাদের কৃতকর্মের হিসাব একমাত্র একজনই করেন এবং করবেন আর তাঁরই কাছে হিসাব দিতে হবে এমনকি সমর্পিত হতে হবে। তবে পৃথিবীর পাওয়া স্বীয় কর্তব্য দায়িত্বের হিসাব স্ব স্ব ক্ষেত্রের প্রধানদের নিকট দিতে হয় এবং হয়েছে ও হবে। আমাদের রাজনীতিবিদ, আলেম-ওলামা মাশায়েক, পীর, ফকির, দরবেশ, পালক, পুরোহিত, ব্রাহ্মণ, ভিক্ষু, রাজকর্মচারী, কর্মকর্তা, ছোট বড়, সমাজের উঁচু নীচু, শিক্ষক, ছাত্র, মালিক-শ্রমীক মোট কথা সবারই জবাবদিহি বা হিসাব দেয়ার সময় আসন্ন। আমরা এই হিসেবের কথা কখনো একটি বারের জন্যও ভাবিনা বরং দুনিয়াবি চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। রাজনীতিতে কি পেলাম, কৃষি কাজে কি পেলাম, শিক্ষা জীবনে কি পেলাম, সামাজিক জীবনে কি পেলাম, কর্মক্ষেত্রে কি পেলাম, মা-বাবার নিকট থেকে কি পেলাম বা আর কি কি পাব, শ্বরুর বাড়ী থেকে কি কি পেলাম আর কি কি পাব, অন্যের সম্পদ আত্মস্বাদ করে কি পেলাম, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থেকে কি পেলাম, কুটবুদ্দি খাটিয়ে কি পেলাম, মোট কথা পাওয়ার আকাঙ্খায় ব্যতিব্যস্ত জীবন এখন সর্বময়। কি পেলাম কি পেলাম করতে করতে কারো জীবন শেষ আবার কারো জীবন শেষের দিকে দৌঁড়াচ্ছে কিন্তু হুশ – জ্ঞান হারানোরা আর হুশ জ্ঞান ফিরে পাচ্ছে না। হায়রে সময়! এাঁকেই কি বলে শেষ সময়। শুধু পাওয়ার আশায় এখন সবাই দৌঁড়াচ্ছে। তবে কি পাওয়ার জন্য আর কিসের জন্য তা কি কেউ ভেবে দেখেছে?
কি দিলাম বা দেয়ার জন্য এই পৃথিবীতে এসেছি তা কি কেউ খতিয়ে দেখেছি? না দেখিনাই বা দেখার ইচ্ছা এমনকি আগ্রহও নেই। তবে এই দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশে অক্ষমদের মাঝেও সক্ষম কিছু মানুষ রয়েছে। যাদেরকে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টিই করেছেন দেয়ার জন্য। হ্যাঁ দেয়ার জন্য। তবে আমরা নিজেকে, সমাজকে, পরিবারকে, রাষ্ট্রকে, সংস্কৃতিকে এমনকি বিশ্বকে কি কি দিতে পারি তা কি একটু পরখ করে দেখবেন? দেয়া নেয়ার যুগে অনেকেই দিয়ে যাচ্ছেন আর অনেকেই ঐ দেয়াতে নিজ স্বার্থ হাছিল করে যাচ্ছেন। আসুন না আমরা একটু ধ্যান করি যে, আমরা কি কি দিতে পারি এবং কিসের জন্য সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তা খুজে বের করি। সৃষ্টিকর্তার কি উদ্দেশ্য আমাদেরকে নিয়ে? তিনি কি করাতে চান আমাদেরকে দিয়ে? কেন তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন? এই বিষয়গুলি কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? না দেখি না বরং আমরা আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে এটাঁ করেছি, এটাঁ করবো, সেটা করবো এইসবই ভেবে যাচ্ছি এবং নিজ প্রয়োজনে করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ যিনি আমাদের মালিক এবং যিনি আমাদেরকে সকল কিছু দিয়ে যুগিয়ে যাচ্ছেন এবং সুরক্ষায় ও নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর কথা কি ভাবছি! না এখন আমাদের ভাবার সময় কই? আমরাতো ব্যস্ত এখন আরো পাওয়ার আশায়। তবে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা ব্যবহারে ব্যস্ত হওয়ার সময় এখন। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন অন্যের সেবা করার জন্য, অন্যের প্রয়োজনের যোগান হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রাখার জন্য। পৃথিবীকে নিজেদের শাষনের অধিনে আনার জন্য; দেখাশুনা করার জন্য। আর আমরা কি করছি?
সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা আমাদের জন্য আছে, তাই আমাদের নতুন করে নিজেদের মঙ্গলের জন্য কোন পরিকল্পনা করার কি দরকার আছে? না বরং সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা অনুসন্ধান করা দরকার। আল্লাহর কালাম আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে,“তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি, আর সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য, উপকারের জন্য, অপকারের জন্য নয়, আর সেই পরিকল্পনার মধ্যদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।” আসুন ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হওয়ার নিমিত্তেই সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা অনুসন্ধান করি। আসুন আমরা জাগতিকতাকে পাশ কাটিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে এমনকি চীরস্থায়ী জীবনের অবস্থানকে আকড়ে ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হই। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে নিস্বার্থ ও নি:শর্তভাবে কাজ করি। পাওয়ার আশায় নয় বরং দেয়ার আশায় কাজ করি। একবারে সাধারণ জীবন যাপন করি এবং মানব কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হই। সকল নেতিবাচকতা পরিহার করি এবং ইতিবাচকতা আনয়ন করে চর্চায় জাগ্রত থাকি। যে যেসকল দায়িত্ব পেয়েছি সেই দায়িত্ব সর্বাত্মকভাবে শতভাগ সততা দিয়ে সাজিয়ে ব্যবহার করি। সৃষ্টিকর্তার দেয়া দায়িত্বের ১ম ও শেষ কাজটুকু করি যাতে সৃষ্টিকর্তা আমার – আপনার মাঝে কাজে, চিন্তায়, বাস্তবায়নে সদা জাগ্রত থাকে আর চিন্তা ও কাজের সমন্বয়ে দৃশ্যমান বাস্তবায়ন প্রকাশিত হয়। ইহকালিন ও পরকালীন কাজের সমাপ্তি টানতে নিয়োজিত হই। আসুন সকল নেতিবাচকতা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্দেশ দূরীভূত করি। খোদার জ্ঞান যাচনা করি। কারন তাঁর কাছে চাইলে প্রচুর পরিমানে দান করেন। তবে এই ক্ষেত্রে আমার উপলব্ধি হলো চাওয়ার মতো চাইতে হবে। তবে চাওয়ার ব্যাপারে সৃষ্টিকর্তা অনেকদিন আগে আমাদেরকে শিখিয়েছেন বা বলেছেন যে, “তোমরা সৃষ্টিকর্তায় সবসময় আনন্দ কর; পুনরায় বলবো, আনন্দ কর। তোমাদের অমায়িক স্বভাব মানুষের কাছে প্রকাশিত হোক। প্রভু নিকটবর্তী। কোন বিষয়ে চিন্তিত হয়ো না, কিন্তু সমস্ত বিষয়ে মুনাজাত ও ফরিয়াদ দ্বারা শুকরিয়া সহকারে তোমাদের সমস্ত চাওয়ার বিষয় আল্লাহকে জানাও। অবশেষে হে ভাইয়েরা, যা যা সত্যি, আদরনীয়, ন্যায্য, বিশুদ্ধ প্রীতিজনক, যা যা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদগুণ ও যে কোন কীর্তি হোক, সেসব বিষয় নিয়ে চিন্তা কর। তোমরা আমার কাছে যা যা শিখেছ, গ্রহণ করেছ, শুনেছ ও দেখেছ, সেসব করতে নিজেদের ব্যস্ত রাখ; তাতে শান্তির আল্লাহ্ তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন।” হ্যা তাই যেন হয়।
ভাইয়েরা চাওয়া-পাওয়ার উর্দ্ধে উঠে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করুন, নিজ, পরিবার, সমাজ, দেশ ও সরকার, রাজনীতি-ধর্মনীতি, শিক্ষাব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রেই আমরা যেন আল্লাহর ইচ্ছায় এবং সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত হয়ে নিবেদিত প্রাণ কর্ম সম্পাদন করতে পারি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে শিক্ষা ও দিক্ষা নিয়ে সম্মানের সুউচ্চস্তরে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। দিনের শেষে, রাতের শেষে, যুগের শেষে সৃষ্টিকর্তার জয়জয়াকার হবে এবং নিশ্চিত গন্তর্বের পথে সকলেই নিশ্চিতভাবে এগুবে। এইক্ষেত্রে গোল্ডেন রোল’র বা স্বর্নের আইন হিসেবে পরিচিত আইন কায্যে পরিণত করি। “তোমরা যা আশা কর তা আগে করে দেখাও” এই কাজটুকু চর্চা শুরু করা আবশ্যক। সম্মান আশা করলে আগে অন্যকে সম্মান করা শুরু করি, কারো ¯স্নেহ ও ভালবাসা পেতে চালেই আগে ¯স্নেহ ও ভালবাসতে শুরু করি। এইভাবেই চলবে আমাদের ইতিবাচক বেহেস্তি জীবন এবং জাগ্রত থাকবে পৃথিবীতে শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.