বিপিসি কি সত্যিই লোকসানে? লাভের ৪৭ হাজার কোটি টাকা গেলো কোথায়?

প্রশান্তি ডেক্স॥ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আর্ন্তজাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি দেশেও বাড়ানো হয়েছে সব ধরণের জ্বালানি তেলের দাম। বাংলাদেশের বাজারে জ্বালানি তেলের আমদানি কারক ও বাজারজাত করণের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি।

বলা হচ্ছে বিপিসির লোক ঠেকাতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কারণ আর্ন্তজাতিক বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান গুনছিল।

এই ঘটনা জানতে হলে আপনার জানতে হবে বিপিসি কিভাবে কাজ করে এবং তাদের সক্ষমতা কি রকম।

লোকসান ভর্তুকি ফেইজঃ

জ্বালানি তেলের আমদানি মূল্যের সাথে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রয় মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ না থাকার কারণে বিপিসিকে ১৯৯৯-২০০০ হতে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হতে হয় যার পরিমাণ মোট প্রায় ৫৩,০০৫.১৬ কোটি টাকা।

তারপর জ্বালানি খাতে ভর্তুকি হিসেবে মোট ৪৪,৮৭৭.৪৭ কোটি টাকা বিপিসিকে প্রদান করে। সুতরাং ঐ সময়ে আরও প্রায় ৫৩,০০৫.১৬ – ৪৪,৮৭৭.৪৭ =৮,১২৭.৬৯ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল যা পরবর্তীতে বিপিসি’র মুনাফার সাথে সমন্বয় হয়েছে।

মুনাফা ফেইজঃ

২০১৩-১৪ থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছর পর্যন্ত বিপিসি লাভে ছিল। মুনাফা মোট প্রায় ৪২,৯৯২.৫১ কোটি টাকা।

ঐ সময়ের মধ্যে প্রকল্প/কর্মকান্ডের ব্যয়, সরকারকে লভ্যাংশ ও উদ্ধৃত্ত তহবিল হিসেবে প্রদান, এনবিআর এর বকেয়া পরিশোধ, মুলধনী বিনিয়োগ/ব্যয় ইত্যাদি খাতে মোট ১৯,৭৬৮.৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়। অবশিষ্ট থাকে প্রায় ২৩,২২৩.৬৪ কোটি টাকা।

মাসের জ্বালানি কেনার চলতি মূলধনঃ

ইতিপূর্বে দীর্ঘদিন লোকসানে থাকায় বিপিসি’র চলতি মুলধন নেগেটিভ ছিল। বিপিসি লাভে আসার পর থেকে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ২ মাসের জ্বালানি তেলের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ চলতি মুলধন হিসেবে সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় যার পরিমাণ ২০,০০০ কোটি টাকা।

বিপিসি নিজস্ব অর্থায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্পঃ

দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিপিসি ইআরএল ইউনিট-২, এসপিএম, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপ লাইন, জেট এ-১ পাইপ লাইন, ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ পাইপ লাইনসহ মোট ৯টি প্রকল্প প্রায় ৩৪,২৬১.৫৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে যা বাস্তবায়নাধীন।

সরকার ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি (প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ২০,০০০ (বিশ হাজার) কোটি টাকা) নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত প্রদান করে। প্রকল্পটির সুষ্টু বাস্তবায়নের জন্য বিপিসি’র মুনাফার একটি অংশ প্রকল্পের নামে এফডিআর করা হয়।

বিপিসি কিভাবে তার ব্যয় নির্বাহ করছে চলতি বছরে?

বিপিসি জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পূর্ব পর্যন্ত জ্বালানি তেল বিক্রয় ও অন্যান্য খাতে মাসিক গড় জমা প্রায় ৫,৫০০.০০ কোটি টাকা ছিল।

অপরদিকে জুন ২০২২ মাসে বিপিসি’র পেমেন্ট ছিল ৭,১৭১.৩৩ কোটি টাকা, জুলাই ২০২২ মাসে পেমেন্ট ছিল ১০,৩১২.৭৬ কোটি টাকা এবং আগস্ট ২০২২ পেমেন্ট প্রক্ষেপণ ৯,৩৯৭.০০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেব্রুয়ারী ২০২২ হতে বিপিসি এফডিআরসমূহ নগদায়ন করে জ্বালানি তেলের ব্যয় নির্বাহ করতে থাকে।

সর্বশেষ আগস্ট ২০২২ মাসের পেমেন্ট নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবশিষ্ট ৪,৭০০ কোটি টাকা এফডিআর নগদায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ দেশে জ্বালানি তেলের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে পেমেন্টসমূহ অবিঘ্নিত রাখার জন্য প্রকল্পের নামে খোলা প্রায় সব এফডিআর ইতোমধ্যে নগদায়নের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মূল্য সমন্বয়ের কারণে বিপিসি’র আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বিপিসি পুনরায় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করবে।

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে লাভের অংশটা সবাই বুঝতে পারলেও ব্যয়ের অংশটুকু কেউই আমলে নেয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.