মিয়ানমারের গোলযোগ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে

প্রশান্তি ডেক্স॥ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রাখাইনে অভিযানের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলে একজন নিহত এবং ছয় জন আহত হয়েছেন। ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে কয়েক দফা তলব করে এ নিয়ে সতর্ক করা হলেও অস্থিরতা কমছে না সীমান্তে। গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের দূতাবাস প্রধানদের অবহিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই আলোচনায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আসিয়ান। এ কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং সামগ্রিকভাবে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সমস্যার বিষয়টি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বড় আকারে তুলে ধরতে পারে আসিয়ানের কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র।

গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চলমান সহিংতার বিষয়ে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. খোরশেদ আলম। বৈঠকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইন দূতাবাসের প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘সীমান্তে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি এবং এ বিষয়ে করণীয় কী, সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছি।’

এ অঞ্চলের দেশ হচ্ছে মিয়ানমার এবং সেখানে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বেশি হলে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে। সেই বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে বলে তিনি জানান।

খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ এবং কোনও ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে না দেশটি।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান দেশটির পার্লামেন্টকে জানান, ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান নেতারা ৫ দফা প্রস্তাব তৈরির পর মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিং আং হ্লাইং সেটি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সেটির তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় সিঙ্গাপুর এবং আসিয়ান চরম হতাশ। মিয়ানমারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা শুধু দেশটির জন্য নয়, বরং গোটা অঞ্চলের স্বার্থের জন্য প্রয়োজন।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, আসিয়ান দেশগুলোর প্রতিনিধিরা মিয়ানমার নিয়ে বৈঠকে তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

সূত্র আরও জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওসের সীমান্ত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ও স্বার্থ রয়েছে দেশটিতে। ফলে যেকোনও অভ্যন্তরীণ গোলযোগ গোটা পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তার মাঝে ফেলে দিতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো.শহীদুল হক বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে সামরিক ক্যু হয়েছিল, সেটি সফল হয়নি এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা এখন অনুভব করছে যে পুরো দেশটি এখন তাদের দখলে নেই।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পেছনে একটি অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে বলে আমার মনে হয়। এ অঞ্চলটি বিভিন্ন কারণে নাজুক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাবধান থাকতে হবে।’

সরকার এ বিষয়ে পূর্ণ সজাগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য ঘটনা ঘটার আগে আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। তবে একইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে যে আমরা যেন উসকানি না দেই।’

সমস্যা সমাধানের জন্য ভারসাম্যমূলক অবস্থান তৈরি করা দরকার জানিয়ে শহীদুল হক আরও বলেন, ‘এ অঞ্চলে আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, তাদের চিন্তাভাবনা এবং আমাদের চিন্তাভাবনা এক হবে—বিষয়টি সেরকম নয়। কিন্তু সবার মাঝে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কারণ, এখানে যদি একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন গোটা অঞ্চলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.