সমতা আর ন্যায়পরায়নতা

সমতা এবং ন্যায়পরায়নতা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে কাজ করে; তবে কোথায় যেন ফারাক অনুভত হচ্ছে এমনকি খোজ করে বেড় করার সময় এসেছে। সমতা আর ন্যায়পরায়নতা সৃষ্টিকর্তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের একটি ইতিবাচক দিক। আর এই দিকের জন্যই তিনি পৃথিবী এবং এর মধ্যেকার সৃষ্ট সকল কিছুকে এখনো অব্দি দৃশ্যমান রেখেছেন। তবে সমতা বা সবাই সমান এই শব্দটি এখনও সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। কোথায় যেন একটি বড় বাধা অনুভূত হচ্ছে কিন্ত ঐ বাধাটি সুচের ছিদ্র দিয়েও প্রবেশ করে বিশাল ক্ষতের সৃষ্টি করে থাকে। সৃষ্টির শুরুতে সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে গুরুত্বারূপ করেছেন। একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে এমনকি এক দেহের অংশ হিসেবে প্রকাশ্য ব্যবস্থা করেছেন। একই দেহের অংগগুলোর মধ্যে সব অঙ্গেরই সমান মূল্য; কোনটার কমবেশী নেই। তাই তাঁর দৃষ্টিতে সবাই সমান। আর ঐ সৃষ্টির মধ্যে সাম্য বা সমতা বিধানে তিনি ন্যায়পরায়নতার কথা বার বার বলেছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সৃষ্টির সেরাজীব আশরাফুল মাখলুকাত স্বীকৃতি দিয়ে যাবতীয় কার্য সম্পাদন করেছেন। এখন এই সমতা এবং ন্যায়পরায়নতার বিধান অক্ষুন্ন রাখা অথবা দৃশ্যমান করে বিরাজমান রাখা আমাদেরই দায়িত্ব। আমরা কি ঐ মহান দায়িত্বটুকু সচেতনতার সহিত সুচারুরূপে পরিপালন করে যাচ্ছি নাকি নিজেদের প্রয়োজনে বিভোর থেকে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছি তাঁর জলন্ত প্রমান বর্তমান বিশ্বের স্বার্থপর লোভাতুর গোত্র, শ্রেণী বৈষম্যের রূঢ় বাস্তব রূপ।
বর্তমানে বৈশ্বিক সম্মেলনে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় বিভিন্নভাবে বলেছেন, লিঙ্গ বৈষম্যে সমতার কথা, বাস্তুচুত্যদের অধিকার ফিরে পাওয়ার কথা, শিশুদের অধিকার সুরক্ষার কথা, গৃহহীনদের গৃহে সমতার কথা, সামাজিক অবক্ষয়ের কথা, দেশ রক্ষার কথাসহ অজস্র বিষয়ে আলোচনায় বের হলো সমতা এবং ন্যায় পরায়নতার কথাগুলো। যদি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং সরকার এর মধ্যে সমতা ও ন্যায়পরায়নতা একসঙ্গে কাজ করতো তাহলে আর ঐ বেষম্যগুলো এতো প্রকট আকার ধারণ করে এক একটি আগ্নেয়গীরি হতে পারতো না। তবে আশার কথা হলো সৃষ্টিকর্তার পাকরূহ আমাদের মাঝে এখনও কাজ করেন এবং তারই প্রমান হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য নের্তৃবৃন্দের মাধ্যমে ঐসকল হারানো শান্তির অমিয় বানীগুলো পুনরুচ্চারিত হওয়া। এখনো আশায় বুক বেধে সামনে এগুলোর অনেক পথ খোলা রয়েছে যদিনা ঐ বাক্য বা শব্দগুলোর ব্যবহার পরিপূর্ণরূপে আমরা করে যাই।
দেশে দেশে যে সকল অসমতা রয়েছে সেইগুলো দূরীকরণে প্রাধান্য দিতে হবে সমতা এবং ন্যায়পরায়নতায়। জাতিতে জাতিতে যেসকল বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে সেইখানে বৈষম্য দূরীকরণে প্রাধান্য দিতে হবে সমতা এবং ন্যায়পরায়নতায়। লিঙ্গ বৈষম্যে যে সকল অসামঞ্জস্য দৃশ্যমান রয়েছে তার অবসানকল্পেও ঐ সমতা এবং ন্যায়পরায়নতায় গুরুত্বারূপ করে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন কার্যকর রাখতে হবে। ভুমিহীন এবং ঘরহীন কথাগুলো মানুষ এবং মানুষের মধ্যে যে বৈষম্য দৃশ্যমান রেখেছে সেইখানেও ঐ সমতা এবং ন্যায়পরায়নতা দৃশ্যমান কার্যকর করে অগ্রসর হতে হবে। দেশ থেবে বিতারিতদের দেশে ফিরে যেতে সমতা ও ন্যায়পরায়নতা গুরুত্বারুপ করে অগ্রাধীকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সামাজি অবক্ষয়ের মূলেও রয়েছে ঐ সমতা এবং ন্যায়পরায়নতার অভাব; তাই এইসকল ক্ষেত্রেও সমতা ও ন্যায়পরায়নতার ব্যবহার আবশ্যক।
ব্যবসা ও বাণিজ্যে সমতা ও ন্যায়পরায়নতা আজ অনুপস্থিত; তাই এই দুইকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা দিয়ে অগ্রসর হওয়া জরুরী। বৈশ্বিক এই রণক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায়পরায়নতার ব্যবহার শুরু করা গেলে এবং স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকলেই কার্যকরভাবে দৃশ্যমান করে বিরাজমান রাখলে শান্তি ও স্থিতিশীল, নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা আর বেশী দূরে নই। বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা একত্রিত হয়েছেন; এখানে সাম্য ও ভাতৃত্বের বন্ধনের সুতিকাঘার সৃষ্টি হউক; মনের গহীন থেকে