ঈদ সফলতায় বাংলাদেশ

সদ্য সমাপ্ত ঈদ সফলতায় ভাসছে দেশ। দেশের মানুষ শিকরের টানে ছুটে গেছে নিভৃত পল্লী জননীর কোলে। কিন্তু এই ছুটে যাওয়ায় গতানুগতিক ধারাবাহিকতার উন্নয়ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপভোগ করেছে আপামর জনসাধারণ। তীব্র গরম এবং ক্ষণিকের যানজট যেন পাত্তাই পাইনি মানুষের চাহিদা, আগ্রহ এবং তীব্র আকাঙ্খার কাছে। কেউ কেউ আবার তীব্র গরমের তাপদাহে এবং সিজনাল ঝ্বর ও কাশের শিকারে পরিণত হয়েছে কিন্তু তাতেও মানুষের মনের রঙ্গের কমতি ছিল না।
জীবনের গতিপ্রবাহে বহু ঈদ এবং ধর্মীয় ও সামাজি অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেছি কিন্তু এবারের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতর স্বাধ আস্বাধন করতে পেরেছি। রোগ বালাই, চরম গরমের দুর্ভোগ, যানজট এবং ধোলা-বালির মহড়াই হতাশ এবং নির্বিকার থাকা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। উন্নয়ন ছোয়াই মানুষ এখন নাকাল। তবে উন্নয়নের সুফলও ভোগ করছে লক্ষকোটি জনতা। পদ্মা সেতুর যোগসূত্রে মানুষের সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়েছে এবং জীবনের গতিময়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঈদ সাম্যের এবং ভাতৃত্বের কিন্তু এই দুইয়ে ফাটল ঠিকই রয়েছে। তাই অফিস কলিগ, রাজনৈতিক সহকর্মী, ভিন্ন মত ও পথের মানুষজনদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং এর রেশ ধরেই আগামীতে আরো অকল্যাণকর কার্য প্রবাহমান থাকবে। যা অতীত ও বর্তমানের শিক্ষায় ভবিতব্য হিসেবে বলা সহজ।
অর্থনৈতিক টানাপোড়নেও মানুষের জীবন বায়ূ উদ্ধমূখী এবং দিশেহারা অবস্থায় টালমাটাল গতিতে ঝিমুচ্ছে। কিন্তু এই বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে এর থেকে উত্তরণেরও কোন উপায় নেই। মহামারির ছোয়া, যুদ্ধের ধামামা এবং অর্থ ও মুনাফাখোরদের অতিলোভী কার্যকলাপ থেকে সাধারণ জনতাকে পিষে মারছে। বলা যায় শিলে পাটায় ঘষা ঘষা মরিচের জীবন শেষ। তবে এই এখন আর মরিচ নয় বরং এখন চলছে মানুষের জীবন শেষের পালা।
কর্মসংস্থানে এখনও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে তার উপর আবার স্ব ইচ্ছায় কর্মসংস্থান এর বিলুপ্তি ঘটছে। এই জায়গায় করণীয় কি তা ভেবে দেখা দরকার। বিভিন্ন বাহিনীর যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে কর্মসংস্থান এবং কর্মীদের জীবনের চাকা। বিশেষ করে এন এস আই এর স্বেচ্ছাচারিতা দেশের দারিদ্রের হার বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে এবং আগামীর জন্য অশনী সংকেতে পরিণত হবে। যেমন এনজিও এর পরিধি বা কর্মী ছাটাই অথবা বিদেশী অভিজ্ঞ লোকের দেশ ত্যাগে বাধ্য করার মত ব্যবস্থা। যারা দাতা অথবা যাদের প্রচেষ্টায় ফান্ড বাংলাদেশে আসে সেই ফান্ড আনা লোকদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স না দিয়ে বা বিভিন্ন অজুহাতে দেশ ত্যাগে বাধ্য করাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব আমার সরকারের উপরে বর্তাচ্ছে। এই দিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া জরুরী। নতুবা কর্মসংস্থান শূন্যের ঘরে গিয়ে পৌছবে। সরকার তাঁর পরিকল্পনায় এবং দেশীয় দেশপ্রেমিকদের প্রচেষ্টায় যে কয়টি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু ব্যবসা এবং এনজিও ক্লিয়ারেন্স বিরম্বনায় ঈদানন্দ দু:খের সাগরে পরিণত হয়েছে।
বন্যা এবং করোনা নামক ঘাতকের ছোবল মোকাবিলার সক্ষমতাকে ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অবরোধ দেয়াতে। কিন্তু যাদের জন্য এই অবরোধ তাদের ক্ষতির চেয়ে আমাদের সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ দেশের ক্ষতি বেশী। তবে যারা ঐ অবরোধ নামক শব্দটি ব্যবহার করছে তাদেরও কিন্তু কম ক্ষতি হয়নি বা ভবিষ্যতে হবে না। কিন্তু ঈদ আনন্দের বারোটা বাজাতে এবং সাম্য ও ভাতৃত্বের বন্ধনে ফাটল ধরাতে উল্লেখিত কারণগুলো করণে পরিণত হয়েছে।
