ঈদ অভিজ্ঞতা

ঈদ ছিল, ঈদ আছে এবং ঈদ থাকবে। ঈদ মানে আনন্দ আর আনন্দ মানে খুশি। তাই খুশি বঞ্চিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই এই খুশির ব্যবস্থা করেছেন। তবে বিভিন্নভাবে এই খুশি উদযাপিত হয়। আর প্রতিনিয়তই এই খুশিকে উদযাপিত করে যাওয়াই হলো মানবের কর্ম ও ধর্ম। খুশির রাইরে কোন মানুষ থাকুক তা খোদা তায়ালা চায় না। তবে শয়তানের প্ররোচনায় এবং লোভের বশবর্তি হয়ে খুশি বঞ্চিত হয় অনেকেই। তবে বেশীক্ষণ এই খুশি বঞ্চিত রাখা যায় না। তবে বিভিন্ন ধর্মের বেড়াজালে কোন একদিন একত্রে খুশি উদযাপন করানো হয় সকলকে। তবে ধর্ম-বর্ণ এবং গোত্র ভেদে এই খুশি উদযাপনেরও রয়েছে রকম ফের। সেই ক্ষেত্রেও সৃষ্টিকর্তা ব্যালেন্স করেছেন সার্বজনীন কিছু কৃষ্টি-কালচারের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। সেই ক্ষেত্রেও খুশির ব্যত্যয় ঘটেনি এবং ঘটবেও না; আর এটাই সৃষ্টিকর্তার সাফল্য এবং শয়তানের পরাজয়। মানুষকে তিনি খুশিতে রাখবেনই এবং খুশিতে রাখার জন্য সকল ব্যবস্থাই তিনি করেছেন। যাতে করে তাঁর সৃষ্টি খুশিতে থাকতে পারেন এবং খুশিমনে সকলকিছু করে যেতে পারেন।
জন্মের পর থেকে ঈদ আনন্দ এবং ঈদের সাম্য ও সৌহাদ্য উপভোগ করেছি এবং করতে দেখেছি। তবে দিন দিন এর দূরত্ব এবং এর দৌরাত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই ঈদের খুশির ক্ষেত্রেও যেন কেমন এক অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সার্বজনীন খুশির আমেজ বা আনন্দ উপভোগে কিছুটা গতি কমে এক জৌলুসহীন উদযাপনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঈদ জামাতে লোক সমাগম বেড়েছে কিন্তু এর ব্যাপ্তি বা ধর্মীয় গাম্বিয্যের পরিধি কমেছে। মানুষে মানুষে সৌহাদ্য এবং আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শৃঙ্খলার যথেষ্ট অভাব দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় সৌন্দর্য্য ও ভাব-গাম্বিয্য এবং তাৎপর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আর কিছু কিছু জায়গায় সার্বিক অবনতি হয়েছে। তবে দালান কোঠার শ্রী বৃদ্দি পেয়েছে বটে। সব মিলিয়ে ঈদের তাৎপয্যে ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি শৈশবে দেখিনি কিন্তু দিন দিন এর ব্যপ্তি বৃদ্ধি পেয়ে ধর্ম ও কর্ম দুটোই যেন বিলিন হওয়ার দিকে এগুচ্ছে।
বিশেষ করে এবারের ঈদে অনেক জামাত দেখেছি এবং শুনেছি কিন্তু কোন জামাতই যেন নির্দিষ্ট সময়ের আগে সমাপ্ত হয়নি। তবে পরে হওয়ার নজির যথেষ্ট রয়েছে। আর এটাই বাঙ্গালীর রীতি ও রেওয়াজ; যা দীর্ঘদিনের চর্চারও ফসল বটে। কিন্তু এইবারই একটি ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হলো য়ে, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ঈদের জামাত হওয়ার কথা সকাল ৯ ঘটিকায়। আর বার বার মাদ্রাসার মাইকে এলানও হয়েছে তাই। কিন্তু দভার্গ্য হলো বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টিকে রহমতের বৃষ্টি হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে ঈদের জামাত কেন ৫ মিনিট আগে শুরু হল! এখানে বক্তব্য বা ব্যখ্যা হলো যে, হুজুর ঈদের জামাতের তাকবির , নিয়ত ও নিয়ম সম্পর্কে বলতে ছিলেন; ঠিক ঐ সময়ই বৃষ্টি শুরু হলো; কিন্তু বৃষ্টির তীব্রতা তেমন ছিল না। তবে পাঁচ মিনিট আগে হঠাৎ সিদ্ধান্ত হলো এখনই নামাজ শুরু হবে আর হলোও ঠিক তাই। বৃষ্টিতে ভিজে অনেকে এসে মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে পারেনি এবং অনেকে পেরেছে কিন্তু কোন জায়গা না থাকায় নামাজ আদায় করতে পারেনি। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু নামাজ প্রত্যক্ষ্য করেছে মাত্র। ঈদের নামাজ সুসমাপ্ত হলো মাত্র ৫ মিনিটে। আর ঐ বৃষ্টিও শেষ হলো একই সময়ে। ঠিক নয়টা বাজতেই নামাজ শেষ। মুসুল্লিরা দৌঁড়া দৌঁড়া করে ছুটছিল আর কেউ কেউ খুৎবা পাঠ শুনছিল। শেষে মোনাজাত করে ঈদের পর্ব শেষ করলো। আনুমানিক ২০০শত লোক ঈদের জামাত বঞ্চিত হলো। এই খবর জানার পর কিন্তু ইমাম সাহেব জানিয়ে দিলেন দ্বিতীয় জামাত হবে না।