ক্রোধ, ঘৃণা, ক্ষোভ বিতারিত হউক এই কামনাই করি। তবে এই সময়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে থেকে ক্ষোভ ও ক্রোধ দুরীভূত করণের কাজটুকু সুসম্পন্ন হউক। এইক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায়পরায়নতাই মুখ্য ভুমিকা রাখতে পারে এবং রাখবে। পৃথিবীর উত্তপ্ত অবস্থায় পানি ডেলে শান্ত করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে সমতা আর ন্যায়পরায়নতা। তাই এই দুইকে এখন গুরুত্বারূপ করা প্রয়োজন। মিয়ানমার এর রোহিঙ্গারা, আফগানদের সাধারণ মানুষেরা, ইউক্রেইন এর সাধারণ জনগণ, রাশিয়ার সাধারণ জনগণ যে যন্ত্রণায় ছটফটাচ্ছে তার রেশ কিন্তু বাকী পৃথিবীর সকল দেশের সকল মানুষের মনেই উকি দিচ্ছে এবং সবাই কোননা কোনভাবে ঐ যন্ত্রণার নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তবে কেউই এর বাইরে নয়। যদি সমতা এবং ন্যায়পরায়নতা সমগ্র পৃথিবীতে কার্যকর থাকত তাহলে হয়ত আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি বা উদ্বভ হতো না।
আজকের এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বলতে পারি যে, প্রতিটি দেশেই আজ সমতা ও ন্যায়পরায়নতার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই সময় এসেছে ঐ অভাগুলোকে খুজে বের করে সমাধানকল্পে সমতা ও ন্যায়পরায়নতার আলোকে কাজ করা। হাতের পাঁচটি আঙ্গুল এর কাজ সমান, একটি ছাড়া আরেকটি অচল তাই এই আঙ্গুলগুলোর সম্প্রীতি ও মেলবন্ধন দেখে এমনকি এদের সম্মিলিত ঐক্যমতের কাজদেখে নিজেদেরকে সমতা ও ন্যায়পরায়নতায় কার্যরত রাখুন। সবাই প্রধানমন্ত্রী হবেন অথবা সবাই অফিসার হবেন এমনকি সবাই শুধু সফল হবেন এমন মনোভাব পোষন করা থেকে বিরত থাকুন। যার যার অবস্থান থেকে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কার্য সম্পাদন করুন। যেমন কৃষক তাঁর ফলস দিয়ে সেবা করবে, মুচি তাঁর কাজ দিয়ে সেবা করবে, শ্রমিক তাঁর কাজ দিয়ে সেবা করবে, ডাক্তার তাঁর চিকিৎসা দিয়ে সেবা করবে, ইঞ্জিনিয়ার তাঁর জ্ঞান ব্যবহার করে সেবা করবে, টাকার মালিক টাকা দিয়ে সেবা করবে, ব্যবসার মালিক ব্যবসা দিয়ে সেবা করবে, বাড়ির মালিক বাড়ি দিয়ে সেবা করবে মোট কথা যার যা আছে তাই দিয়ে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করবে এবং এর মাধ্যমেই সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে পৃথিবী হবে শান্তিময় ও বৈশম্যবিহীন নির্মল এক আনন্দঘণ সহবস্থানের মিলনমেলা। সবাই আমরা সমান এবং সবাই আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। আমাদের সবারই আগমন ও প্রস্থান একই নিয়মে। আমাদের প্রত্যেকের গন্তব্যও ঠিক একই জায়গায় এবং আমাদের প্রত্যেকের মালিকও ঠিক একজনই তাই আর নয় বিভেদ এবং বিসম্বাদ, আর নয় হিংসা-বিদ্ধেষ, আর নয় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, আর নয় ধন-সম্পদের পাহাড় গড়া, আর নয় ক্ষমতার মসনদ এবং ক্ষমতার বাহাদুরি; এখন শুধু জাত চিনার এবং ঐ একই জাতের (মানব জাতি) হিসেবে বহি:প্রকাশ ঘটানোর। সমতা এবং ন্যায়পরায়নতার যুগে পদাপর্ণের শুভলগ্নে সৃষ্টিকর্তার স্মরণাপন্ন হউন এবং স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ শুরু করুন। সফলতা শতভাগ নিশ্চিত।
পরিশেষে বলতে চাই নিজ দেশ এবং দেশের মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে পাশের দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজন মিটাতে ব্যস্ত হউন। এইক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার সেই অমিয় বানীর উচ্চারণে আজকের যবণীকাপাত টানতে চাই। যেহেতু সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই; তাই পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে দরকারী হুকুমটাই উল্লেখ করছি। “তোমরা তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত অন্তর, সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহকে (সৃষ্টিকর্তাকে) মহব্বত করো, তারপরের দরকারী হুকুম হলো তোমরা তোমাদের প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করো, এই দুটি হুকুমের উপরই সমস্ত নবী ও রাসুলদের কিতাব ভরসা করে আছে।” হ্যা সমতা ও ন্যায়পরায়নতা বাস্তবায়নে এই বানীগুলো একমাত্র টনিক হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ঔষধ হিসেবে একমাত্র কার্যকর। আসুন আমরা সকলেই ফিরে এসে আমাদের আসল ও সঠিক অবস্থান গ্রহন করি সমতা ও ন্যায়পরায়নতাকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.