উন্নয়নের উদ্ধগতি

উন্নয়ন একটি উন্নত শব্দের বহি:প্রকাশ। উন্নয়ন সাধনে ব্যস্ত এখন সবাই। তাই উন্নয়নের গতি ও প্রকৃতির লাগাম টানা জরুরী হয়ে পড়েছে। জীবনের উন্নয়ন, কর্মের উন্নয়ন, ব্যবসার উন্নয়ন, পরিবেশের উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নয়ন, জ্ঞানের উন্নয়ন এবং দেশের উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, ঘর-বাড়ি, শৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা, সেবা, রাজনীতি, শিল্প-কল-কারখানার উন্নয়ন, ধর্ম ও কুসংস্কারের উন্নয়ন; সর্বোপরি উন্নয়নের গতিময়তায় দিশেহারা সাধারণ মানুষ, খেটে-খাওয়া মানুষ। কিন্তু একটি জায়গায় এখনও তেমন উন্নয়ন হয়নি বা হওয়ার কোন লক্ষণও দেখা যায়নি; যা হলো সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কউন্নয়ন। ঈমান, আমল, বিশ্বাস ও নিতী রীতিতে যদি পরিবর্তণ ও স্থায়ীভাবে উন্নয়ন ঘটনোর প্রয়োজন হয় তাহলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন আত্মিক উন্নয়ন বা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন। সেই উন্নয়ন সাধিত হলেই বাকি সবগুলোরই সুচকে স্থায়ীভাবে উন্নীত হবে। আমাদের এখন এই উন্নয়নের দিশেহারা গতিতে লাগাম টেনে ধরে সৃষ্টিকর্তার সাঙ্গে স্ব স্ব উন্নয়ন সাধনে মনোনিবেশ করতে হবে। নতুবা উন্নয়নের মহামারিতে বিলীন হতে আর বেশী দেরী হবে না। চর্তুদিকের উদ্ধগতির চাপে পৃষ্ট হয়ে আমরা যে সঠিক উন্নয়ন যাত্রা করেছিলাম সেই যাত্রা থেকে ছিটকে পড়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। তবে এই ক্ষেত্রে চেষ্টার ত্রুটি কেউই করছে না বা সঠিক চেষ্টায় নিয়োজিত হতে পারছে না; তাই করজোরে মিনতি করি যেন, সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যের উন্নয়নে মনোযোগী হউন এবং সেই উন্নয়নের মাধ্যমেই সঠিক উন্নয়নের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে সামনে এগিয়ে যান।
জীবন চলার পথের উদ্ধগতি যেন বিদ্যুতের গতিকেও হারা মানাচ্ছে। নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর গতি বৃদ্ধি, মহামারির উপর্যপুরী আক্রমন, মানুষের হিংস্রতার গতিবৃদ্ধি, দয়া-মায়া ও ক্ষমার বিলুপ্তি, মিথ্যার জয়ের গতিময়তা, ষড়যন্ত্রের মূলে গভির গতিময়তাসহ আরো অন্য অনেক উপাদান ও উপকরণের গতিময়তা যেন স্বাভাবিক ও স্থায়ী এবং স্থীতিশীল উন্নয়নের গতিকে ম্লান করে দিতে প্রলংকরী রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে। তাই সময় থাকতেই সাবধান হউন নতুবা আমরা আমাদের অস্তীত্বকে এবং স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল জীবনানন্দকে হারাবো। ছন্দ্মময় শান্তীপ্রীয় জীবনের স্বাদ আস্বাধনে সৃষ্টিকর্তার অভীপ্রায়ে স্ব স্ব ধর্মের আলোকে কাজ করুন এবং কাজ করার সময় এখনই। সাম্যের এবং ন্যায় বিচারের সময় আসন্ন। খোদার বিচারের মুখোমুখী হওয়ার আগে নিজেরাই নিজের বিচার নিজেই করে সামনে অগ্রসর হউন। খোদাকে বা সৃষ্টিকর্তাকে আপনার এবং আমার জীবনে কাজ করতে সুযোগ দিন। উন্নয়নের মহাসড়কে এখন আমরা কিন্তু এই সড়ক থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে ব্যস্ত বা মরিয়া শয়তান এবং এর দোসররা। তাই সাবধানে অগ্রসর হউন এবং চোখ কান খোলা রেখে কাজের সমাপ্তি টানুন।
উন্নয়নের মহা প্রলয়ে যেন আমাদের মানবিক গুণগুলি না হারিয়ে যায়। করোনাকে জয় করেও হয়নি জয় এমনি অবস্থায় আমরা দাঁড়িয়ে। অপরদিকে প্রলংকরী বন্যায় বারবার আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের মাতৃভূমি। ঐ অঞ্চলের মানুষজন আমাদেরই ভাই ও বোন এবং পিতা-মাতা তুল্য। তাই তাদের প্রয়োজনে যার যা কিছু আছে সেই সবই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন। করোনায় যেভাবে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসার অবশিষ্ট নির্যাসটুকু প্রকাশিত হয়েছিল সেই শেষ সম্বলটুকু নিয়েই এগিয়ে যান বন্যাকবলিত