সততার শক্তি ছিল বলেই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছিলাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই তার সরকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমরা এটা করেছি। বিদেশি সাহায্যে নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে, যেটা আজ করা সম্ভব হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব।’

গত বুধবার বিকেলে গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির প্রশ্ন তোলে, তখন তিনি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। এ অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং কানাডার আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে, এই সংক্রান্ত সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা। কিন্তু সে সময় একটি প্রচণ্ড চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং দেশের ভাবমূর্তি নিয়েও নানা ধরনের কথাবার্তা দেশের অনেকে বলেছে।

তিনি বলেন, এই কষ্ট লাগাটা স্বাভাবিক। কারণ এদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সন্তান হিসেবে বাবাকে তারা খুব একটা কাছে পাননি। তাই এই স্বাধীন দেশে আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন প্রধান কাজই হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা।

তিনি আরও বলেন, নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তেই তার ক্ষমতায় আসা। কিন্তু ‘অপবাদ’ দিতে চেয়েছিল আর সততার শক্তি ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছিলেন তিনি। দেশের মানুষের অফুরন্ত সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই পদ্মা সেতু করা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল নয়, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে।’ আজকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের শতকরা ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা এ সময় পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতে একটি ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর অর্থায়ন বন্ধে বিশ্ব ব্যাংকের পদক্ষেপের পেছনে ঘরের শত্রু ‘বিভীষণকে’ দায়ী করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংককে দোষ দেবো না, কারণ ঘরের শত্রু বিভীষণই হয়। আপনারা জানেন, ড. ইউনূসই এই কাণ্ডটা ঘটিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদটার জন্য, যে পদ তিনি বয়সের কারণে হারিয়েছিলেন। পরে তিনি সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নসহ সবার বিরুদ্ধে ২টি মামলা করেও সেখানে পরাজিত হন।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘ব্যাংকের আইন অনুযায়ী তিনি সেই ব্যাংকের এমডি থাকতে না পারাতেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে অর্থাৎ আমেরিকার সরকারকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করেন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিতে।’

সুপরিকল্পিতভাবেই তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এই ব-দ্বীপ অঞ্চলকে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে মুক্ত রেখে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে তার সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি, যেসব এলাকা অবহেলিত ছিল সেসব এলাকায় নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেগুলোকে উন্নত করে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার সরকার তৃণমূল পর্যায় থেকে মানুষের উন্নয়ন করেছে বলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে এবং দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, করোনার ছোবল সত্ত্বেও এবারের সেন্সাস রিপোর্টে দেশের দারিদ্র্যের হার আরো কমে আসবে। তার সরকার যে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের ওপরে তুলেছিল, তা করোনাকালীন ৩ দশমিক ৫ এ নেমে গেলেও (৩ মাসের জন্য) এখন আবার প্রায় ৭ এ তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে।

২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এজন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে, সে বিষয়ে প্রস্তুতি ও পদক্ষেপও তার সরকার নিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন রেমিট্যান্স যেমন ভালো আসছে, তেমনি রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনশক্তি রপ্তানিও বেড়েছে। আগামীতে যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসার সম্ভাবনা, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কাজও সরকার হাতে নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ৭৫ এর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘৭৫ এর পরে ক্ষমতা চলে গিয়েছিল মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে। তারা উর্দি পরে ক্ষমতা দখল করত, আর উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ হয়ে যেত। এভাবেই রাষ্ট্রটা চলছিল। ফলে দেশের উন্নয়ন হয়নি, তাদের নিজেদের উন্নয়ন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশে ১৯ থেকে ২০টি ক্যু হয়েছে, যাতে সবচেয়ে খেসারত দিয়েছে আমাদের সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী। তাদের হাজার হাজার অফিসার-সৈনিককে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। বোমাবাজি আর গুলির শব্দ ছাড়া কোনো শিক্ষক বা ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুমাতে পারত না, এটা তাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। পাঠ্যক্রমে ছিল সেশন জট।’

সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই তারা একে একে সব জায়গায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে এবং উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করে এর সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আজকে অন্তত এটুকু বলতে পারি যে, বাংলাদেশটা বদলে গেছে। দেশে আজ মঙ্গা নেই, ২ বেলা খাবারের নিশ্চয়তা বিধানের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি নিশ্চয়তা বিধানে সরকার কাজ করছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি বৈঠকে উপদেষ্টাদের দলের ‘থিংক ট্যাংক’ আখ্যায়িত করে দলের তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সম্মেলন করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান।

আগামী ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় সম্মেলন আয়োজন সম্ভব বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.