এই ঈদে আবার কিছু কিছু বেপরোয়া দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে সম্ভাবনাময় জীবন। তবে সংখ্যায় কম হলেও কিন্তু তাদের সম্ববনার মৃত্যু ঘটেছে এবং পরিবার পরিজনদের জীবনের সর্বনাশী ক্ষতির সম্মুখিন সামগ্রীক এবং সর্বময়তা অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। তবে সবই কিন্তু সাবধানতার বাহিরের এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কৃতকর্মের সমন্বয়ের অভাবের ফল। তাই যাই কিছু করিনা কেন তা যেন অতিত এবং বর্তমানের সমন্বয়ে ভবিষ্যতের কর্মপন্থায় পর্যাবসিত হয়।
এই জীবনের মালিক আমি এবং আপনি নন বরং এই জীবনের মালিক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা (সৃষ্টিকর্তা)। নির্ধারিত এবং নির্দিষ্ট কিছুদিনের জন্য এই জিবনটা তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন তাঁরই উদ্দেশ্যে এবং অভিপ্রায়ে সৃষ্টির কল্যাণে ব্যবহার করার জন্য। যদি না আমরা ঐ ইচ্ছাগুলোকে সর্বাঙ্গে প্রাধান্য দিয়ে কার্যরত থাকি তাহলে সৃষ্টিকর্তা সকল কাজে আশির্বাদ করবেন, সুরক্ষা দিবেন, নিশ্চিত গন্তর্বে পৌঁছতে যা যা করনীয় তাই করবেন। কিন্তু ব্যতয় ঘটে শুধু আমাদের জাগতিক ও দৈনন্দিন চাওয়া পাওয়ার এবং লোভ- লালসার জন্য। যে বিষয়গুলোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে সেই বিষয়গুলোকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে নিত্যদিনের কর্মে এবং ভোগ্য এবাদতে লিপ্ত থাকার কারণে। এই ক্ষেত্রে এখনই সময় পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং সঠিক এবং যা ভাল, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা প্রশংসা পাবার যোগ্য মোটকথা যা ভাল সেই দিকে মনোযোগ দিয়ে এগিয়ে যাওয়াই সফলতার চাবি বা আলাদিনের চেরাগে পরিণত হবে।
ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি কিন্তু এই খুশি অস্থায়ী বা ক্ষণিকের। কিন্তু জীবনে সকল সময় এবং সর্বময় আনন্দিত থাকার উপায় আছে কি? যদি থাকে তাহলে তার অনুসন্ধান করুন। সকল সময় খুশি থাকার মূলমন্ত্রে দিক্ষা নিন এবং প্রতিনিয়ত চর্চায় জাগ্রত থাকুন। আনন্দ – হাসি -খুসি জীবন খানি উপভোগ্য করে মানবের কল্যানে মানবতার প্রয়োজনে বিলিয়ে দিন। তাহলেই শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, আশা- আকাঙ্খা ও হাসিতে অমলিন, আনন্দে পূর্নতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্দনে অটুট মনোভাব সর্বময় বিরাজমান থাকবে।
তোমরা দুনিয়ার লবন, তোমরা দুনিয়ার নূর হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং অন্যদের জীবনে আশার আলো হিসেবে লবনের স্বাদ আস্বাধনে এবং প্রজ্জ্বলিত আলো হিসেবে অন্ধকার ভেদ করে বেহেস্তি আভায় উদ্ভাসিত হবে। এই জীবনের পরিপূর্ণ তাৎপর্য হলো দুনিয়ার নূর হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং দুনিয়ার লবন হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য সর্বময় প্রস্তুত থাকা এমনকি উপযুক্ত লবন ও নূরে দৃশ্যমান থাকা।
ঈদানন্দ বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়েছে কিন্তু ঈদের সরমর্ম বা গভিরতার অভাব সর্বময় বিরাজ করছে। কিভাবে ঈদকে এবং আনন্দ পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায় এবং প্রত্যেকের জিবনে সমানভাবে বিলিয়ে দেয়া যায় সেই দৃষ্টি দেয়ার সময় এখন। সার্বজনীন ঈদানন্দ এবং সুখের নিশ্চয়তায় কাজ করুন। সর্বজনীন আনন্দ এবং আশা আকাঙ্খা পূরণে কাজ করুন। যেমন খোদার বাক্যের আলোকে অগ্রসর হউন। “তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি, সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য অপকারের জন্য নয়, বরং এই পরিকল্পনার মধ্যদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published.