প্রতিবন্ধকতা একটি দুরারোগ্য ব্যাধি

প্রতিবন্ধকতা নামক মরন ব্যাধিতে বিশ্ব এখন নাকাল। এই ব্যাধি দুরীকরণে কারো কোন প্রচেষ্টা এখন আর চলমান নেই। তবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে নানান কৌশল এখনও বিদ্যমান রয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় এবং বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে পাল্লাদিয়ে অগ্রসর হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা। রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাগুলোই আজ বেশী ক্ষতিকর বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। মানুষের সুখ; শান্তি, উন্নতির অন্তরায় হিসেবে প্রতিবদ্ধকতা হিসেবে উল্লেখিত ছিল একমাত্র শয়তানের (ইবলিশের) ফাঁদ; কিন্তু আজ ঐ উপরোল্লেখিত বিষয়গুলো ফাঁদের হতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ইবলিশ এখন উপরোল্লেখিত বিষয়গুলোর সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে এবং ইবলিশ তার সকল চক্রান্ত বা অন্যায়ের রাজ্য বিস্তার ও পরিচালনা করে থাকেন ঐ বিষয়গুলো ব্যবহার করে এবং ঐ বিষয়গুলোর সাথে মানুষের যোগসম্বন্ধ নিবীর। মানুষ কোনভাবেই ঐসকল নেতিবাচক বিষয়ালোক থেকে পৃথক হতে পারে না। মানুষ চুম্বকিয় আকর্ষনে ঐসকল বিষয় নিয়ে জীবনকে দুর্বীসহ উপভোগে নিমজি¦ত হচ্ছে। কিন্তু ঐ লোভ, ঘৃণা, এবং ক্ষমতা এই তিনের সমন্বয়ে গঠিত সকল অনায্য অবস্থার অবস্থান থেকে বের হওয়ার সহজ ও সরল পথকে বাইপাস করতেই মানুষ ও যুগের চাহিদার অন্যতম আকর্ষণ।
আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে যে জ্ঞান ও গুণ এর বৈশিষ্ট্য থাকার কথা তার কোনটিই আজ আর চর্চায় অবশিষ্ট নেই। কি আর করার পৃথিবীর শিক্ষায় শিক্ষীত মানুষজন বেশীই এগুচ্ছে দুনিয়াবী কামীয়াবীর উদ্দেশ্যে। এই কামীয়াবীর পথেই রয়েছে লোভ, ঘৃণা, ক্ষমতার বাহাদুরী, অন্যের ক্ষতি করা, সমাজ ও সংস্কৃতিকে বিনাশ করা, রাষ্ট্রের অমংগলের শিকল সম্প্রসারিত করা, এককথায় সকল নেতিবাচকতাকে উৎসাহ দিকে এগিয়ে নেয়া। আজ আমরা কারো উন্নতিতে খুশি হয় না বরং ঐ উন্নতিকে স্তব্ধ করে দিতে মরিয়া হয়ে কাজ করি। কারো দ্বারা উন্নুতির সোপান রচিত হলে তার ধ্বংসে মরিয়া হয়ে সকল নেতিবাচক কর্মকান্ড পরিচালনা করাই এখন যুগের কর্ম বলে চালিয়ে দেয়া; কারো ভাল ও গ্রহণযোগ্য কাজের প্রশসংসা নয় বরং সমালোচনা এবং খোঁত ধরাই যেন স্বভাবের সতেজতায় চর্চা। শুধু নিজের এবং নিজের দলের প্রয়োজন যাচনা করা। নিজের কল্যাণের তরে অন্যকে ব্যবহার করা। নিজ নিজ কল্যাণ সাধনে ভবিষ্যৎ ফন্দি আটা। সকল অন্যায়কে ন্যায়ে পরিণত করার মহাযজ্ঞে অতি উৎসাহী ভুমিকা পালনে তৎপর থাকা। দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষনীয় আর লোভনিয় বস্তু হলো অর্থ যা বিভিন্ন আকৃতির এবং প্রকৃতির ও মূল্যমানের হয়ে থাকে যার জন্য পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই পাগলরত। এই অর্থই এখন অনর্থের কারণও বটে। অর্থের জন্য বিসর্জন দিচ্ছে মান-সম্মান-হায়া-মায়া। অর্থের জন্য বিসর্জন দিচ্ছে সকল বিভেক। কথায় আছে মানুষের সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে তাঁর নিজের বিভেক। কিন্তু এই বিভেকই আজ কলুষিত হচ্ছে অর্থের দ্বারা। অর্থ এখন মানুষকে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে সততা থেকে। বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে সৃষ্টিকর্তা থেকে। বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে সকল ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহার থেকে।