এইখানে আমার প্রশ্ন হলো যেখানে মুসল্লিদের জন্য জামাত একটু বিলম্বিত হয়েছে এবং হবে অথবা হয় সেখানে কেন এমন হলো? জামাত কার জন্য? মুসুল্লীদের জন্য? ঈদ কার জন্য? খুশী কার জন্য? তবে যদি সময় ক্ষেপন হয় সেইক্ষেত্রে বেশী সময় অপেক্ষা না করা ভাল আর ঘোষিত সময় থাকতে সুযোগ না দেয়া খুবই খারাপ। আরো বিষয় হলো দ্বিতীয় বার জামাত দেয়ার সুযোগ থাকাসত্ত্বেও না দেয়া একটি অঘ্য বা অশিক্ষিতের কাজ হয়েছে বলে মনে হয়। এইখানে আল্লাহর কালামের কথা বলা যায় যে, “তোমাদের মুখের কথার হ্যাঁ যেন হ্যাঁ হয় আর না যেন না হয়।” এই কথাটির বাস্তব ব্যবহার অনুপস্থিত। আলেম-ওলামা এবং জ্ঞানী-গুনী ও শ্রদ্ধেয় মানুষদের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ এবং নিন্দনিয় শিক্ষা অনাকাংখিত। কথায় আছে ওয়াদা বরখেলাফকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। যাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না তাহলে তাদের নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত, এক কথায় এবাদত কিভাবে আল্লাহর কাছে গ্রহলযোগ্য হবে? মানুষকে আল্লাহ সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেখানো এবং করে দেওয়াই যাদের কাজ তারা কিভাবে মানুষকে খুশী বঞ্চিত এবং আল্লাহর সান্নিধ্য বঞ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালায়? তাই সকলের নিকট অনুরোধ মুখের কথা রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট হউন। নতুবা নিজেরাই খোদার দিদার বঞ্চিত হয়ে পথ হারা বা দিশেহারা পথিক সেজে অন্ধত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ হবেন। আমি আপনি কেউই জানিনা আমাদের ভবিষ্যত । তবে আল্লাহর ইচ্ছা ও অভিপ্রায় জানি এবং মানি, তাই কেউ একটি ভুল করলে সকলের চোখেই পড়ে এবং সেই ভুলের দরুন বড় ধরনের ভুলের জন্ম নেয় যা শেষ পর্যন্ত পাপ ও মহাপাপে পর্যবসিত হয়েছে, হবে এবং হচ্ছে।
আসুন আমরা আল্লাহর কালামের হেফাজত করি এবং কালাম ব্যবহারে সহজলভ্য উপায় অবলম্বন করি। মানুষকে সুযোগ করে দিই যেন তারা প্রত্যেকেই আল্লাহর কালাম ব্যবহারে উদ্যোগি ও যত্নশীল হয় এবং সকলকে নিয়ে এবাদতের আনন্দ উপভোগ্য, মনোযোগী এবং কৃতকর্মে দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করেন এবং সবাইকেই ভাল বাসেন। ঈদ আনন্দ ছিল, যানবাহনে, শৃঙ্খলায়, রাস্তাঘাটে। কারণ রাস্তা-ঘাট ছিল মসৃণ এবং নিজঞ্জাল। নৌ, স্থল এবং আকাশ উভয় পথেই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছিল। মানুষজনও সচেতন এবং চোখ-কান খোলে নিরবচ্ছিন্ন যাতায়ত সম্পন্নে মনোযোগী ছিল। সকলের প্রচেষ্টা এবং আল্লাহর সুরাক্ষা আর জনগণ ও সরকারের আন্তরিকতায় সুফল এ পর্যন্ত মানুষ ভোগ করতে পেরেছে। সর্বোপরি ঈদ পরবর্তী ঈদানন্দ সফল বলেই বিবেচিত হতে চলেছে। নিন্দুকেরাও খোঁত ধরার কোন সুযোগ এখনও বের করতে পারেনি তবে আল্লাহ চাইলে হয়ত আর পারবে না। এ যাত্রায় ঈদ এবং ঈদানন্দ ছিল স্বতস্ফুর্ত। সরকার, জনগণ, প্রশাসন এবং সাবজনীনতা ছিল এক ভিন্নমাত্রার। করোনা পরবর্তী উদযাপনগুলো যেন শান্তির ও আনন্দের এবং পাশাপাশি স্থিতিশীলতারও বটে। সবাইকে ঈদ মোবারক, স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আগামীর দিনগুলো আরো সুন্দর, নির্মন, শান্তি এবং আনন্দের এবং নিশ্চয়তার নিশ্চয়তায় কাটুক এই কামনায় সকলের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গল চেয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে আরাধনায় রাখছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.