নম্রতায় প্রশান্তি

কথায় আছে অহংকার পতনের মূল আর নম্রতা উন্নতির সোপান বা চাবিকাঠি। তবে এতে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত ও পথ থাকতে পারে কিন্তু আমি এই নম্রতাকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করি। যে যত নম্র সে তত বেশী জ্ঞানী এবং গুনী। নম্রতা এবং সরলতার মধ্যে একটি অদ্ভুত মিল বা সেতুবন্ধন রয়েছে। বিশিষ্ট জনেরা এবং নবী ও রাসুলগণ এই নম্রতা এবং সরলতাকে পছন্দ করতেন এবং প্রাধান্যও দিতেন। মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তা এই নম্রতা ও সরলতাকে বেহেস্তি রাজ্যের সঙ্গেও তুলনা করেছেন।

আজ আমাদের নম্রতা কোথায়? কেন আমরা নম্রতা ও সরলতাকে ভুলে গিয়ে আত্ম অহমিকায় বা অহংকারের বশবর্তী হয়ে অথবা দুনিয়াবী লোভ ও লাভের বশবর্তী হয়ে পাগলামী করে যাচ্ছি। নিজে শুধু সম্মান পেতে চাচ্চি কিন্তু অন্যকে সম্মান দিতে চাচ্চি না। নিজেকেই শুধু বড় মন করছি কিন্তুু অন্যকে তাঁর স্বীয়টুকুও দিচ্ছি না। অন্যকে বড় করে দেখার মানুষিকতাটুকুর বিলুপ্তী ঘটিয়ে শুধু নেতিবাচক এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সংস্কৃতি চালূ করে যাচ্ছি। যার যার যোগ্য সম্মান তাকে দিতে হবে এবং সকল ভাল কাজের প্রশংসা ও প্রাপ্যটুকু দিয়ে সংস্কৃতির শুভ যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। ভুল শোধরানো বা ভুল নিয়ে কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ আমাদের সামনে কিন্তু ঐ ভুলগুলো থেকে বা ঐ ভুলগুলোকে নিয়ে আরো কোন নতুন ভুল করা যাবে না। বা ঐ ভুলগুলোকে নিয়ে নেতিবাচক ও মুখরোচক সংস্কৃতি চালূ করতে যাওয়া সমুচিন হবে না। নিজেদের জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করি। আল্লাহ এই জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যপারে কঠোরভাবে বলেছেন তার পাক কালামে। যা আমরা সকলেই জানি। আর একটি গুরুত্ব বিষয় আমাদের জন্য আল্লাহ তাঁর পাক কালামে বলেছেন তোমরা যেমন ব্যবহার পেতে আশা কর ঠিক সেইরকম ব্যবহার তোমরা আগে করে দেখাও। এই কালামের বানীকে কেউ কেউ বা পাশ্চাত্য সমাজ গোল্ডেন রোল বা স্বর্ণ আইন বলেও স্বীকৃতি দিয়েছেন। হ্যা আমরা আমাদের প্রত্যাশা এবং চাওয়া পাওয়ার অভিপ্রায়ে নিজেরা স্ব স্ব ভুমিকা এবং দায়িত্বটুকু আগে পালন করি।
নম্র হলে কেউ ছোট হয়েছেন এই দৃষ্টান্ত এখনও পর্যন্ত ইতিহাসে, সমাজে এবং সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়নি এবং অদুর ভবিষ্যতে আর পাওয়া যাবেও না। বরং নম্রতায় বড় থেকে আরো বড় এবং ছোট দায়িত্ব থেকে আরো বড় দায়িত্বে অধিষ্ঠিতের স্বীকৃতি এবং ইতিহাস বড় মজবুত। তাই কেন আমরা ইতিহাসের অমর সত্যকে পাশ কাটিয়ে মিথ্যাকে নিয়ে ছুটাছুটি করছি। আল্লাহর কালাম বলে, তোমার ভুল স্বীকার কর, নম্র এবং ভঙ্গুর হৃদয়ে ক্ষমা চাও, তৌবা কর, অন্যকে ক্ষমা করে দাও। তাহলেই তোমার মুক্তি এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত। এখানে সরলতাও একটি বড় গুণ বা উপাদান, নম্র হওয়ার পর, ক্ষমা পাওয়ার পর সেই শিশুসুলভ সরলতায় মুখরিত হয় সবকিছু। তাই সরলতায় পাওয়া যায়, জ্ঞান, বিজ্ঞতা এবং প্রাজ্ঞতা আর মহান খোদার দেয়া শ্রেষ্ঠ্র উপহার বেহেস্ত। কারন আল্লাহর কালামে এও লেখা আছে তোমরা শিশুর মত সরল হও; বেহেস্তি রাজ্য এদেরই জন্য। আসুন আমরা নম্রতায় এবং সরলতায় পূর্ণ হয়ে বেহেস্তি রাজ্যের বাসিন্দা হিসেবে আনন্দ করি এবং আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালনে তাঁর স্বমহিমার সকল গুনগান প্রকাশ করি।
রাজনীবিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজনীতিবিদ, ধর্মীয়জ্ঞান সম্বৃদ্ধ সমাজবীদগণ এবং সরকার বেসরকারী সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, কৃষক শ্রমীক, জনতা আর সমাজের সকল স্তরের উুঁচ-নীচু মানুষজন আসুন আমরা সকলে মিলে নম্রতাকে আর সরলতাকে আকড়ে ধরে আগামীর জীবন যাপনে গভীরভাবে মনোনিবেশ করি। স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্ব স্ব অবস্থানে নম্রতা ও সরলতার সর্বোচ্চ ব্যবহার অব্যাহত রাখি। দেখি আগামীর দিনগুলো আমাদেরকে আরো কত উচ্চ এবং উন্নত আর শান্তির সম্মিলনে বেহেস্তের মনোলোভা আবরণে আবৃত করে পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সুযোগ দিয়ে বেহেস্তে প্রবেশ করান। আমরাই পারি এবং পেরেছি আর পারব। শুধু দরকার এখন মনোভাবের পরিবর্তন এবং চর্চার অব্যাহত জাগরণ। কেউ কাউকে ছোট করব না বরং সবাই সবাইকে সম্মান ও শ্রদ্ধায় আর ভালবাসার আলিঙ্গণে আবদ্ধ করব। একে অপরকে সুযোগ দিয়ে, সম্মান দিয়ে, কাজের প্রশংসা করে সহযোগীতা করব। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। এই বাক্যগুলোকে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে গুরুত্ব দিয়ে জীবিত করে রাখব।
জীবনের প্রশান্তি পাওয়ার জন্য নম্রতা প্রয়োজন আর নম্রতাকে জাগ্রত করে জীবনকে আরো ফলপ্রসু করার জন্য নম্রতার ফল হিসেবে সরলতাকে জীবনের সকল কর্মকান্ডে দৃশ্যমান রাখা প্রয়োজন। জীবনে ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়া হয় এবং হবে আর অতীতেও হয়েছে। তাই সকলে সজাগ থাকুন আর ভুলের রাজ্যে গ্যাঁ না ভাসিয়ে বরং নম্রতায় এবং সরলতায় গ্যাঁ ভাসিয়ে আগামীর সুন্দর; অনিন্দ সুন্দর পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে নির্মল আনন্দের প্রশান্তি উপভোগ করুন এবং অপরকে করাতে অবদান রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.