নিরুপায় মানুষের এবং সৃষ্টির পাশে। তারা অসহায় নয়, তারা সাহায্যের প্রত্যাশী নয় বরং তারা ঐ অনাকাংখিত বন্যায় এখন নিরুপায়। তাই সহায়-সম্বল এবং জ্ঞান ও বুদ্ধিসম্পন্নদের পাশে থাকার যাবতীয় সুযোগ কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিকতার মহিমা, গৌরব ও প্রশংসা প্রকাশ করুন। শুধু সিলেটই নয় বরং আপনি, আমিও একদিন ঐ একই বা ভিন্ন কোন বিপদের সম্মুখীন হতে পারি আর তা আসন্ন, তাই আমার আপনার বিপদের কথা বিবেচনা করে বা চিন্তায় এনে ঐ অঞ্চলের সৃষ্টির সকলের কল্যাণে ঝাপিয়ে পড়ুন। মানুষ মানুষের জন্য কথাটি যথার্থ হওয়ার সুযোগ এখনই। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন দুনিয়াকে দেখাশুনা করার জন্য, দুনিয়ার সকল কিছুকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। সকলের কল্যাণে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখে সেবা শুস্রসা এবং শাসন-বারন এর মানদন্ড ঠিক রাখার জন্য। সৃষ্টিকর্তার সহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য। কিন্তু আমরা কি করছি তার হিসেব নিকেশ এখনই করা প্রয়োজন। যাতে আমরা সৃষ্টিকর্তার সহকর্মী হিসেবে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি। সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের সকল দ্বার উন্মোচন করে নি:স্বার্থ ও নি:শর্ত জীবন যাপন করতে পারি সেই সুযোগ এখনই কাজে লাগান। ক্ষমা ও ভালবাসার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হউন। আরো মানবিক হউন। কল্যাণকামী চিন্তায় আরো উদার হউন। নমনীয়তায় আরো নমনীয় হতে চেষ্টা করুন।
সৃষ্টিকর্তার সেই কালামকে স্মরণে রাখুন-“তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি আর সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য, তোমাদের অপকারের জন্য নয় বরং সেই পরিকল্পনার মাধ্যমেই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।“ হ্যা তাই যেন হয়।
এখন খতিয়ে দেখা উচিত কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে আর কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়নি। যেসকল ক্ষেত্রে হয়েছে তার সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার উন্নয়ন ভাবনার কতটুকু মিল আর যেসকল ক্ষেত্রে হয়নি তার সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার ভাবনার কতটুকু অমিল বা মিল। এই হিসেব নিকেশ করে আগামীর জন্য একটি স্বচ্ছ ও সার্বজনীন উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার ছক প্রকাশ করুন। যাতে সবই হয় সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের। সৃষ্টিকর্তা চাই মানুষের কল্যাণ এবং সৃষ্টির কল্যাণ তাই আপনি ঠিক তাই করুন এবং পাশাপাশি ক্ষমা ও ভালবাসার ব্যাপ্তিটুকু সৃষ্টিকর্তাতে বিলীন করে কার্যসম্পন্নে গতিময়তা আনুন। আমার প্রয়াস আর আপনার প্রয়াস মিলে ফলস্বরূপ সৃষ্টিকর্তার প্রয়ায়ে পর্যবসিত হউক; যেন আগামীর বিশ্ব হউক সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের এবং মানুস হউক সৃষ্টিকর্তার প্রতিমূর্তির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে তাঁর ছিফতে বা ছুরুতে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টির সেবা জীব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাই ঐ রূহানী ছুরুত বা ছিফতের ফল ও সৃষ্টির সেবা জীবের স্বীকৃতির ফল আমাদের জীবন ও কর্মের মাধ্যমে প্রকাশীত হওয়াই বাঞ্চনীয় ও আদম সন্তানের করনীয়। উন্নয়নের উদ্ধগতি এখন সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের উদ্ধগতিতে পরিণত হউক। শেষ সময়ে এসে পৃথিবীর মানুষগুলো বেহেস্তী শান্তির উন্নয়ন ও গতিশীলতার উদ্ধগতি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগুয়ান হউক। আগামীর বিশ্ব হউক বেহেস্তি জীবনের উদ্ধগতির প্রতিযোগীতায় মুখর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.