অর্থের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকেই আজ এই অশান্ত পৃথিবীর রূপ প্রকাশিত হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ হাছিলের জন্য মানুষ মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে, প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিতে মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। যুদ্ধ, লুটপাট, হত্যা, গুম, এবং ভাল কাজের বিরোধীতা চলমান ধারাবাহিকতার ক্রমোন্নতিকল্পে নতুন নতুন লোভনীয় ফাঁদ তৈরী হচ্ছে। এইসকলকে এককথায় প্রতিবদ্ধকতা নামক মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করার উপযুক্ত সময় এখন। দুরারোগ্য ব্যাধি বলার সময় এখন। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থানে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োজিত হওয়ার রেওয়াজকে কলুষিত করে প্রলংকরী ঝড়ো গতিতে এগুচ্ছে প্রতিবদ্ধকতার নতুন সংস্কতৃতি। কমসংস্থানে পদোন্নতি একটি রুটিনমাফিক কাজ যা নিয়ম-নীতি ও সততার চর্চায় নিয়োজিত কর্মঠ ও অভিজ্ঞ মেধার বিকাশমান সফলতার ছাপ; কিন্তু এইখানেও আজ প্রতিবন্ধকতার জোয়ার বইছে। ইতিবাচকতা সকল অর্জন যেন আজ নেতিবাচকতায় পর্যবসিত হচ্ছে এবং এই প্রতিবদ্ধকতার মূল অস্র হচ্ছে অর্থ ও ক্ষমতা এই দইটি উপাধান। আমরা যা দেখছি ও শুনছি এবং বুঝেছি তার সবটুকুই এখন প্রতিবন্ধকতার ব্যবহারে এবং এর অন্তরালে চাচার প্রস্কুটিত এক গোলাপ; যা ধ্বংসই করেনি বরং সমূলে বিনাশ করে প্রলয়ঙ্করী কিয়ামতের আলামতের প্রাথমিক কাজটুকু সুসম্পন্ন করে চুড়ান্ত কাজের ইতি টানার হাতিয়ারে পরিণত হবে।
পৃথিবী এখন ধ্বংনের দ্বারপ্রান্তের দিকে এগুচ্ছে আর সেই এগুনোতেও আমরাই সাই দিচ্ছি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। কেউ প্রতিবন্ধকতায় জড়িত হয়ে আর কেউ দিচ্ছি জড়িত না হয়ে; যেমন ঐ প্রতিবন্ধকতায় মুখে কুলপ এটে বসে থেকে অথবা নিরবে সব সহ্য করে, অথবা মৌন সমর্থন যুগিয়ে। সোচ্চার হওয়ার সময় নিরব থেকে প্রতিবদ্ধকতাকারীর দলের অর্ন্তভুক্ত হয়েছি বটে; তবে সময় এখনও আছে এই অন্যায় এবং নীতিহিনতার বিরুদ্ধে এমনকি সৃষ্টিকর্তাবিরোধী কাজে সায় না দিয়ে বরং এর নিরসনকল্পে কাজ করুন। যা যা ভাল হচ্ছে তার প্রশংসা করুন এবং আর যা যা ভাল হবে তার সহযোগীতা এবং সমর্থন যুগিয়ে সামনে এগিয়ে যান। আর যা যা ভাল’র আদলে ভবিষ্যতে খারাপ হবে তার গঠনমুল যুক্তি ও মুক্তির পথ দেখানোতে সরব থেকে সামনে অগ্রসর হতে হবে। এতেও প্রতিবন্ধকতা আসবে এবং তা মোকাবেলা করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে এবং কঠোর ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পৃক্ত হউন এবং সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে থেকে অল্পদিনের জিন্দিগীতে যবনীকাপাত টানুন।
উন্নয়ন প্রতিবন্ধকতা, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং স্থিতিশীতার প্রতিবন্ধকতা, শান্তির প্রতিবন্ধকতার অগ্রসরতাই চলমান সরকারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীরা আজ নিশ্চিত যে, তারা আগামীতে ক্ষমতা আসছে এবং সেই কারণে তারা তাদের আগামীর প্রতিবন্ধকতাগুলোকে গুছিয়ে সাজিয়ে এটে যাচ্ছেন। তবে আমার প্রশ্ন এই নিশ্চয়তাটুকু কে দিয়েছে! জনগন না বর্তমান সরকার তা খতিয়ে দেখতে বলছি সকলকে। জনগণ যে দেয়নি তা শতভাগ নিশ্চিত কিন্তু সরকার দিয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। আর যারা আগামীতে ক্ষমতায় আসবেন তাদের হম্বি-তম্বিতে দিশেহারা জনগন। যেভাবে মুখরোচক গল্প, বুলি এবং অসংযতভাবে হুংকার ছড়াচ্ছেন তা যেন মরণব্যাধি কভিড ১৯এর চেয়েও ভয়ংকর। আগামীর জন্য ঐ ভয়ংকর দানবীয় শক্তির উন্মেষ না ঘটানোর প্রক্রিয়ায় শান্তিপ্রীয় মানুষজন এগিয়ে আসতে হবে। শান্তিপ্রীয় নি:লোভ ও পরোপকারীরাই পারে ঐ বিষবাষ্পের সঠিক জবাব দিতে। রাষ্ট্র এবং সরকার এখন পর্যন্ত ঐ প্রতিবন্ধকতার এমনকি প্রতিবন্ধকদের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার জবাই দিতে সক্ষম হননি। তাই শান্তিপ্রীয় মানুষজন ছাড়া এর বিকল্প আর কিছু দেখছি না। তাই আহবান জানাই, শান্তি স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এমনকি গতিশীলতা চলমান রাখতে এখনই কাজ করত হবে আর তা আমাদেরই করতে হবে। তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে, আমাদের সরকারের সঙ্গে কিন্তু গৃহপালিত ইবলিশরা যুক্ত আছেন; তাদের রোষানলে পড়ে আপনার-আমার অনেক ক্ষতি সাধিত হতে পারে। আর ঐ ক্ষতির নেতিবাচকতার জয়ের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।
সামনে আসছে ভয়ংকর ভিভিষিকা বা প্রলংকরী ঝর যা থানানোর প্রক্রিয়া এখনই পুরোদমে শুরু করতে হবে। সচেতন মহল এবং শান্তিপ্রীয় মানুষজন এগিয়ে আসুন এবং আগামীর সকল প্রতিবন্ধকতায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে মোকাবিলা করুন। দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান আর উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে শান্তি ও স্মৃতিশীলতা এবং চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখুন। কারো পক্ষে আর কারো বিপক্ষে নয় বরং সততা আর ন্যায়ের পক্ষে কাজ করুন। প্রথমে প্রতিবন্ধকতা নামক দুরারোগ্য ব্যধি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন এবং তৎপরবর্তীতে বিশ্বকে রক্ষায় দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করুন। আমাদের এই মাতৃভূমিকে রক্ষায় শতভাগ নিয়োজিত হউন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং রণাঙ্গনের সকল ইতিবাচক রণকৌশল নিয়ে। ভাষা, শিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি, পরিকল্পনা এবং সমন্বয় ও চৌকস দৃষ্টিশক্তি, আগাম অশনিসংকেত বোঝার প্রখরতা এবং দুরদৃষ্টিসম্পন্ন বুদ্ধিদৃপ্ত সফলতার উর্বর কৌশল প্রয়োগে নিয়োগ এবং নিয়োজিত দুটোই একত্রে করুন। প্রীয় মার্তৃভূমি বাংলাদেশের কল্যানের তরে অগ্রসর হউন; যেমনিরূপে ১৯৭১সালে মুক্তিযোদ্ধারা করেছিল; আজ সেই আবেগের এবং ঐক্যের আরেকটি মহড়া জাতিকে প্রত্যক্ষ করান। এর দ্বারাই মুক্তি এবং ভক্তি জাগ্রত থাকবে। সকল প্রতিবন্ধকতার বিদায় ঘটিয়ে শান্তির মহামিলনের সম্মিলন ঘটাতে কাজ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.